ইসমাইল আলী: ২০১৮ সালে প্রথম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। ওই সময় বলা হয়েছিল বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে। এ যুক্তিতে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দামও বাড়ানো হয়। তবে সে সময় বিদ্যুৎ উৎপাদনে বর্ধিত গ্যাস দেয়া হয়নি। এমনকি গত বছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম প্রায় ১৭৯ শতাংশ বৃদ্ধির সময়ও বলা হয়েছিল বর্ধিত দামে এলএনজি আমদানি করে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ বাড়ানো হবে। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়ন করেনি পেট্রোবাংলা।
বাড়তি গ্যাস না দিলেও বর্ধিত দামে এলএনজি আমদানির দায় বিদ্যুতের ঘাড়ে চাপানো হয়েছে। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে বিদ্যুৎ খাতের সার্বিক উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পেট্রোবাংলার তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর দেশে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম ছিল প্রতি ঘনমিটার ৩ টাকা ১৬ পয়সা। ওই অর্থবছর গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গড় ব্যয় পড়ে ২ টাকা ৭২ পয়সা। তবে ২০১৯-২০ বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জুলাই মাসেই বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় প্রতি ঘনমিটার ৪ টাকা ৪৫ পয়সা। ওই সময় বিদ্যুৎ খাতে ন্যূনতম দৈনিক গড়ে এক হাজার ২৪৩ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট) গ্যাস সরবরাহের শর্ত দেয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।
যদিও বিদ্যুৎ খাতে কখনোই সে পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করেনি পেট্রোবাংলা। বরং বিভিন্ন সময় এর পরিমাণ ওঠানামা করেছে। দৈনিক গড়ে এক হাজার থেকে এক হাজার ১৫০ এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করা হতো বিদ্যুৎ খাতে। তবে কখনও কখনও তা আরও কমে এক হাজার এমএমসিএফের নিচেও চলে আসত। ফলে দাম বাড়ানো হলেও পর্যাপ্ত গ্যাস না পাওয়ায় নিয়মিতই বসে থাকে গ্যাসভিত্তিক বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র। এতে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।
এর প্রভাব দেখা যায় ২০১৯-২০ অর্থবছর। ওই অর্থবছর গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় তিন টাকা ২৪ পয়সা। পরের অর্থবছরও গ্যাসের দাম ৪ টাকা ৪৫ পয়সা অপরিবর্তিত ছিল। তবে গ্যাস সরবরাহ কিছুটা কমায় গড় উৎপাদন ব্যয় সামান্য বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ২৭ পয়সা। ২০২১-২২ অর্থবছর ১১ মাস (জুলাই-মে) অপরিবর্তিত ছিল গ্যাসের দাম। তবে অর্থবছরের শেষ মাস জুনে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ৫ টাকা ২ পয়সা।
বিদ্যুৎ খাতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ২০২১-২২ অর্থবছর গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয় গড় উৎপাদন ব্যয় সামান্য বেড়ে হয়েছে ৩ টাকা ৪৭ পয়সা। তবে ২০২২-২৩ অর্থবছর ফেব্রুয়ারিতে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে করা হয় ১৪ টাকা। দাম এক লাফে প্রায় ১৭৯ শতাংশ বাড়ায় গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে গত অর্থবছর গ্যাসচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৫ টাকা। আর চলতি অর্থবছর প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) এ ব্যয় আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ টাকা ৬ পয়সা।
এদিকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরবরাহকৃত গ্যাসের দাম প্রতি ঘনমিটারে আরও ৭৫ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। ফেব্রুয়ারি থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়েছে। এতে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে গ্যাসচালিত কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়বে প্রায় ৬৭৫ কোটি টাকা। এতে সার্বিকভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। আবার গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করে তা গ্রাহকের ঘাড়ে পরোক্ষভাবে চাপানো হচ্ছে।