গোলাপ গ্রামে রঙিন একদিন…

পড়ালেখার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের কাছে জ্ঞানার্জনের অন্যতম একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ ভ্রমণ। দেশ ও দেশের বাইরের সুন্দর এবং আকর্ষণীয় স্থানে ভ্রমণ করা উচিত তাদের। সারা বছর বই পড়ে যা জানা যায়, একদিন ভ্রমণ করলে তার চেয়ে বেশি জ্ঞানার্জন করা যায়। এর মধ্য দিয়ে নিজেকেও জানা যায়। স্থান সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়, পরিচিত হওয়া যায়। এক্ষেত্রে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের তো আরও বেশি ভ্রমণ করতে হয়। দেশের কোন প্রান্তে কী আছে, তার খুঁটিনাটি জানতে হয়। নিজেকে সব সময় আপডেট রাখতে হয়।
এ কারণে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের একাদশ ব্যাচের ভ্রমণপ্রিয় ১২ শিক্ষার্থী কিছুদিন আগে বেড়াতে যান গোলাপ গ্রামে। প্রতি বছর তারা দেশের উল্লেখযোগ্য স্থানে বেড়াতে যান। ভ্রমণে গিয়ে তারা অনেক বিষয় সম্পর্কে অবগত হন, শেখেন, জানেন, পান আনন্দ। তাই ভ্রমণকে তারা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিয়েছেন। এবার সাংবাদিকতা বিভাগের একাদশ ব্যাচের সিআর সাব্বির আহমেদ নোমানসহ তার সহপাঠী ১২ জন সিদ্ধান্ত নিলেন ঢাকায় সাভার উপজেলার মনোরম সবুজ-শ্যামল প্রাকৃতিক স্থান গোলাপ গ্রামে যাবেন। উদ্দেশ্য গোলাপ গ্রাম ও গোলাপ সম্পর্কে নতুন করে জানা আর সৌন্দর্য উপভোগ করা।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতা বিভাগের ১২ শিক্ষার্থী রওনা হন সাভারের গোলাপ গ্রামের উদ্দেশে। ঈদের আগে ঢাকায় তীব্র যানজট লেগে থাকত। অনেকটা সময় নিয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধে পৌঁছাই আমরা। তুরাগ নদী পার হওয়ার জন্য ট্রলারে চড়ি। নদী পাড়ি দেওয়ার সময়টুকু বেশ আনন্দে কেটে যায়। নদীর পানি ঢেউ খেলছে, আর ট্রলার পানির ওপর দিয়ে ভেসে যাচ্ছে। এরই মাঝে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা সত্যিই মনোমুগ্ধকর ছিল। ট্রলারে ১২ বন্ধুর সেলফি তোলার মুহূর্তগুলোও স্মৃতিময় বলছিলেন কাওসার আহমেদ। সিআর সাব্বির আহমেদ বলেন, আমরা বাসা থেকে খাবারও রান্না করে নিয়েছি, যাতে ওখানে গিয়ে কিনে খেতে না হয়।
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নে তুরাগ নদের তীরে সাদুল্লাপুরে গোলাপ গ্রামের অবস্থান। নদী পার হয়ে গ্রামের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলি আমরা। আঁকাবাঁকা, সরু পথ ধরে এগোতে থাকি। পথের ধার ঘেঁষে অসংখ্য গোলাপের বাগান। যত দূর চোখ যায়, শুধু লাল গোলাপের সমারোহ। মাঝেমধ্যে কিছু সাদা গোলাপ, গ্ল্যাডিওলাস, জারবেরার বাগানও চোখে পড়ে।
গোলাপের সুগন্ধ আর চোখ জুড়ানো দৃশ্য নিয়ে পুরো গ্রাম সেজে রয়েছে। শুধু সাদুল্লাপুরই নয়, আশেপাশের শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগ্মীবাড়ি গ্রামের লাল টকটকে গোলাপ মাথা উঁচিয়ে থাকে। দুপুরের পর থেকেই চাষিরা বাগানে নেমে যান গোলাপ তুলতে। গাছের সারির এক পাশ থেকে ফুল তোলা শুরু করে শেষ পর্যন্ত মুঠো ভরে ফুল তোলেন। চাষিদের ফুল তোলার দৃশ্য বেশ উপভোগ্য।
শ্যামপুরের গোলাপচাষি গোপাল চন্দ্র বলেন, সারা বছরই গোলাপ চাষ হয়। এখানে মূলত মিরান্ডা প্রজাতির লাল গোলাপের চাষ হয়। অনেকে গোলাপ বাগান দেখতে আসেন। যারাই ঘুরতে আসেন, কিছু ফুল কিনে নিয়ে যান। বন্ধু শাহরুখ বলেন, আমি ভেবেছিলাম হয়তো গোলাপের ছোট বাগান থাকবে। কিন্তু তা নয়, এখানে এসে দেখি গোলাপের ঘ্রাণে মন মাতানো এক বিশাল বাগান। যেদিকেই তাকাই, গোলাপ বাগান দেখতে পাই। সুগন্ধ পাই সবখানেই। কাওসার আহমেদ বলেন, গোলাপ গ্রামে গোলাপ ফুলের যে এত সমারোহ তা জানা ছিল না। আমরা এখানকার গোলাপ ফুল বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, গোলাপ গ্রামের ফুল বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। একই সঙ্গে বিশ্বের অনেক দেশে রফতানিও হয়।
গোলাপ গ্রামের ভ্রমণটি আমাদের জীবনের স্মরণীয় একটি ভ্রমণ, যা মনে থাকবে শিক্ষা-পরবর্তী জীবনেও। ওইদিন আমরা কিছু ফুলও কিনে আনি।
জাহানারা আক্তার, জান্নাতুন নাইমা সেতু, উর্মি ও দিবা জাহান বলেন, গোলাপ গ্রামের ঐতিহ্য, সৌন্দর্য সাভারের এ অঞ্চলকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলছে। যে কেউই এখানে ভ্রমণ করতে এলে তার আবারও আসতে মন চাইবে। এমন সুন্দর জায়গায় ভ্রমণ করলে মনে প্রশান্তি বাড়ে। মন ফুরফুরে হয়। ভালো লাগা কাজ করে। নিজাম উদ্দিন শামিম ও শাহ পরানের মতে, গোলাপ ফোটা ও বিক্রির দৃশ্য চমৎকার। এমএম মুজাহিদ ও সাইফুল ইসলাম এ ভ্রমণকে একটু ভিন্নভাবে বর্ণনা করেন। তারা বলেন, গোলাপ গ্রামে ভ্রমণ পথে বন্ধুরা মিলে ট্রলারে আমাদের বার্থডে উদ্যাপন করেছে। দিনটি তাই স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের জীবনে। এ দিনটির কথা কখনও ভুলব না। যদি সুযোগ হয়, এ
সবুজ-শ্যামল-ঘ্রাণ ছড়ানো স্থানটিতে আবারও বেড়াতে আসব।
এরপর শেষ বিকালে ট্রলারে উঠি আমরা। শান্ত নদী। নৌকা চলছে অল্প স্রোতের তালে। এ যেন যান্ত্রিক জীবনের ঝুটঝামেলা থেকে নিজেদের ফিরে পাওয়ার অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। পানির ছলছল শব্দে বেড়িবাঁধ ঘাটে এসে পৌঁছাই। এর মধ্য দিয়ে রঙিন একটি দিনের সমাপ্তি ঘটে। শেষ হয় বর্ণিল একটি দিনের!

আমজাদ হোসেন ফাহীম

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০