শতাব্দী পেরিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। আধুনিক ও সময়োপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত মানবসম্পদ তৈরি করে চলেছে এ বিদ্যালয়টি। এ প্রতিষ্ঠানের অনেক কৃতী ছাত্র এখন দেশবরেণ্য আলোকিত মানুষ। প্রতিবছর বিদ্যালয়টি জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় শতভাগ উত্তীর্ণসহ নানা পর্যায়ে সাফল্য অর্জনের মাধ্যমে গৌরব অক্ষুন্ন রাখছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এটি। এখানকার প্রায় সব মা-বাবার স্বপ্ন থাকে তাদের সন্তানকে হরিমোহন স্কুলে পড়ানোর। ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ না পাওয়া ছেলেটির অভিভাবক যেমন হতাশ হন, অন্যদিকে সুযোগ পাওয়া ছেলেটির অভিভাবক হন গর্বিত। সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলতে হরিমোহন স্কুলের তরীতে উঠিয়ে দিতে ব্যাকুল থাকেন অভিভাবক। বিদ্যালয়টিতে ভর্তি হতে পারলে অভিভাবকরা নিশ্চিত হন ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রায় শতভাগ ছাত্র গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাগুলোয় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়। এভাবে ১২২ বছর ধরে সফলতার ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে বিদ্যালয়টি।
ইতিহাস
১৮৯৫ সালে খড়ের চালাবিশিষ্ট একটি দালানঘরে বিদ্যালয়টির গোড়াপত্তন হয়। ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাড়তি জায়গার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতাপ চন্দ্র দাসের চালাঘরটিতে পাঠদান আরম্ভ হয়। ক্রমবর্ধমান ছাত্রের সুষ্ঠু পাঠদান ও আসনব্যবস্থা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তৎকালীন অগ্রদ্বীপ স্টেটের জমিদার রমাপ্রসাদ মল্লিক তদীয় পিতা হরিমোহন মল্লিকের নাম চিরস্মরণীয় করে রাখার জন্য এ বিদ্যালয়টি পরিচালনার সব ব্যয়ভার বহন করতে থাকেন। নামকরণ করা হয় ‘এইচএম ইনস্টিটিউশন’।
বিদ্যালয়ের সঙ্গে নিমগাছির জেসামুদ্দিন সরকার, রঘুনাথ মজুমদার প্রমুখ, শরৎচন্দ্র চ্যাটার্জি, রামরঞ্জন মল্লিক, মধুসূদন মল্লিকের নাম জড়িয়ে আছে।
১৯১১ সালের এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা প্রথম ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ নেন। ১৯১৩ সালের ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সব ছাত্র প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৮ সালের ১৫ নভেম্বর বিদ্যালয়টিকে ‘হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে জাতীয়করণ করা হয়।
বিদ্যালয়টিতে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান করা হয়। সব শ্রেণিতে দুটো করে শাখা বিদ্যমান প্রভাতী ও দিবা শাখা। দুই শিফটে বর্তমানে ১২৬৪ ছাত্র রয়েছে।
অবকাঠামো
বিদ্যালয়টির পুরোনো মূল ভবন ও পূর্ব পাশে ৯ কক্ষবিশিষ্ট চারতলা ভবন রয়েছে। পশ্চিম পাশে তিন কক্ষবিশিষ্ট বিজ্ঞানাগার ও এর পাশে প্রধান শিক্ষকের দোতলা বাসভবন রয়েছে। মূল ভবনের পাশে মসজিদ, বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে বহু পুরোনো একটি ব্যায়ামাগার ও পরিত্যক্ত ছাত্র কমনরুম রয়েছে। বিশাল আকারের খেলার মাঠ, ছয় কক্ষবিশিষ্ট পুরোনো ছাত্রাবাস ও আট কক্ষবিশিষ্ট দোতলা ছাত্রাবাস রয়েছে। সম্প্রতি এখানে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। রয়েছে ১৫ হাজার বই সংবলিত গ্রন্থাগার। ২০টি কম্পিউটার সংবলিত একটি সুসজ্জিত কম্পিউটার ল্যাব ও তিনটি মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে।
কৃতী ছাত্রদের কথা
১৯১৩ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় সব ছাত্রই প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হয়ে বিদ্যালয়ের গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা করে। সে থেকে আজ পর্যন্ত এক উজ্জ্বল দীপশিখা হয়ে রয়েছে হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। এর অনির্বাণ শিখা জ্ঞানালোকে উদ্ভাসিত করেছে শত শত সম্ভাবনাময় ছাত্রকে, যারা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কৃতিত্বের ছাপ রাখছেন। বিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র আবদুলাহ হারুন পাশা, প্রয়াত সমর সেন, প্রয়াত শিবনাথ রায়, মো. কামাল উদ্দীন, মো. শফিকুর রহমান