Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 3:20 pm

গ্যাসের দাম না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যয় বৃদ্ধি সত্ত্বেও ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যমান গ্যাসের মূল্যহার পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গতকাল রাজধানীর টিসিবি ভবনে কমিশনের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। উচ্চমূল্যের তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির কারণে গ্যাস কোম্পানিগুলো বর্তমান মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। সেসব প্রস্তাবের ওপর গণশুনানি করেছিল কমিশন। গতকাল ওই গণশুনানির বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্যাসের উৎপাদন, এলএনজি আমদানি, সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও সার্বিক দিক বিবেচনা করে মূল্য পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ সময় জানানো হয় কমিশন নিরাপত্তা জামানত, বিল পরিশোধ, বিল পৌঁছানো ইত্যাদি কতিপয় নিয়মাবলি পরিবর্তন করা হয়েছে।
কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামসহ সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, কমিশনরে সদস্য রহমান মুরশেদ, মিজানুর রহমান, আবদুল আজিজ খান ও মাহমুদ উল হক ভূঁইয়া।
মূল্য পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কমিশনে চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলো যে প্রেক্ষাপটে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিল তা এখন পরিবর্তন হয়েছে। তখন বলা হয়েছিল এলএনজি থেকে জাতীয় গ্রিডে প্রতিদিন এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হবে। কিন্তু গত ১৮ সেপ্টেম্বর জাতীয় গ্রিডে এলএনজি যুক্ত হওয়ার পর দেখা গেছে তার পরমাণ ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুটের কিছু বেশি। কাজেই ৩০০ মিলিয়ন বৃদ্ধির জন্য এক হাজার মিলিয়ন বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দাম বাড়ানো যৌক্তিক নয়। তিনি বলেন, এ ৩০০ মিলিয়নের জন্য যেটুকু ব্যয় বাড়বে সেটি সরকার ভর্তুকি দেবে।
নির্বাচনকে সামনে রেখে বিইআরসি গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে কিনাÑসাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কমিশনের কাজ মূল্য নির্ধারণ, নির্বাচনের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমাদের যেটা যৌক্তিক মনে হয়েছে আমরা সেটা করেছি।’ এ সময় তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, বিইআরসি দাম বাড়ায়নি এতে মনে হয় আপনারা একটু আশ্চর্য হয়েছেন।
ব্যয় বৃদ্ধির পরেও দাম না বাড়ানোর বিষয়ে বিইআরসির সদস্য আবদুল আজিজ খান বলেন, এলএনজি আমদানিতে তিন হাজার ১০০ কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন হবে, যা সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে। এ পরিমাণ ভর্তুকি দিলে এলএনজি আমদানিতে আর কোনো সমস্যা হবে না। তিনি জানান, ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সার্বিকভাবে গ্যাসের মূল্য ২০ শতাংশ পরিবর্তনের প্রয়োজন পরে। কিন্তু সে অর্থ সরকার এ অর্থবছরের বাজেট থেকে জোগান দেবে বলে তার চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়বে না।
এদিকে কমিশন এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, নিরাপত্তা জামানত হিসেবে তিন মাসের পরিবর্তে দুই মাসের, ছয় মাসের পরিবর্তে চার মাসের বিলের সব পরিমাণ অর্থ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রিপেইড মিটার গ্রাহককে আর নিরাপত্তা জামানত দিতে হবে না। গ্যাসের বিলের কাগজে গ্যাসের মূল্যহার ঘনমিটারে ঘণ্টা প্রতি ও মাসিক অনুমোদিত লোড, চালনা পদ্ধতি, (দৈনিক কর্মঘণ্টা ও মাসিক কার্য দিবস), ডায়ভারসিটি ফ্যাক্টর ও সরবরাহ চাপ উল্লেখ করতে হবে। সব ধরনের গ্যাস ব্যবহারকারী সরবরাহ মাসের পরবর্তী মাসের শেষ তারিখ পর্যন্ত বিলম্ব মাশুল ছাড়া বিল পরিশোধ করতে পারবেন। এ সময়সীমার কমপক্ষে ১৫ দিন আগে গ্রাহকের কাছে বিতরণকারী কোম্পানিকে বিল পৌঁছাতে হবে। ক্যাপ্টিভ পাওয়ার ও শিল্প গ্রাহকের কো-জেনারেশন স্কিম অব্যাহতভাবে তিন মাস চালু থাকলে পরের তিন মাসের মধ্যে ওই গ্রাহকের তিন মাসের মোট বিলের (সারচার্জ বা বিলম্ব মাশুল ছাড়া) ওপর শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ছাড় (রিবেট) দেওয়া হবে।
চলতি বছরের ১৭ মার্চ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি (জিটিসিএল) কমিশনে সঞ্চালন ট্যারিফ বাড়ানোর আবেদন করে। এরপর ২০ মার্চ গ্যাস বিতরণ তিতাস, বাখরাবাদ, পশ্চিমাঞ্চল ও কর্ণফুলী এবং ২১ মার্চ জালালাবাদ ও সুন্দরবন গ্যাস বিতরণ কোম্পানি পৃথকভাবে তাদের বিতরণ চার্জসহ ভোক্তা পর্যায়ে গ্যাসের মূল্য বাড়ানোর আবেদন করে। এরপর জুন মাসে এসব আবেদনের প্রেক্ষিতে গণশুনানির আয়োজন করে কমিশন। এত কোম্পানিগুলো তাদের প্রস্তাবের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরে। সে সময় বিভিন্ন খাতে গড়ে গ্যাসের দাম ১২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল বিতরণ কোম্পানিগুলো।