গোপালগঞ্জে বাঙ্গি-তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ: গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় এ বছর বাঙ্গি-তরমুজের বাম্পার ফলনে কৃৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বিগত বছরগুলোয় প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় বাঙ্গি-তরমুজের গাছ জমিতেই নষ্ট হয়ে যায়।

এ বছর অতিরিক্ত বৃষ্টি না হওয়ায় উপজেলার বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চলে বৃষ্টির পানি না জমায় বাঙ্গি ও তরমুজ চাষের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফসলও হয়েছে ভালো। বৃষ্টি না হওয়ায় চাষিরা ঠিকমতো ফসল তুলতে পেরেছে।

উপজেলার তেঁতুলবাড়ী, মাছপাড়া, নলুয়া, বুরুয়া, কুমুরিয়া, চকপুকুরিয়া ও হিজলবাড়ী গ্রামের মাঠে বাঙ্গি ও তরমুজের ব্যাপক চাষ করা হয়। এসব এলাকার কৃষকেরা এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় লাখ লাখ টাকার বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রি করেছেন।

উপজেলার মাছপাড়া গ্রামের তরমুজচাষি ফুলচাঁদ অধিকারী বলেন, আমি পরপর চার বছর বাঙ্গি ও তরমুজের চাষ করে অনেক টাকা ঋণী হয়েছিলাম। এর কারণ ছিল অতিরিক্ত বৃষ্টি। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় অন্যের জমি বর্গা করেও ভালো লাভবান হয়েছি।

উপজেলার লখণ্ডা তুলসীবাড়ী গ্রাম থেকে আসা তরমুজ ক্রেতা দেবব্রত বিশ্বাস বলেন,এই এলাকায় প্রচুর তরমুজ চাষ হয়ে থাকে। প্রতিবছরই খাবারের জন্য আমি তরমুজ কিনতে এখানে আসি। তাই এ বছরও তরমুজ কিনতে এসেছি। কিন্তু এ বছর প্রচুর দাম হওয়ায় চারটি তরমুজ কিনেছি।

বাঙ্গি-তরমুজ আড়তদার রাজীব হাজরা ও রসিক বাড়ৈ বলেন, আমাদের আড়ত প্রায় দেড় মাস হলো চালু করেছি। এই দেড় মাসে এখানে এক কোটি টাকার ওপরে শুধু বাঙ্গি বিক্রি করেছি। ১০ দিন ধরে তরমুজ বিক্রি শুরু করেছি।

এরই মধ্যে প্রায় ২০ লাখ টাকার তরমুজ বিক্রি হয়েছে। এখানে ৯টি আড়ত রয়েছে।
প্রতিদিনই এভাবে প্রত্যেক আড়তে বাঙ্গি ও তরমুজ বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের কারণে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের উদ্যোগে অনলাইনের মাধ্যমে বাঙ্গি ও তরমুজ বিক্রি হচ্ছে।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ডা. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, জেলায় এ বছর বাঙ্গি-তরমুজের ফলন হয়েছে প্রচুর। বৃষ্টি না হওয়ায় বাঙ্গি-তরমুজ চাষে কৃষকরা ভালো ফলন পেয়ে লাভবান হয়েছেন। অন্যান্য বছরের ক্ষতি এ বছর পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকেরা। বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রিতে তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা ও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, অনলাইনের মাধ্যমে বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রি করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশপাশের হাটবাজারগুলোয়ও যাতে বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রি করা যায়, সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে কৃষকদের বাঙ্গি-তরমুজ বিক্রিতে কোনো অসুবিধা হয়নি।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পার্থ প্রতিম বৈদ্য বলেন, বিগত বছরগুলোয় অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকের স্বপ্ন বৃষ্টির পানিতেই ধুয়ে যায়। কিন্তু এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এ বছর বাঙ্গি ও তরমুজের ব্যাপক ফলন হয়েছে এবং কৃষকেরা নির্বিঘ্নে বিক্রি করায় লাভবান হয়েছে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ নিটুল রায় বলেন, এ বছর এলাকায় ৬৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাঙ্গি চাষ করা হয়। প্রতিবছর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কৃষকের অর্থকরী ফসল তরমুজ ও বাঙ্গি নষ্ট হয়ে যায়। এ বছর বৃষ্টি না হওয়ায় কৃষকেরা অনেক লাভবান হয়েছেন এবং তাদের মুখে হাসিও ফুটেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০