প্রতিনিধি, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জে দিন দিন ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। জেলার পাঁচটি উপজেলার কৃষকরা এ পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। বর্তমানে সদর উপজেলার রঘুনাথপুর, পারকুশলী, নকড়িরচর, দিঘারকুল, ঘোষগাতী, কাজুলিয়া-বাজুনিয়া, নারিকেলবাড়ী, শেওড়াবাড়ীসহ বিভিন্ন স্থানে ভাসমান বেডে চাষাবাদ করছেন কৃষকরা। এ ছাড়া টুঙ্গিপাড়া উপজেলার গোপালপুর, বন্যাবাড়ী, রাখিলাবাড়ী, মিত্রডাঙ্গা, জোয়ারিয়া, পাথরঘাটা, চাপরাইল, রুপাহাটি, পাটগাতী ও বর্নি এবং কোটালিপাড়া উপজেলার ছত্তরকান্দা, কান্দি, লখণ্ডা ও কলাবাড়ীতে চাষাবাদ হচ্ছে। পাশাপাশি মুকসুদপুর উপজেলার তুতবাড়ী, কালীন্দির, কালীগঞ্জ ও কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া, বিদ্যাধর, তালতলা, নিজামকান্দিসহ বিভিন্ন বিলাঞ্চলে প্রায় তিন হাজার কৃষক ভাসমান বেডে চাষাবাদ করছেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে কৃষি বিভাগের ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ সম্প্রসারণ প্রকল্পের অধীন ভাসমান বেডে চাষাবাদ শুরু হয়। প্রথমে গোপালপুর ইউনিয়নের কয়েকজন কৃষক মাত্র ২০ হেক্টর জমিতে এ চাষাবাদ শুরু করেন। বর্তমানে উপজেলার ২০০ হেক্টর জমিতে প্রায় এক হাজার কৃষক ভাসমান ধাপের চাষাবাদ করছেন। চলতি বছর প্রায় এক হাজার ৪০০ ভাসমান বেড তৈরি হয়েছে।
আগে কৃষকেরা ভাসমান বেড ইচ্ছামতো লম্বা-চওড়া করতেন। আর বেডের ওপর উঠেই পরিচর্যা করতেন। ফলে বেডগুলো অল্প সময়ে নষ্ট হতো। পরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে আধুনিক উপায়ে চাষাবাদ শুরু করেন কৃষকরা। নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যরে বেড নির্মাণ করে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখাসহ পরিচর্যা ও ফসল তোলার জন্য ডিঙ্গি নৌকা ব্যবহার করছেন তারা। এতে সহজে ফসল নষ্ট হচ্ছে না এবং দীর্ঘ সময় ভাসমান বেডে চাষাবাদ করতে পারছেন কৃষকরা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন পানিতে চাষাবাদ শেষে ভাসমান ধাপের কম্পোস্ট বা জৈব সার উঁচু জায়গায় তুলে শীতকালীন সবজি চাষে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে শীতকালীন সবজিতে রাসায়নিক সার ও বালাইনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন হচ্ছে না। এতে শতভাগ নিরাপদ সবজি উৎপাদিত হচ্ছে।
বন্যাবাড়ী গ্রামের কৃষক শ্রীবাস বিশ্বাস, বাসুদেব মণ্ডল, মিত্রডাঙ্গা গ্রামের কৃষক নৃপেণ বিশ্বাস ও জোয়ারিয়া গ্রামের নরোত্তম বালা বলেন, উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বেশিরভাগ জমি নিচু। এ কারণে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধ হয়। এজন্য স্বাভাবিক চাষাবাদ সম্ভব হয় না। জমিতে পানি জমে থাকায় আমাদের হাতেও কোনো কাজ থাকে না। তাই কৃষি বিভাগের পরামর্শে আমরা কয়েকজন মিলে ভাসমান বেডে চাষাবাদ শুরু করি। পরবর্তীকালে স্বল্প খরচে আমরা বেশ লাভবান হই। তখন অন্য কৃষকরা ভাসমান ধাপের ওপর চাষাবাদ করতে আগ্রহী হন। আগে শুধু গোপালপুর ইউনিয়নে ধাপের ওপর চাষাবাদ হলেও বর্তমানে পাটগাতী ও বর্নি ইউনিয়নেও ধাপের ওপর চাষাবাদ করা হচ্ছে।
এরই মধ্যে কৃষি অফিস থেকে বেশ কয়েকজন কৃষককে ভাসমান বেডে চাষাবাদে উৎসাহিত করার জন্য নানা উপকরণ, যেমন নেট ও বাঁশসহ নানা সবজির বীজ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া হয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাকিবুল ইসলাম বলেন, এ বছর টুঙ্গিপাড়ার বেডে সবজি হিসেবে ঢ্যাঁড়শ, পুঁইশাক, লালশাক, বরবটি, গিমা কলমি, কচু, লাউ, শসা, করলা এবং মসলা হিসেবে হলুদ ও কাঁচামরিচের চাষাবাদ করা হয়েছে। এসব বেড থেকে সবজি ও মসলা তোলা শুরু হয়েছে, যা বাজারে বিক্রি করে কৃষক ন্যায্য দাম পাচ্ছেন। এ ছাড়া যেসব ভাসমান বেড থেকে সবজি ও মসলা তোলা হয়নি, সেগুলো কৃষি বিভাগের কর্মীরা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন, যাতে বেডে কোনো রোগবালাই ও পোকামাকড় আক্রমণ না করে।
গোপালগঞ্জ উপ-পরিচালক ডিএই, খামারবাড়ী, আ. কাদের সরদার বলেন, ভাসমান বেডে সবজি চাষ করতে কৃষকরা এখন বেশ আগ্রহী। এ ব্যাপারে বেশি করে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা চাষ আরও জনপ্রিয়তা করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কৃষকরাও ভাসমান বেডে সবজি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।