গ্যারান্টির আওতায় চার ব্যাংক ধার পাচ্ছে হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় তারল্য সংকটে ধুঁকতে থাকা চারটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে প্রায় হাজার কোটি টাকা ঋণ পাচ্ছে। ব্যাংকগুলো হলোÑফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে পাঁচটি সবল ব্যাংক তাদের এই ঋণ সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে এই ঋণের গ্যারান্টি মিলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হোসনে আরা শিখা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

দীর্ঘদিন ধরেই তারল্য সংকটে ভুগছে প্রায় এক ডজন ব্যাংক। তাদের সংকট কাটাতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে তহবিল সংগ্রহ করে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি সাক্ষেপে সংকটে থাকা ব্যাংকগুলোকে ভালো ১০টি ব্যাংক ঋণ সহায়তা দিতে রাজি হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরে সঙ্গে এক বৈঠকে এসব ব্যাংকের এমডিরা তাদের তারল্য সহায়তা দেয়ার বিষয়ে সম্মতি প্রকাশ করেন। এর অংশ হিসেবে এরই মধ্যে পাঁচটি সবল ব্যাংক চারটি দুর্বল ব্যাংকে ৯৪৫ কোটি টাকার ঋণ তথা তারল্য সরবরাহ করতে সম্মত হয়, যার বিপরীতে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি মিলেছে।

জানা যায়, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের জন্য দেড় হাজার কোটি টাকার গ্যারান্টি ইস্যু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকটিকে ৩৭৫ কোটি টাকার সীমা বেঁধে দেয়া হয়। এর আওতায় প্রথম পর্যায়ে তিনটি ব্যাংক থেকে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদ বা মুনাফায় বেসরকারি দ্য সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি, একই পরিমাণ সুদহারে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৫০ কোটি ও ১৩ শতাংশ সুদে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এই ঋণ দিচ্ছে।

ন্যাশনাল ব্যাংককে দুই হাজার কোটি টাকা গ্যারান্টি দেয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে ব্যাংকটিকে ৫০০ কোটি টাকার সীমা বেঁধে দেয়া হয়। যদিও ব্যাংকটি গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির আওতায় ২৭০ কোটি টাকার ঋণ নেয়ার অনুমোদন পায়। ব্যাংকটিকে সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে ২০০ টাকার তারল্য দিচ্ছে দ্য সিটি ব্যাংক, ১৩ শতাংশ সুদে ৫০ মিউচুয়্যাল ট্রাস্ট ও একই পরিমাণ সুদে ২০ কোটি টাকা দিচ্ছে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক। এছাড়া সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক দুই হাজার কোটি টাকার গ্যারান্টি পেয়েছে। প্রথম পর্যায় ব্যাংকটির জন্য সীমা নির্ধারণ করা হয় ৫০০ কোটি টাকা। গতকাল সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ সহায়তার গ্যারান্টি পায়। ইসলামী ধারার এ ব্যাংকটিকে ১৩ শতাংশ মুনাফায় সিটি ব্যাংক ৫০ কোটি ও সাড়ে ১২ শতাংশ সুদে ৩০০ কোটি টাকা দিচ্ছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। আর গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক পাচ্ছে ২৫ কোটি টাকা। এই ঋণের পুরোটাই দিচ্ছে ইস্টার্ন ব্যাংক, যার সুদ সাড়ে ১৩ শতাংশ। যদিও ব্যাংকটির গ্যারান্টি লিমিট ৫০০ কোটি টাকা। প্রথম পর্যায়ে নেয়ার সীমা ছিল ১৫০ কোটি টাকা। সব ব্যাংক থেকে গ্যারান্টির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ফি নেবে।

এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছিল, কর্জ বা প্লেসমেন্ট হিসেবে দুর্বল ব্যাংককে নির্ধারিত মেয়াদে বিশেষ ধার দেবে ভালো ব্যাংক। সবল ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া ঋণের এই টাকা দুর্বল ব্যাংকগুলো দিতে ব্যর্থ হলে সেই টাকা মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ফেরত দেবে। এরই মধ্যে সংকটে থাকা এই চারটিসহ সাতটি ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি তারল্য সহায়তা পেতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টি চেয়ে আবেদন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ধার চেয়ে আবেদন করে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি সাত হাজার ৯০০ কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়ে আবেদন করে। এরপর ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পাঁচ হাজার কোটি, ন্যাশনাল পাঁচ হাজার কোটি, এক্সিম চার হাজার কোটি, গ্লোবাল ইসলামী তিন হাজার ৫০০ কোটি, সোশ্যাল ইসলামী দুই হাজার কোটি এবং ইউনিয়ন ব্যাংক দেড় হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তার গ্যারান্টি চেয়েছে।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে পুনর্গঠন করা হয়। এগুলোসহ মোট ১১টি ব্যাংকের পর্ষদ পুনর্গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নামে-বেনামে টাকা বের করে নেয়ায় তীব্র তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংকগুলোয়। দীর্ঘদিন ধরে বেশ কয়েকটি ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআরআর ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। পাশাপাশি কয়েকটি ব্যাংকের বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে চলতি হিসাবেও ঘাটতি তৈরি হয়েছিল। ঋণাত্মক হলেও লেনদেন অব্যাহত রাখার সুযোগ দিয়েছিলেন সাবেক পলাতক গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। টাকা ছাপিয়ে দেয়া সেই বিশেষ সুবিধা এখন বন্ধ করে দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এ অবস্থায় সাময়িক সংকট মেটাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গ্যারান্টির বিপরীতে ধারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর দুর্বল ব্যাংকের কাছ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিমান্ড প্রমিসরি (ডিপি) নোট নিয়ে রাখবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০