গ্যারান্টির টাকায় পরিচালকদের আমানত ও ঋণ দেয়া যাবে না

রোহান রাজিব: দুর্বল ব্যাংক গ্যারান্টির আওতায় পাওয়া ধারের অর্থ ব্যবহারে বেশকিছু শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গ্যারান্টির অর্থ ব্যাংকের সাবেক বা বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের নামে-বেনামে রাখা আমানত তুলতে পারবেন না। একই সঙ্গে তাদের অনুকূলে নতুন করে কোনো ঋণ দেয়া যাবে না। পাশাপাশি গ্যারান্টি থাকা অবস্থায় বা গ্যারান্টির বিপরীতে কোনো দায় পরিশোধ না হলে নগদ লভ্যাংশও দেয়া যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

জানা যায়, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য-সহায়তা দিয়েছে। প্রথম ধাপে ৯৪৫ কোটি টাকা ধার পেয়েছে চার ব্যাংক। এতে সুদের হার ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ থেকে সাড়ে ১৩ শতাংশ। ব্যাংকগুলো হলো ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক। ধারের এসব অর্থ ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংক কিছু শর্ত দিয়েছে ব্যাংকগুলোকে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, গ্যারান্টির অর্থ নতুন কোনো ঋণ বা বিনিয়োগ করা যাবে না। বিদ্যমান ঋণ বর্ধিত করা যাবে না এবং আগের কোনো ঋণ অনুমোদন হয়েছে তবে তা ছাড় করা হয়নি, এমন ঋণও বিতরণ করা যাবে না। এই অর্থ দিয়ে ব্যাংকের বিদ্যমান কোনো আন্তঃব্যাংক দায় বা প্লেসমেন্টের অর্থ পরিশোধ করা যাবে না। একই সঙ্গে গ্যারান্টি আওতায় পাওয়া অর্থ গ্যারান্টি স্কিমে অন্তর্ভুক্ত ব্যাংকে আমানত করা যাবে না। এছাড়া অন্য ব্যাংকের ঋণ বা বিনিয়োগ অধিগ্রহণ করতে পারবে না, ডলার কেনার কাজে খরচ করা যাবে না এবং পরিচালনা ব্যয় আগের বছরের তুলনায় ৫ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করা যাবে না। তাছাড়া গ্যারান্টি থাকাকালীন নতুন আমানত বাংলাদেশ ব্যাংকের চলতি হিসাবের ঋণাত্মক, সিআরআর ও এসএলআর দায় পরিশোধের পাশাপাশি গ্রাহকের আমানতের দায় পরিশোধ করতে হবে।

জানা যায়, এখন পর্যন্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা ধার পেয়েছে। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা এবং এমটিবি ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৫০ কোটি টাকা করে দিয়েছে। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংককে সিটি ব্যাংক ৩০০ কোটি টাকা ও এমটিবি ৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংককে ২৫ কোটি টাকা দিয়েছে ইস্টার্ন ব্যাংক। ন্যাশনাল ব্যাংক পেয়েছে ২৭০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সিটি ব্যাংক ২০০ কোটি টাকা, এমটিবি ৫০ কোটি টাকা ও বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০ কোটি টাকা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে গ্যারান্টির বিপরীতে যে টাকা ধার নেয়ার সুযোগ দেয়া হবে তার ২৫ শতাংশ তারা প্রথম ধাপে পেয়েছে। এতে ঘুরে দাঁড়াতে না পারলে আর টাকা ধার দেয়া হবে না। তখন কৌশল পরিবর্তন করা হবে।

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইতোমধ্যে পরিবর্তন করা হয়েছে। এর সবক’টি ব্যাংক এস আলম গ্রুপের মালিকানাধীন ও নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি যোগ দিয়েই ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন।
যেসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণহীন ছিল, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বদলে দেয়া হয়। একে একে ১১টি ব্যাংক ও একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন নতুন গভর্নর।

ব্যাংকগুলো হলো ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, কমার্স, আল-আরাফাহ, ন্যাশনাল, ইউসিবি, আইএফআইসি ও এক্সিম। আর্থিক প্রতিষ্ঠানটি হলো আভিভা ফাইন্যান্স। এর মধ্যে ৯টিরই নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত এস আলম গ্রুপের হাতে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা তুলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে তারল্য সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো। এছাড়া মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান নগদেও প্রশাসক বসানো হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর ক্ষুদ্র ও বড়, সব ধরনের আমানতকারী টাকা তোলার জন্য ব্যাংকগুলোতে ভিড় করছেন। এতে বেশির ভাগ ব্যাংকে তারল্য সংকট আরও প্রকট হয়ে ওঠে এবং সবাই টাকা পাচ্ছেন না। ফলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ ছাড়া চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকায় কয়েকটি ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহকেরা এটিএম বুথ থেকেও টাকা তুলতে পারছেন না। এই সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০