Print Date & Time : 25 June 2025 Wednesday 7:40 pm

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবে ক্যাবের ছয় আপত্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন কোম্পানির গ্যাস ও বিতরণ মার্জিন বৃদ্ধির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সব পক্ষের অংশগ্রহণে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) গণশুনানি গতকাল শেষ হয়েছে। বিইআরসি’র পূর্বঘোষিত সূচি অনুযায়ী ১১, ১২, ১৯, ২০ ও ২১ জুন রাজধানীর টিসিবি ভবনে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। তবে ভোক্তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে গতকাল বিশেষ শুনানির আয়োজন করা হয়, যাতে পেট্রোবাংলা ও রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি (আরপিজিসিএল) অংশ নেয়।
তবে সব কোম্পানির মূল্য বৃদ্ধির আবেদন পর্যালোচনা করে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাবের বিপক্ষে ছয়টি নির্দিষ্ট আপত্তি তুলে ধরে। ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে তার যুক্তি তুলে ধরেন।
গণশুনানিতে বিইআরসির চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম, সদস্য আবদুল আজিজ খান, মিজানুর রহমান, রহমান মুর্শেদ ও মাহমুদ উল হক ভুঁইয়া ছাড়াও ক্যাবের জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম, পেট্রোবাংলা, আরপিজিসিএল, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, এলএনজি ব্যবহার এখনও শুরুই হয়নি। তাই এলএনজি-মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধি আইনসংগত নয়। মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তাব ও তার ওপর কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন শুনানিতে আসেনি। সবাই সিস্টেম গেইনে আছে। মূল্যহারে তা সমন্বয় হয়নি। অথচ তিতাস সিস্টেম লসে আছে, যা অগ্রহণযোগ্য। তা সমন্বয়ে চার্জ বৃদ্ধিতে আপত্তি করে ক্যাব। তিতাসের রিটার্ন হার ১৮ শতাংশ ধরা ও ভোক্তার ওপর ডিমান্ড আর্জ আরোপে আপত্তি রইল। আইওসি গ্যাস এসডি-ভ্যাটমুক্ত। মূল্যহারে তা যুক্ত করায় আপত্তি রইল। সংবিধানমতে কোম্পানিগুলো জনগণের। কোম্পানির মুনাফাও জনগণের। তা সরকারের ডিভিডেন্ড ধরে মূল্যহার নির্ধারণে আপত্তি রইল।
গতকালের গণশুনানিতে আরপিজিসিএল এলএনজি আমদানি ও রি-গ্যানিফিকেশন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এলএনজি আমদানির আপ-স্ট্রিম ব্যয় হিসেবে আরপিজিসিএলকে প্রতি ঘনমিটার ৪০ পয়সা প্রদানের প্রস্তাব করে।
তবে এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে ক্যাবসহ কয়েকটি ব্যবসায়ী সংগঠন। ক্যাবের উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, বিদ্যমান গ্যাস সংকটের মধ্যে গ্যাস বা বিতরণ চার্জ বৃদ্ধি অযৌক্তিক। তিনি বলেন, গ্যাস কোম্পানিগুলো যে পরিমাণগ্যাস পাওয়ার কথা,পেট্রোবাংলা তাদের সে পরিমাণ গ্যাস দিচ্ছে না। অথচ কোম্পানিগুলো ঠিকই গ্যাস না দিয়ে জনগণের কাছ থেকে টাকা নিচ্ছে। এটা সেবা নয়Ñশোষণ। কোম্পানিগুলো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো সাধারণ মানুষকে শোষণ করছে। ভোক্তারা এ অবস্থা থেকে মুক্তি চায়।
এ সময় তিনি কোম্পানিগুলোর ঘাটতি পূরণে গ্যাসের দাম না বাড়িয়েও ঘাটতি পূরণের একটি হিসাব উপস্থাপন করেন। সে হিসাবে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলএনজি-মিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার ভোক্তা পর্যায়ে ৯ টাকা ৯ পয়সা। বিদ্যমান মূল্যহার সাত টাকা ৩৮ পয়সা। ঘাটতি এক টাকা ৭১ পয়সা। মোট ঘাটতি পাঁচ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা। এ ঘাটতি মূল্যহার বৃদ্ধি বা সরকারি ভর্তুক্তি ছাড়া সমন্বয়ের জন্য তিনি প্রস্তাব করেন।
তিনি বলেন, তিতাসের সিস্টেম লস মূল্যহারে সমন্বয় করা না গেলে বছরে ২৫৬ কোটি সাত লাখ টাকা থাকবে, জিডিএফ রোধ করা হলে আসবে এক হাজার ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, সম্পদমূল্য এসডি-ভ্যাটমুক্ত ধরা হলে আসবে ৪১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, ইএসএফের অর্থ ভর্তুকি হিসেবে বিনিয়োগ করা হলে আসবে দুই হাজার ৭৫৭ কোটি ১০ লাখ টাকা, আইওসি গ্যাস এসডি ভ্যাটমুক্ত ধরা হলে আসবে ৮১৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা, তিতাসের রিটার্ন রেট ১৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ ধরা হলে আসবে ১৫ কোটি টাকা ও সরকারের ডিভিডেন্ড থেকে ঘাটতি সমন্বয় করা হলে আসবে ১১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে আসবে পাঁচ হাজার ৪৬৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। অর্থাৎ ঘাটতি মেটার পরও আরও ১৭ লাখ টাকা অবশিষ্ট থাকবে। তাই এ হিসাবটি বিবেচনায় নেওয়ার জন্য তিনি কমিশনের কাছে আহ্বান জানান।
অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, গ্যাস সংকট মোকাবিলা এলএনজি দিয়ে করা যাবে না। এটি আমাদের ঘাড়ে বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। সংকট নিরসনে নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের সমুদ্রসীমায় গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেখানে অনুসন্ধান চালাতে হবে।
বিইআরসি’র চেয়ারম্যান মানোয়ার ইসলাম বলেন, সবার যুক্তি বিচার-বিবেচনা করেই দামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। তিনি বলেন, গণশুনানির উদ্দেশ্য হলো ভোক্তাদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করা। তবে সে সঙ্গে কোম্পানিগুলোর বিষয়টিও বিবেচনা করতে হবে।