নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাসের দাম আবারও বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলছে। সম্প্রতি গ্রাহক পর্যায়ে গড়ে ১১৭ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো। তবে সে প্রস্তাবগুলো বিশ্লেষণ করে গড়ে ২০ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছে বিইআরসির (বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন) কারিগরি কমিটি। গতকাল রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশন মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে এ সুপারিশ করা হয়।
কারিগরি কমিটি রান্নার জন্য দুই চুলার সংযোগে বিল ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮০ টাকা ও এক চুলার বিল ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা নির্ধারণের জন্য সুপারিশ করেছে। এছাড়া মিটারযুক্ত আবাসিক গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম বর্তমানে ১২ টাকা ৬০ পয়সা, যা বাড়িয়ে ১৮ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
এদিকে বৃহৎ শিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং মাঝারি শিল্পে ১২ টাকা ৪৯ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়। তবে ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ১৭ টাকা চার পয়সা থেকে কমিয়ে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা এবং ক্যাপটিভে (শিল্পকারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহƒত গ্যাস) ১৩ টাকা ৮৫ পয়সার স্থলে ১৫ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়।
একইভাবে বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে ব্যবহƒত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটার চার টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা ৩৪ পয়সা, চা বাগানে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৬৫ পয়সা, হোটেল-রেস্টুরেন্টে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ২৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৭ টাকা ৬০ পয়সা এবং সিএনজির দাম ৩৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কারিগরি কমিটি।
যদিও গণশুনানিতে এর বিরোধিতা করেন ভোক্তা প্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। এ বিষয়ে কনজুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, ‘গ্যাস কোম্পানিগুলো প্রচুর মুনাফা করছে। সরকারকে উদ্বৃত্ত টাকা দিচ্ছে। উন্নয়ন কাজের জন্য গ্রাহকের পকেট থেকে এখনই গ্যাসের দামের সঙ্গে গ্যাস উন্নয়ন তহবিলের নামে টাকা কেটে রাখা হচ্ছে। এই অবস্থায় কোম্পানিগুলোর গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব অগ্রহণযোগ্য। তারা ব্যবসা করার নামে গ্রাহকের টাকা দিয়ে যাচ্ছেতাই করছে।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানিগুলো যেখানে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস দিতে পারছে না, ডিমান্ড পূরণ করতে পারছে না, সেখানে তারা ডিমান্ড চার্জ বাড়াতে চাইছে, যা অবাস্তব।’
মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) ভাইস প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান বলেন, ‘বছর বছর গ্যাসের দাম বাড়লে ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়ে। সরকারের উচিত প্রতি পাঁচ বছর পরপর গ্যাসের দাম সমন্বয় করা, যাতে ব্যবসায়ীরা সে অনুযায়ী ব্যবসার পরিকল্পনা করতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘এবার যে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয়া হয়েছে, তা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। আশা করছি কমিশন সাধারণ মানুষের বিষয়টি আমলে নিয়ে এবং কোম্পানির মুনাফা বিবেচনা করে গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিষয়টি বিবেচনা করবে।
সাধারণ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কারিগরি কমিটির গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব আমরা মানি না। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ ধরনের প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য নয়। বর্তমান বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণহীন। সম্প্রতি জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন ভাড়াও অনিয়ন্ত্রিত। এমন অবস্থায় গ্যাসের দাম নিয়ে গণশুনানি করাই উচিত হয়নি। এই অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ালে সাধারণ মানুষ চরম বিপদে পড়বে। এই পরিস্থিতি চিন্তা করে কমিশনের উচিত আপাতত এই শুনানি স্থগিত রাখা।’
প্রসঙ্গত, আজ তিতাস ও বাখরাবাদ গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রস্তাবিত দামের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হবে।