বায়োজিদ, শফিকুল ইসলাম, মো. হাসান মারুফ (ডিএস), মো. আফসারুজ্জামান, অধ্যাপক মুহম্মদ এলতাস উদ্দিন, ড. মো. আলতাফ হোসেন, ড. মো. মমিনুল হক, হাসান আমিন সাদি, বজলুর রহমান ছানা, আজিজুর রহমান, আবদুস সালাম ও এটিএম ফজলে কবীর (শিবলী)। এছাড়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, বিজ্ঞান, সাহিত্য, লোকসংগীত, সংগীত, চলচ্চিত্র, দার্শনিক, ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব, অ্যাথলেট, ফুটবলার, স্কাউটিংসহ জীবনের বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা রাখছেন এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
কিছু সমস্যা
ভর্তিবাণিজ্যের ঘটনাও ঘটে এ বিদ্যালয়ে। ভর্তির সুযোগ পেতে কোচিং করানোর প্রবণতা রয়েছে অভিভাবকদের। ফলে জেলাব্যাপী গড়ে উঠেছে নিষিদ্ধ কোচিংবাণিজ্যের ভয়াবহ নেটওয়ার্ক। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকটও রয়েছে। অনুমোদিত ৫২ জনের মধ্যে ৩৫ জন শিক্ষক কর্মরত।
প্রধান শিক্ষকের কথা
শিক্ষা বিস্তারের অভিযাত্রায় হরিমোহন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ১২২ বছর ধরে জাতির মেধা, মনন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ভূমিকা রেখে চলেছে। উন্নত পরিবেশ ও শিক্ষকদের দায়িত্বশীল ভূমিকা আর পরিশ্রমের মাধ্যমে বিদ্যালয়টি দেশের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি পেয়েছে। শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশে আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থার পাশাপাশি খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। গৌরবময় ঐতিহ্যের ধারায় শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে বিদ্যালয়টি নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছি। আশা করি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব সততার সঙ্গে পালনসহ মানবসেবায় ভূমিকা রাখবে এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয়টির শতাব্দীপ্রাচীন সুনাম অক্ষুন্ন থাকুকএটাই আমার প্রত্যাশা।
মো. মঈনুল হক
ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক
ইতিবাচক চিন্তা বদলে দেয় জীবন সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনে ইতিবাচক চিন্তার কোনো বিকল্প নেই। ইতিবাচক চিন্তা মানুষকে সুখী করে তোলে। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, ইতিবাচক চিন্তাকারীরা অন্যদের তুলনায় সফল। চর্চার মাধ্যমে এই চিন্তাকে সঙ্গী করা যায় সময় নিন
খারাপ কিছু ঘটলে মোটেও ঘাবড়াবেন না। অপেক্ষা করুন, নিজেকে সময় দিন। এ অভ্যাস আপনার ভেতরে ইতিবাচক চিন্তা তৈরি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনাকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।
ইতিবাচক মানুষের সঙ্গ
এমন মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করুন, যারা আপনাকে গঠনমূলক কাজ ও আশাবাদী হতে সাহায্য করেন।
অন্যকে সাহায্য করুন
সাধ্যমতো অন্যকে সাহায্য করুন। এর মধ্য দিয়ে এক ধরনের আত্মতৃপ্তি পাওয়া যায়, যা আপনাকে ইতিবাচক করে তুলবে নিশ্চিত।
কৃতজ্ঞ থাকুন
আপনার যা আছে তা নিয়ে ভাবুন। অনেকের হয়তো তাও নেই। আবার অন্যের কাছে থাকলেও আপনার হারানোর কিছু নেই।
ইতিবাচক উক্তি পড়ুন
প্রতিদিন কিছু ইতিবাচক উক্তি বা লেখা পড়ুন। এগুলো মনে আশা জাগায়, ভয় দূর করে।
ক্ষমা করতে শিখুন
কোনো ভুল হলেই অনেক সময় নিজেকে দোষারোপ করি, হীনমন্যতায় ভুগি, যা আমাদের মনে নেতিবাচক ভাবনার জন্ম দেয়। এর পরিবর্তে আমাদের উচিত ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া। আমরা কেউ-ই নিখুঁত নই কথাটা মেনে নিয়ে নিজেকে ক্ষমা করতে শিখুন।
ভুলটা কোথায় হচ্ছে
ইতিবাচক চিন্তা মানে এই নয় যে, ভুলগুলো এড়িয়ে যেতে হবে। দ্বিতীয়বার যেন একই ভুল না হয়, সেজন্য কী কারণে ভুল হচ্ছে তা খুঁজে বের করা জরুরি। ভবিষ্যতে যেন সফলভাবে এসব সমস্যা এড়ানো যায়, সেই লক্ষ্যে কাজ করুন।
ব্যর্থতাকে সুযোগ হিসেবে নিন
বলা হয়ে থাকে ব্যর্থতা হচ্ছে সফলতার ভিত্তি। জীবনের নেতিবাচক ব্যর্থতাগুলোও বড় বড় সাফল্য অর্জনের পথ সুগম করে। সুতরাং ব্যর্থতায় হাল না ছেড়ে অপেক্ষা করুন। মেঘের আড়ালে যেমন সূর্য হাসে, ব্যর্থতার পরে সাফল্যও আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
শিপন আহমেদ