গোপীবাগে ইশরাকের প্রচারে হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের প্রচারের সময় গোপীবাগে বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থী ইশরাক হোসেনের কর্মীদের সঙ্গে গতকাল আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীর সংঘর্ষ হয়েছে। স্থানীয় বিএনপি কর্মীরা বলছেন, দুপুর ১টার দিকে ইশরাক মিছিল নিয়ে গোপীবাগে নিজের বাসার দিকে যাওয়ার সময় সেন্ট্রাল উইমেন্স কলেজের মোড়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাদের ওপর হামলা করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইশরাকের মিছিল যখন ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিল, ঠিক তখন আওয়ামী লীগ সমর্থিক কাউন্সিলর প্রার্থী ‘ব্যাডমিন্টন’ প্রতীকের রোকন উদ্দিন আহমেদ ও সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর পদপ্রার্থী লাভলী চৌধুরীর কর্মীরা মোড়ে জড়ো হন।

দু’পক্ষই স্লোগান-পাল্টা স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় হ্যান্ডমাইকেও ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের স্লোগান দিতে থাকেন কর্মীরা। স্লোগানের এক পর্যায়ে দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ও প্রায় ৪০ মিনিট ধরে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া আর ঢিল ছোড়াছুড়ি চলে। দু’পক্ষের কর্মীরা এ সময় রাস্তার পাশে থাকা চেয়ারও ছুড়ে মারেন। কয়েকটি গাড়ি এ সময় ভাঙচুরের শিকার হয়। এ সংঘর্ষের মধ্যে এক সংবাদকর্মীসহ ডজনখানেক লোক আহত হয়।

ওয়ারী থানার ডিউটি অফিসার শিলা আকতার বলেন, তারা ‘৯৯৯’ থেকে প্রথম সংঘর্ষের খবর পান। এরপর সেখানে দ্রুত পুলিশ পাঠানো হয় এবং পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ারী থানার পরিদর্শক (অপারেশনস) সুদীপ কুমার সাহা বলেন, ইশরাক হোসেনের এ এলাকায় নির্বাচনী প্রচারের কথা ছিল বিকাল ৫টায়। সে অনুযায়ী পুলিশকে তারা একটি চিঠিও দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করে তারা দুপুর ১টায় ওই এলাকায় নির্বাচনী প্রচার শুরু করে, যা পুলিশকে জানায়নি। ফলে পুলিশের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। ইশরাক হোসেন টিকাটুলী উইমেন্স কলেজের কাছে আওয়ামী লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিনের নির্বাচনী ক্যাম্পের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় উত্তেজনা বাড়ে। এ সময় দু’পক্ষের কথা কাটাকাটি থেকে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।

নিজ এলাকায় তার কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর কর্মীদের সংঘর্ষের পর গোপীবাগের বাসায় জরুরি সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ধানের শীষের জনপ্রিয়তা দেখে নির্বাচন বানচালের জন্য সরকারের প্রার্থীরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে। এটা শুধু নির্বাচনকে বানচাল করা ও ভোটারদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের একটি অপচেষ্টা মাত্র।’ তিনি বলেন, ‘আমি নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা শান্ত থাকবেন, ঠাণ্ডা থাকেন। কোনো রকমের বিচলিত হওয়ার কারণ নেই।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইশরাক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর ক্যাম্প থেকে আমাদের ওপর বড় বড় ইটপাটকেল ও চেয়ার ছুড়ে মারা হয়, অতর্কিতে হামলা চালানো হয় বিনা উসকানিতে। হামলার সময় গুলির আওয়াজ হচ্ছিল। শান্তিপূর্ণভাবে গণসংযোগ করে যখন বাসায় ফিরছি, তখন এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটল। হামলায় আমাদের ৮/১০ কর্মীর মাথা ফেটে আহত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনজন সাংবাদিকও আহত হন। আমার ওপরও হামলার সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু নেতাকর্মীরা সুরক্ষা দিয়েছেন।’

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী রোকন উদ্দিন আহমেদ পাল্টা অভিযোগ এনে বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পের ভেতরে ছিলাম। হঠাৎ ইশরাকের লোকজন আমাদের নির্বাচনী ক্যাম্পের দরজা ভেঙে হামলা করে। এ সময় ইশরাকের লোকজন আট রাউন্ড গুলি ছোড়ে, তাদের হামলায় আমাদের অনেকে আহত হয়েছেন। আমাদের কেউ হামলায় ছিল না।’

বিএনপি প্রার্থীর মিছিল থেকে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে ইশরাক বলেন, ‘আমরা তো প্রচার চালিয়ে মিছিল করছি, ওখানে গুলি কোত্থেকে হবে। আমাদের ওপর ওরা গুলি করেছে। আমরা যখন এখানে আসব, তখন হামলা করা হবে, গুলি করা হবে এটা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। তারা ঘটনা ঘটিয়ে আমাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছেÑতা জনগণ বিশ্বাস করবে না।’

এ ‘হামলার ঘটনায়’ মামলা করবেন জানিয়ে ইশরাক বলেন, ‘আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। এত কর্মী আহত হয়েছেন, সাংবাদিক আহত হয়েছেন। অবশ্যই আমরা মামলা করব।’

বিএনপির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী মির্জা আব্বাস, সদস্য সচিব আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শিরীন সুলতানা, এহছানুল হক মিলন, নাজমুন নাহার বেবী, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু ও রাজীব আহসান অন্যদের মধ্যে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০