নজরুল ইসলাম: এনভয় টেক্সটাইলসের মালিক ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম মুর্শেদীর গুলশানের বাড়ি নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। এটি গণপূর্তের পরিত্যক্ত বাড়ি বলে দাবি করে রাজউককে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। গত ৪ জুলাই চিঠিটি দেয়া হয়। একই বিষয়ে ২০১৫ ও ২০১৬ সালেও রাজউককে চিঠি দেয় গণপূর্ত অধিদপ্তর। কিন্তু রাজউক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
গণপূর্তের চিঠিতে বলা হয়, গুলশানের ১০৪ নম্বর রোডের ২৭ নম্বর বাড়িটি পরিত্যক্ত বাড়ি। এটি সরকারি বাড়ি। গণপূর্তের মালিকানাধীন বাড়ি। অন্য কেউ এটা কাগজপত্র করে নিতে পারে না। কিন্তু রাজউক দলিল-দস্তাবেজ করে সালাম মুর্শেদীকে দিয়ে দিল। অথচ এটির মালিকানা রাজউকের নয়। তাহলে রাজউক কীভাবে দিল? বাড়িটি কীভাবে রাজউক হস্তান্তর করেছে চিঠিতে রাজউকের কাছে তা জানতে চেয়েছে গণপূর্ত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আব্দুস সালাম মুর্শেদী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিষয়টি আমাকে জানায়নি। রাজউককে চিঠি দিয়েছে গণপূর্ত। রাজউক সেটি জানাবে। এটা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। জায়গাটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে। দুজনের নামে রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। এখানে আমি ২৫ বছর ধরে থাকছি। ১৯৯৩ সাল থেকে থাকছি। জমি কিনতে হলে সেটার মালিকানা রাজউক যাচাই করে। ফাইল ১০ বার ঘুরেছে। জমিটা বড়। দুই ভাগ হয়েছে। দুজনের নামে গেছে। মা ছেলের নামে দিয়েছে। ছেলে আবার আমাদের দিয়েছে। আমরা আবার ভাগ করেছি। পরিকল্পনা করেছি। বাড়ি বানিয়েছি। খাজনা দিচ্ছি। এটা অনেক আগেই পরিত্যক্ত অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছে। কিন্তু ওরা (রাজউক) তালিকায় তোলেনি। সেই কারণে হাইকোর্টের সবশেষ একটি অর্ডার আছে। আমাদের কাছে সব কাগজ আছে। না হলে কি প্ল্যান দেয় আমাদের? থাকতে পারি? ২৫ বছর ধরে থাকছি।’
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞার মোবাইল ফোন নম্বরে কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
২০১৮ সালে খুলনা-৪ আসনের (রূপসা-দিঘলিয়া-তেরখাদা) উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শিল্পপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তার বাড়ি খুলনার রূপসা উপজেলায়। নিজের জেলায় তরুণ বয়সেই পরিচিত পান ক্রীড়াবিদ হিসেবে। সত্তরের দশকে ঢাকায় আসার পর তিনি হয়ে ওঠেন ঢাকার ফুটবলের তারকা খেলোয়াড়দের একজন। মোহামেডানের হয়ে ১৯৮২ সালে জাতীয় ফুটবল লীগে ২৭ গোল করেন সালাম মুর্শেদী, যা এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড। ক্রীড়া ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সরকার ২০০৩ সালে তাকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত করে।
বিজেএমসিতে খেলার সময় প্লাটিনাম জুট মিলের সুপারভাইজার হিসেবে চাকরিতে থাকা অবস্থায় সালাম মুর্শেদীর মনে শিল্পকারখানা গড়ার পরিকল্পনা দানা বাঁধতে থাকে। পরে কুতুব উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে মিলে ১৯৮৪ সালে গড়ে তোলেন এনভয় গ্রুপ।
তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সালাম মুর্শেদী বর্তমানে বাংলাদেশে এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ইএবি) সভাপতি। প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদেও আছেন তিনি।
ক্যারিয়ারেও ব্যবসার সঙ্গে এখন রাজনীতি যোগ হলেও সালাম মুর্শেদী ক্রীড়াঙ্গন ছাড়েননি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে (বাফুফে) তিনি আছেন জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হিসেবে।