নজরুল ইসলাম: স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন রাজধানীর গুলশান এলাকার জরাজীর্ণ চাইনিজ রেস্টুরেন্ট ‘অলিভ গার্ডেনের’ মালিক ও তার স্ত্রী। এসব সম্পদ ব্যবসায়িক আয় ও ব্যাংকঋণ থেকে অর্জন করেছেন বলে দাবি করলেও সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে তা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তারা ব্যবসার আয়-সংক্রান্ত কোনো তথ্য-প্রমাণ বা সম্পদ অর্জনের কোনো বৈধ উৎসও দেখাতে পারেননি। এছাড়া ব্যবসায়িক কাজে নেয়া ঋণকে সম্পদ অর্জনের উৎস হিসেবে দেখিয়ে তারা মিথ্যা তথ্যও দিয়েছেন।
এআইএম হাসানুল মুজিব গুলশান-২ এলাকার চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অলিভ গার্ডেনের মালিক। তার স্ত্রীর নাম শাহিন হাসান। তারা ৯ কোটি ৪১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত এসব অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, স্থাবর সম্পদের মধ্যে এআইএম হাসানুল মুজিবের নামে রাজধানীর বনানীর ২ নম্বর রোডে চার কাঠা জমি রয়েছে। যার মূল্য ৬৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩০০ টাকা। ভাটারার নুরের চালা এলাকায় সাড়ে চার শতক জমির মূল্য এক লাখ ছয় হাজার টাকা। উত্তরার বাইলজুড়ী মৌজাতে থাকা জমির মূল্য এক কোটি ৬০ লাখ ২৩ হাজার টাকা। উত্তরখানের বাওথার মৌজায় ২৬ শতাংশ জমির মূল্য ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। খিলক্ষেতের তলনাডুমরী মৌজায় ৬২ শতাংশ জমির মূল্য এক কোটি ৩৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। একই মৌজাতে ৩৯ দশমিক ৮২ শতাংশ জমির মূল্য ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা।
ময়মনসিংহের ভালুকার হবিবরবাড়ীর কাশরগড় মৌজায় ১৮ শতক জমি রয়েছে। যার মূল্য এক কোটি ২০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাজীর শিমলার মৌজায় ২৩ শতাংশ জমির মূল্য এক লাখ ৯৬ হাজার ২০০ টাকা। একই মৌজার অন্য দাগে ১৯ শতাংশ জমির মূল্য ৯ লাখ ২৬ হাজার ৫০০ টাকা। ময়মনসিংহের ত্রিশালের মাওনা মৌজায় ১০৪ শতাংশ জমির মূল্য ২১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গাজীপুরের কালিয়াকৈরের ফুলবাড়ীয়ার মোথাজুরী মৌজায় ৩৪ শতাংশ জমির মূল্য ১১ লাখ ২২ হাজার ৭০০ টাকা। স্ত্রী শাহিন হাসানের নামে থাকা ঢাকার বাড্ডার ভাটরা মৌজায় দুই কাঠা জমির মূল্য তিন লাখ ১৫ হাজার টাকা এবং একই মৌজার অন্য দাগে তিন কাঠা জমির মূল্য ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে গুলশান-২ এলাকায় চাইনিজ রেস্টুরেন্ট অলিভ গার্ডেন, মতিঝিলে ইয়োলো পেজেস প্রা. লি., বনানীতে এগ্রো ব্যালান্সড ফার্টিলাইজার ইন্ডাস্ট্রি, শিমলা ফিশারিজ, একটি গাড়ি, জুয়েলারি, ফার্নিচার ও ব্যাংকে নগদ টাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে নিজের ও স্ত্রী শাহিন হাসানের নামে তিনি পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ ২৭ হাজার ৭০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং তিন কোটি ৩৪ লাখ ৮৬ হাজার ৩০০ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য দেন। তদন্তকালে তার ও স্ত্রীর নামে পাঁচ কোটি ৯৫ লাখ ৬২ হাজার ৭০০ টাকার স্থাবর সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া গেছে। আর অস্থাবর সম্পদ পাওয়া গেছে তিন কোটি ৪৬ লাখ দুই হাজার ৩০০ টাকার। এছাড়া দুই কোটি ৯৮ লাখ টাকার শেয়ার ক্রয়ের অর্থের উৎসের সপক্ষেও কোনো প্রমাণাদি তিনি দিতে পারেননি।
এছাড়া দুদকের তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চার্জশিট দাখিলকারী সহকারী পরিচালক খলিলুর রহমান অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন, এআইএম হাসানুল মুজিব ব্যবসার মূলধন সংগ্রহের জন্য তিনটি ব্যাংক থেকে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পরিশোধ করেননি।
চার্জশিটের বিষয়ে জানতে চাইলে এআইএম হাসানুল মুজিব শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটি একপেশে অভিযোগ। আমি দোষী হলে শাস্তি পাব। আইনি মোকাবিলায় যাব। এটি এখন আদালতে বিচারাধীন। আমি আর কিছু বলতে চাই না।’ তার আগে ৯ কোটি ২১ লাখ ১৪ হাজার টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত সংগতিবিহীন অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক সজেকা ঢাকা-১ এ মামলাটি (নম্বর ১৬) দায়ের করা হয়। দুদক আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ও ২৭(১) ধারায় মামলাটি দায়ের করেন সহকারী পরিচালক খলিলুর রহমান।