গ্যাসের দাম বাড়ল ২২.৭৮% চলতি মাস থেকেই কার্যকর

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রাহক পর্যায়ে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে ২২ দশমিক ৭৮ ভাগ বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম পড়ছে গড়ে ১১ টাকা ৯১ পয়সা। আগে এ হার ছিল ৯ টাকা ৭০ পয়সা। চলতি মাস থেকেই বর্ধিত এ হার কার্যকর হয়েছে। গতকাল অনলাইনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

যদিও গণশুনানিতে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ২০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিল। তবে তার চেয়ে অধিকহারে মূল্যবৃদ্ধি ঘোষণা করেন বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক। এ সময় অন্যদের মধ্য অংশ নেন কমিশনের সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী, মোহাম্মদ বজলুর রহমান ও মো. কামরুজ্জামান।

নতুন মূল্যহার অনুযায়ী, আবাসিকে এক চুলার বর্তমান দাম ৯২৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৯০ টাকা ও দুই চুলায় ৯৭৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহকদের গ্যাসের বর্তমান দর প্রতি ঘনমিটার ১২ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৮ টাকা করা হয়েছে। অর্থাৎ মূল্য বৃদ্ধির হার যথাক্রমে সাত দশমিক শূন্য তিন, ১০ দশমিক ৭৭ ও ৪২ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

গ্যাসের মূল্যহার সবচেয়ে বেশি সার উৎপাদনে বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ২৫৯ শতাংশ। এছাড়া বৃহৎ শিল্পে ১১ দশমিক ৯৬ শতাংশ, মাঝারি শিল্পে ১০ দশমিক ০৯ শতাংশ, বিদ্যুতে ১২ দশমিক ৮১ শতাংশ, ক্যাপটিভে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, চা-বাগানে ব্যবহƒত গ্যাসে ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ এবং হোটেল-রেস্টুরেন্ট ও বাণিজ্যিক খাতে ১৫ দশমিক ৮৩ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়েছে। তবে বাড়ানো হয়নি সিএনজির দাম আর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে ব্যবহƒত গ্যাসের দাম ৩৬ দশমিক ৭৪ শতাংশ কমানো হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে আবু ফারুক বলেন, কমিশন আইনের ৩৪ এর ৬ ধারা অনুযায়ী পেট্রোবাংলার সঙ্গে বিতরণ ও সঞ্চালন কোম্পানিগুলো গত জানুয়ারিতে প্রথমদিকে আবেদন করেন। গত ২১ থেকে ২৪ মার্চ শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই শুনানিতে বিইআরসি কারিগরি কমিটি সবধরনের গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সুপারিশ করে। কমিশন আইনের ধারা ২২ (খ) এবং ধারা ৩৪ অনুযায়ী গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠন গ্যাসের দাম বৃদ্ধির পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

দাম বৃদ্ধির সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই খাতে চলতি অর্থবছর ১১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঘাটতি হবে। এই টাকার মধ্যে সরকার ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ভর্তুকি হিসেবে দেবে। অন্যদিকে জ্বালানি নিরাপত্তা তহবিল এবং কোম্পানিগুলোর লভ্যাংশ ৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা দেয়া হবে।

আবাসিকের মিটার গ্রাহকের গ্যাসের দাম বেশি বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, মিটারবিহীন দ্বিমুখো চুলায় আগে ৭৭ ও একমুখো চুলায় ৭৩ ঘনমিটার ধরে বিল নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় নিউজ ও সংশ্লিষ্ট বিতরণ কোম্পানিগুলোর তথ্যে দেখা গেছে মিটারযুক্ত গ্রাহকরা মাসে গড়ে ৪০-৪৫ ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহার করে। তাই মিটারবিহীন গ্রাহকদের গ্যাসের বিল একুমখো চুলায় ৫৫ ও দুই মুখো চুলায় ৬০ ইউনিট ধরে বিল নির্ধারণ করা হয়েছে। আর তাদের সঙ্গে সামঞ্জস্য করার জন্য মিটারযুক্ত গ্রাহকদের বিলের হার কিছুটা বেশি হারে বাড়ানো হয়েছে।

প্রি-পেইড মিটারের জুন মাসে রিচার্জ করা হবে কীভাবে জানতে চাইলে মো. মকবুল-ই-ইলাহি বলেন, ‘গ্রাহকদের দ্রæত রিচার্জ করে আপডেট করে নিতে হবে। আর মিটারবিহীনরা জুনের শেষে এই আদেশ অনুযায়ী বিল দেবেন।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহƒত গ্যাসের বিল প্রতি ঘনমিটার চার টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ টাকা দুই পয়সা, ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৩ টাকা ৮৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা, সার উৎপাদনে ৪ টাকা ৪৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১৬ টাকা, বৃহৎ শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা এবং মাঝারি শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১১ টাকা ৭৮ পয়সা করা হয়েছে। তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পে গ্যাসের দাম ১৭ টাকা ০৪ পয়সা থেকে কমিয়ে এখন করা হয়েছে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা। আর বণিজ্যিক (হোটেল রেস্টুরেন্টে) ২৩ টাকা থেকে ২৬ টাকা ৬৪ টাকা ও চা শিল্পে ১০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৯৩ পয়সা করা হয়েছে। সিএনজির গ্যাসের দাম ৪৩ টাকাই রাখা হয়েছে।

সিএনজির দাম বৃদ্ধি না করার যুক্তি হিসেবে বলা হয়, এর দাম বৃদ্ধি করলে পরিবহন খাতে এক ধরনের নৌরাজ্য শুরু হবে। সেটা বন্ধ করতেই সিএনজির দাম বাড়ানো হয়নি। এছাড়া সিএনজির দাম আগে থেকেই অনেক বেশি। আর সিএনজি ফিলিং স্টেশন মালিকরা বারবার এটির মূল্য বৃদ্ধি না করার জন্য অনুরোধ করেছেন। তাই সিএনজির দাম বৃদ্ধি করা হলো না। আর সিএনজির দাম বৃদ্ধির ফলে যদি ডিজেলের ব্যবহার বাড়ে তাহলে পরিবেশ দূষণও বাড়বে।

সার উৎপাদনে গ্যাসের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে বিইআরসির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু ফারুক বলেন, ‘সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে কোনো উৎপাদন পর্যায়ে সরকার আর ভর্তুকি দেবে না। ভর্তুকি যা প্রয়োজন তা কৃষক পর্যায়ে দেয়া হবে। সে কারণেই আগের মত সারকারখানাগুলোতে ভর্তুকিতে গ্যাস দেয়া হচ্ছে না।’

কারিগরি কমিটির সুপারিশের চেয়ে বেশি বৃদ্ধির বিষয়ে কমিশনের সদস্য মো. মকবুল-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘কারিগরি কমিটির প্রতিবেদনে কিছু কিছু জেনুইন খরচ অন্তর্ভুক্ত করেনি। যেমনÑএলএনজি আমদানির এলসি কমিশন, অ্যাডভান্সড ইনকাম ট্যাক্স। কমিশন সব বিষয় বিবেচনা করে দাম নির্ধারণ করেছে। সে কারণে তাদের ইভালুয়েশনের চেয়ে আমাদের খরচ একটু বেড়েছে।’

প্রসঙ্গত, গ্যাসে মূল্য এর আগে বৃদ্ধি করা হয়েছিল ২০১৯ সালের ১ জুলাই। তিন বছরের মাথায় তা আবার দাম বাড়ানো হলো।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০