নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী অভিযোগ করেছেন, দেশে আবার গুম ও অপহরণের মতো ভয়াবহ অপরাধ ‘শুরু হয়েছে’। গতকাল দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে র্যাব বাহিনী ও সাত র্যাব-পুলিশ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং দেশি-বিদেশি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপে পিছু হটায় গুম-খুনের আতঙ্কে থাকা পরিবারগুলোয় কিছুটা হলেও স্বস্তি নেমে এসেছিল। কিন্তু ইদানীং আবারও পুরোনো পৈশাচিক চেহারায় ফিরে এসেছে, গুমের মতো ভয়াবহ অপরাধ শুরু করেছে সরকার।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘কয়েক দিন আগে খুলনা জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদককে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল এবং বরগুনা উপজেলা ছাত্রদলের নেতাকে কয়েক দিন গুম করে রাখার পর এখন থানায় দেয়া হয়েছে। এই সরকারের অমানবিক আচরণের আবারও পুনরাবৃত্তি ঘটছে।’
গুম-অপহরণের ঘটনার সঙ্গে র্যাবের পাশাপাশি পুলিশের বিভিন্ন বাহিনীকে সরকার জড়িত করছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আগে শুধু শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত বাহিনী রূপে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র্যাব)। তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে পৃথিবীর জঘন্যতম এই অপরাধ সংগঠনে। এরপর রাষ্ট্রীয় আরেকটি বাহিনী গোয়েন্দা পুলিশ ও পুলিশকেও গুম-অপহরণ-বন্দুকযুদ্ধে নামানো হয় গোটা দেশে। এখন সিআইডিকেও গুম-অপহরণে নামানো হয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘এহেন পৈশাচিকতায় তাদের সাজানো গল্প একই থাকেÑপ্রথমে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয় দিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া; অতঃপর কখনও অনন্তকালের জন্য অন্তর্ধান-নিখোঁজ, কখনও অস্ত্র উদ্ধারের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা, আবার কখনও রাস্তার ধারে অথবা ডোবা-নালা বা নদীতে লাশ পাওয়ার রোমহর্ষক নাৎসীয় বর্বরতা।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার পদত্যাগ না করলে বিএনপির ‘রাজপথের কর্মসূচি’ আবার শুরু হবে বলে হুশিয়ারি দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা। তিনি বলেন, ‘ক্ষণ গণনা চলছে নিশিরাতের সরকারের বিদায়ের। আওয়ামী দুঃশাসনের ভয়ংকর শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পেতে দেশবাসীর আসন্ন দুর্বার আন্দোলনের আশঙ্কায় সরকার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। আমরা সুস্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, সরকার এই মুহূর্তে পদত্যাগ না করলে মিটিং, মিছিল, সেøাগান ও প্রতিরোধে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। আমরা সরকারকে হুশিয়ার করে দিতে চাই, গুম, অপহরণ ও দুঃশাসন চালিয়ে যেভাবে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছেন, তার পরিণতি হবে ভয়ংকর।’
পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) ‘জার্মানি সফর’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রচণ্ড সমালোচনা ও চাপের মুখে গতকাল (মঙ্গলবার) দেখলাম পুলিশ সদর দপ্তর থেকে আবারও বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলা হয়েছেÑকাঁথা-বালিশ-চাদর কেনার ইস্যু নিয়ে পুলিশপ্রধানকে ঘিরে যা কিছু বলা হচ্ছে, সবই বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর। জার্মানি বিছানার চাদর উৎপাদন ও রপ্তানিকারক কোনো দেশ নয়, তারা ভারী শিল্পের দেশ। সংগত কারণে আইজিপির চাদর ও বালিশের কাভার কেনার জন্য জার্মানি গমনের কোনো অবকাশ নেই।’
রিজভী বলেন, ‘এখন জনমনে প্রশ্ন, তাহলে ৭ ফেব্রুয়ারি সুনিশ্চিত ভঙ্গিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কাঁথা-বালিশ ফ্যাক্টরি পরিদর্শনের যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছিল, তা কি ভুল ছিল? এটা কি এখন প্রত্যাহার করা হয়েছে? আইজিপির নাম কি ভুলে দেয়া হয়েছে? নাকি তাকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা ছিল। বড় প্রশ্নটি হচ্ছে, রাষ্ট্র ও সরকারের অভ্যন্তরে হচ্ছেটা কী? সরকারের নাটাই কার হাতে?’
সংবাদ সম্মেলন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবুল খায়ের ভুঁইয়া, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, আমিনুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।