গেইন ট্যাক্স মওকুফ পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে
তুলে ধরা হলো:

গেইন ট্যাক্স মওকুফ করলে পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই ভালো হবে, কারণ গেইন ট্যাক্স মওকুফ না করলে সরকার পাবে ১১৫ কোটি টাকার মতো। আর যদি এই ট্যাক্স মওকুফ করে দেওয়া হয় তাহলে পুঁজিবাজার পাবে ৭৫০ কোটি টাকার মতো। এটি একটি অপ্রত্যাশিত ট্যাক্স, যা এই বছরের বাজেট প্রস্তুতিতে ছিল না। তাছাড়া দেশের পুঁজিবাজারের যে অবস্থা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে সরকার কর মওকুফের বিষয়টি বিবেচনা করতেই পারে। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন আইনজীবী ও পুঁজিবাজার বিশ্লেষক হাসান মাহমুদ বিপ্লব এবং দি ডেইলি স্টারের বিজনেজ এডিটর সাজ্জাদুর রহমান। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হাসিব হাসান।
হাসান মাহমুদ বিপ্লব বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারল্য সংকট। এবারের বাজেটে যদি গেইন ট্যাক্স মওকুফ করে দেওয়া হয় তাহলে সেই টাকা যখন পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হবে তখন বাজার নিজস্ব গতি পেয়ে যাবে। তখন আমাদের আর ব্যাংক বা অন্য কারও কাছে যেতে হবে না। এতে বাজারে কিছুটা ফ্রেশ ফান্ডিং হবে। ফ্রেশ ফান্ডিংয়ে যদি বাজার স্বাভাবিক গতি পায় তাহলে সাইট লাইনে যেসব বিনিয়োগকারীরা ছিল তারাও চলে আসবে। তাছাড়া বর্তমান বাজারের যে অবস্থা তাতে আমার মনে হয়, বাজেটের আগে আর ঠিক হবে না। নির্বাচনের পরে যে কোনো সরকার আসার পর বাজারে আবার ধারাবাহিকভাবে একটি প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, দেশে আমদানি যে হারে বেড়েছে সে তুলনায় রফতানি বাড়েনি। রেমিট্যান্স ও আমিদানি দিয়ে আমরা এ বছর খুব বেশি ওপরে থাকব, তা বলা যাচ্ছে না। যেখানে প্রতি বছর আমরা চার-পাঁচ বিলিয়ন ডলার ওপরে থাকতাম সেখানে এবার হয়তো দেখা যাবে অর্ধ বিলিয়ন বা এক বিলিয়ন ডলার ওপরে থাকতে পারি। তাই সরকারের বৈদেশিক আয় বাড়ানোর দিকে আর একটু নজর দিতে হবে। কারণ ব্যালেন্স অব পেমেন্ট যদি নেতিবাচক হয়ে যায়, তাহলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং অর্থনীতিতে অস্থিরতার সৃষ্টি হবে।
সাজ্জাদুর রহমান বলেন, গেইন ট্যাক্স মওকুফ করলে পুঁজিবাজারের জন্য অবশ্যই ভালো হবে বলে মনে করি। তাছাড়া গেইন ট্যাক্স মওকুফ না করলে সরকার পাবে ১১৫ কোটি টাকার মতো এবং যদি ট্যাক্স মওকুফ করে দেওয়া হয় তাহলে পুঁজিবাজার পাবে ৭৫০ কোটি টাকার মতো। কাজেই আমার মনে হয় এটি সরকার করতেই পারে, কারণ এটি একটি অপ্রত্যাশিত ট্যাক্স, যা এই বছরের বাজেট প্রস্তুতিতে ছিল না। তাছাড়া দেশের পুঁজিবাজারের যে অবস্থা এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীরা যে হারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাতে আমার মনে হয় সরকার বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে। তিনি বলেন, দেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা খুবই খারাপ। আশপাশের কোনো দেশেই আমাদের মতো এমন অস্থিতিশীল বাজার নেই। হঠাৎ করেই তারল্য সংকটের সৃষ্টি হলো। এটি একটি বড় সমস্যা যা ছড়িয়ে পড়েছে মানি মার্কেট, ক্যাপিটাল মার্কেটসহ সব জায়গায়। পুঁজিবাজারে অনেক দল আছে এবং তারা সব সময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। বাজারে লেনদেন খুবই কম হচ্ছে, কিন্তু তারপরও সূচক ৬০-৭০ পয়েন্টের মতো প্রতিনিয়ত কমে যাচ্ছে। কাজেই বিষয়টি সরকারের গুরুত্বসহ দেখা উচিত। এদিকে আমাদের অর্থমন্ত্রী যেসব কথা বলেন তা বাজার সহায়ক নয়। তিনি পুঁজিবাজার নিয়ে বাজেটের পরে বসতে চেয়েছেন। অথচ বাজারের এখন ভয়াবহ অবস্থা চলছে। তাই আমি মনে করি বাজার নিয়ে তার এ ধরনের ঘোষণা না দেওয়াই ভালো। এতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এক ধরনের খারাপ ধারণার সৃষ্টি হয়। তারা ভাবতে শুরু করে হয়তো বাজেট পর্যন্ত বাজার এভাবেই চলবে। তিনি আরও বলেন, দেশের পুঁজিবাজারে ১০ শতাংশের মতো ট্যাক্স সুবিধা দেওয়ার পরেও ভালো বড় কোম্পানিগুলো কেন আসছে না? এই বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা উচিত এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। এসইসির একটি নিয়ম আছে, যে কোনো কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫০ কোটি টাকা হলে তাকে বাজারে আসতে হবে। অথচ এসইসি কি কখনও অনুসন্ধান করেছে, দেশে কয়টি কোম্পানির ৫০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন আছে? সব দিক বিবেচনায় আমি মনে করি, পুঁজিবাজারে যদি ভালো কোম্পানিগুলো না আসে তাহলে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে চীন এলেও বাজারের কোনো লাভ হবে না।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০