ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধির পর থেকে সবখানে দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতি বিরাজমান। বাস ভাড়া থেকে শুরু করে আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য চাল, ডাল, পোশাক-আশাক যেকোনো প্রয়োজন মেটাতে হচ্ছে চড়া দামে। এই চড়া দামের হাওয়া লেগেছে গবাদি পশুর খাদ্যেও। গ্রামের মানুষ না পারছে নিজেদের ভরণপোষণ ঠিকঠাক মেটাতে, না পারছে গোয়াল ঘরে রাখা দুটো-একটা গরু-ছাগলের খাবারের ব্যবস্থা করতে। কেননা বাজারে চালের কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত। গরুর ভুষি, ছোলা, চালের খুঁদও প্রায় সমান দামে অর্থাৎ ৫২-৫৫ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। দুটো একটা গরু লালনপালন করে একটু লাভের আশার মুখ দেখা এ যেন এখন আশায় গুড়েবালি। মাত্রাতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির কারণে আশানুরূপ খাদ্য জোগান দেয়া সম্ভব হচ্ছে না বলে দুধ উৎপাদনও ব্যাহত হচ্ছে। অনেক খামারি গরু বিক্রি করে খামার ছোট করে ফেলছেন। ভুসি, খৈলের বিকল্প হিসেবে কচুরিপানা, ঘাস খেতে দিচ্ছেন। বর্তমানে বাজারে এক বস্তা ভালো মানের গমের ভুসি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকায়। কয়েক মাস আগে ছিল ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা। একইভাবে মাসকলাইয়ের ভুসির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৪৫০ টাকা। দুই থেকে তিন মাস আগেও এর দাম ছিল ১ হাজার ১০০ থেকে এক ১ হাজার ২০০ টাকা। এক বস্তা খৈল বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা, এটি কয়েক মাস আগে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হতো। দাম বেড়েছে শুকনো খড়েরও। বর্তমানে এক মণ খড় বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। উন্নত জাতের ঘাস বাজারে এক আঁটি পাওয়া যেত ১০ টাকায়; এখন একই পরিমাণ আঁটি মেলে ১৫-২০ টাকায় কখনও পরিমাণে কম। তবে ব্যবসায়ীদের দাবি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে গোখাদ্েযর কাঁচামাল সরবরাহ কমে যাওয়ার দরুণ বেড়েছে দাম। তবে এটা সত্যি দাম বেড়েছে ঠিক কিন্তু এতটাও নয়, অসৎ ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃতভাবে অতিরিক্ত দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন; এ কথা অস্বীকার করার কোনো অবকাশ নেই। এভাবে গোখাদ্েযর দাম বাড়তে থাকলে খামার থেকে মুনাফা অর্জন করার মতো অবস্থা থাকবে না। বর্তমানে তেল ও চাল মজুত কারবারিদের গুদামে অভিযান চালানো হচ্ছে। অবৈধভাবে মজুত করার ফলে দাম যে বৃদ্ধি পেয়েছে, তা অন্তত নিশ্চিত। একইভাবে গোখাদ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্গে গোখাদ্যেরও অবৈধভাবে মজুতদারদের গুদামে অভিযান চালানো অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামনে কোরবানি ঈদ, খাদ্যের দাম বাড়ার ফলে প্রভাব পড়বে কোরবানির বাজারেরও। অনেক পরিবার আছে যারা বছরে শুধু এই একবারই গরুর মাংস খেতে পান, এমন হলে সেই পরিবারগুলো আর মাংস খেতে পারবে না। বর্তমান বাজারে এক কেজি গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭২০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গোখাদ্যের দাম বাড়ার ফলে ইতোমধ্যে খোলাবাজারে মাংসে প্রভাব লক্ষণীয়। তবে চড়া দামের কারণে বিদেশি গোখাদ্যের বিকল্প হিসেবে উন্নত জাতের ঘাস খাওয়ানো যেতে পারে। পতিত জমি, রাস্তার পাশে, পুকুরের পাড় দিয়ে ঘাস চাষ করলে গবাদি পশুকে খাওয়ানোর পাশাপাশি বিক্রি করে লাভবান হওয়া যাবে। উন্নত জাতের ঘাসে গরুর বৃদ্ধি এবং বেশি দুধ পাওয়া যাচ্ছে। কাঁচা ঘাস খেলে গরু দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। অল্প দিনে গরু সুঠাম দেহের অধিকারী হয়। তবে গোখাদ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নজরদারি বাড়াতে হবে।
মাহমুদুল হাসান মিল্টন শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়