ক্রীড়া প্রতিবেদক: ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের মধ্য দিয়ে ক্রিকেট প্রবেশ করে গোলাপি যুগে। মানে, দিবারাত্রির টেস্টে। এবার সেই স্বাদ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত। আগামীকাল স্থানীয় সময় দুপুরে ঐতিহাসিক এ ম্যাচ গড়াবে ইডেন গার্ডেনে। এজন্য কলকাতাজুড়ে এখন বইছে উৎসব আমেজ। পুরো শহর সাজছে গোলাপি রঙে। গোলাপি বেলুন, গোলাপি মাসকটÑসবকিছুতেই গোলাপি টেস্টের ছোঁয়া।
গত পরশুই কলকাতায় পা রেখেছে বাংলাদেশ ও ভারত দল। এরপর থেকেই এখানে আসলে সবার মধ্যেই ‘গোলাপি জ্বর’ বেড়েছে। গতকাল দুদলের ক্রিকেটাররা অনুশীলনে নিজেদের ঝালিয়ে নিয়েছেন। আজও বেশিরভাগ সময় বল-ব্যাট হাতে অনুশীলন করবে বিরাট কোহলি ও মুমিনুল হকের দল।
পুরো ইডেন সেজেছে গোলাপি রঙে। সে রঙে যেন সবার মুখ দেখাচ্ছে একই রকমÑগোলাপি! নানা মতের, নানা চেহারার মানুষ মিলেছে একই রঙেÑগোলাপি! কিন্তু বাংলাদেশ-ভারত প্রথম দিবারাত্রির গোলাপি বলের টেস্ট যে উইকেটে খেলা হবে, তা কিন্তু সবুজ। গোলাপি বলের গুণাগুণ বাঁচিয়ে রাখতেই ইডেনে বাড়তি ঘাসের আগমন! ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের (সিএবি) চিফ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের মন্তব্য সে সম্ভাবনা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, ‘ম্যাচটি হয়তো আলাদা। ভারতবর্ষে এ প্রথমবারের মতো গোলাপি বলে ফ্লাডলাইটে টেস্ট ম্যাচ হবে। সেদিক থেকে এটি এক ঐতিহাসিক ঘটনা হবে। কিন্তু উইকেট প্রসঙ্গে যদি জানতে চান, তবে বলবÑউইকেটের একই রকম চরিত্র বজায় রাখার চেষ্টা করব। ইডেনের পিচ কিউরেটর হিসেবে এখানে আলাদাভাবে করার কিছু নেই। এর আগেও আমরা এখানে একটি পিংক বলের ক্রিকেট ম্যাচ আয়োজন করেছিলাম। এই স্বাভাবিক উইকেটেই সে ম্যাচ হয়েছিল।’
গোলাপি বলের টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশ-ভারত দুদেশের দর্শকেরই তুমুল আগ্রহ রয়েছে। টেস্টের প্রথম চার দিনের টিকিট শেষ! মাঠে বসে খেলা দেখতে বাংলাদেশ থেকেও আসছেন অনেকেই। আলোচিত এ টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজকরা নিয়েছেন নানা উদ্যোগ। গত পরশু ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সম্পাদক অভিষেক ডালমিয়া এ ব্যাপারে বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য ঐতিহাসিক এক উপলক্ষ। এ টেস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে যা যা সম্ভব, সবই করেছি এবং করব। টেস্ট শুরু হওয়ার আগে-পরে, লাঞ্চ কিংবা চা-বিরতিতে নানা কর্মসূচি রাখা হয়েছে। একটির পর একটি হতে থাকবে। যেহেতু গোলাপি বলে খেলা হবে, পুরো শহর, ইডেন গার্ডেনে গোলাপি আবহ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। চারদিক এখন আলোকিত হচ্ছে গোলাপি আলোয়। সংস্কৃতিই হচ্ছে বাংলার মূল। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে। অতিথি আপ্যায়নেও কোনো কমতি রাখা হচ্ছে না।’
গোলাপি টেস্টে যেন বোলার-ব্যাটসম্যান সবাই সুবিধা পান, সেদিকে নজর দিচ্ছেন সিএবি’র চিফ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়, ‘আমি চেষ্টা করে যাচ্ছি সেরকম উইকেটই রাখার। সৌরভ গাঙ্গুলিরও তা-ই ইচ্ছে। ওরকম উইকেটই তিনি পছন্দ করেন। আশা করি এবার সেরকম উইকেট হবে ইডেনের টেস্টে। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে পিচ প্রস্তুত করতে আমাদের কাজ একটু ব্যাহত হয়েছে। তবে আশা করি ম্যাচের আগে আমরা সেই চিরাচরিত ইডেনের উইকেটই পুরো তৈরি করতে পারব। সৌরভ মাঠে আসছেন। পরিদর্শন করছেন। নিজের অভিজ্ঞতার ইনপুট দিচ্ছেন। নভেম্বরের শেষে টেস্ট। গঙ্গা নদীর ধারের ঠাণ্ডা বাতাস বয়ে যাবে ইডেনের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে। গোলাপি বল একটু বেশিই সুইং করে।’
এ উপমহাদেশে প্রথম দিবারাত্রির টেস্ট আকর্ষণীয় করে তুলতে আয়োজকদের চেষ্টার কমতি নেই। কিন্তু তাদের উদ্যোগ তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন মাঠের খেলাটা হবে জমজমাট। তারা অবশ্য আশা করছেন, ইডেনের উৎসবমুখর পরিবেশ বাংলাদেশ-ভারত সমর্থকদের দারুণ কিছু উপহার দেবে।