নিজস্ব প্রতিবেদক: গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত ‘রাজীব গান্ধী’ জীবিত অবস্থায় ধরা পড়েছেন। শুক্রবার রাতে গ্রেফতার হওয়া এই নব্য জেএমবি নেতার কাছ থেকে গুলশান হামলার ভেতরকার তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন গোয়েন্দারা। রাজীব গান্ধীকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করার পর আট দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গুলশান হামলার পরিকল্পনাকারী হিসেবে পুলিশের চিহ্নিত তামিম চৌধুরী, জাহিদুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম মারজান, তানভীর কাদেরী বিভিন্ন স্থানে পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছেন। পুলিশের ভাষায়, উত্তরাঞ্চলে সব কটি জঙ্গি হামলায় নেতৃত্বদাতা এই ‘রাজীব গান্ধী’। তার আসল নাম জাহাঙ্গীর আলম। ‘রাজীব গান্ধী’ ছাড়াও সুভাস, শান্ত, টাইগার, আদিল, জাহিদ এ রকম নানা ছদ্মনাম নিয়ে চলতেন তিনি।
রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীরকে টাঙ্গাইল থেকে গ্রেফতার করে ঢাকায় আনার পর শনিবার ডিএমপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিম চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাহাঙ্গীর সংগঠনটির উত্তরবঙ্গের সামরিক শাখার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গুলশান হামলাসহ অন্যান্য হামলার ঘটনা তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
এদিকে গুলশান হামলার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বিকালে জাহাঙ্গীর ওরফে ‘রাজীব গান্ধী’কে ঢাকার আদালতে তুলে ১০ দিনের রিমান্ডে চান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির। শুনানি শেষে হাকিম মাহমুদুল হাসান আট দিন হেফাজতের নির্দেশ দেন। আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী আদালতে দাঁড়াননি।
গতকালের সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, জাহাঙ্গীরের বাড়ি গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে। তার বাবার নাম ওসমান গনি মণ্ডল ও মা রাহেলা মণ্ডল। জাহাঙ্গীর ২০০৪ সালে পুরোনো জেএমবির শুরা সদস্য ডা. নজরুল ইসলামের সহযোগী ছিলেন। ১৭ আগস্ট সারা দেশে বোমা হামলার সময় বগুড়ার সংগঠনটির দায়িত্বে ছিলেন আবদুল আউয়াল। জাহাঙ্গীর তার পাচক হিসেবে কাজ করতেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রংপুরে জাপানের নাগরিক কুনিও হোশি হত্যা, টাঙ্গাইলের দর্জি নিখিল হত্যা, পাবনার পুরোহিত নিত?্যরঞ্জন পাণ্ডে হত্যা, রংপুরের মাজারের খাদেম রহমত আলী হত্যা, কুষ্টিয়ায় হোমিও চিকিৎসক সানাউল হত্যা, পঞ্চগড়ে পুরোহিত যজ্ঞেশ্বর হত্যা, দিনাজপুরের হোমিও চিকিৎসক ধীরেন্দ্রনাথ হত্যা, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেজাউল করিম সিদ্দিকীর হত্যাসহ ২২টি হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী।
ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) আগে জানায়, গুলশান হামলায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, এমন ১৭ ব্যক্তিকে এখন পর্যন্ত তারা চিহ্নিত করেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জন গত ছয় মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন অভিযানে নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ ৫ জানুয়ারি রাতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান। একজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। অন্য তিনজন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে ‘রাজীব গান্ধী’, বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট ও সাগর। রাজীব গান্ধী ও বাশারুজ্জামানকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী ছিল পুলিশ।