Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 4:39 pm

গ্যাসের দাম ৪৫ শতাংশ বাড়াল পাকিস্তান

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পেতে এবার গ্যাসের দাম ৪৫ শতাংশ বাড়িয়েছে পাকিস্তানের শাহবাজ সরকার। এক সপ্তাহের ব্যবধানে জ্বালানি তেলের দাম দুই দফা বাড়ানোর পর গত শুক্রবার দাম বাড়ানোর এ প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে আগামী ১ জুলাই থেকে। এছাড়া মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ গাড়ির জ্বালানি কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খবর: জিও টিভি।

পাকিস্তানের সম্প্রচারমাধ্যম জিও টিভি জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আনুমানিক রাজস্ব প্রয়োজনীয়তার (ডিইআরআর) ওপর ভিত্তি করে সুই নর্দান গ্যাস পাইপলাইনস লিমিটেডের (এসএনজিপিএল) জন্য ৪৫ শতাংশ ও সুই সাউদার্ন গ্যাস কোম্পানির (এসএসজিসি) জন্য গ্যাসের দাম ৪৪ শতাংশ বাড়ানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

নতুন ঘোষণা অনুযায়ী, এসএনজিপিএলের গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম ২৬৬ দশমিক ৫৮ রুপি বাড়িয়ে ৮৫৪ দশমিক ৫২ রুপি এবং এসএসজিসির গ্রাহকদের জন্য প্রতি ইউনিটে ৩০৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ বাড়িয়ে এক হাজার ৭ দশমিক ৯২ রুপি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে আইএমএফের সঙ্গে সমঝোতার আশায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে দুবার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। গত শুক্রবার থেকে দেশটিতে পেট্রলের দাম প্রতি লিটারে ৩০ রুপি বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২০৯ দশমিক ৮৬ রুপিতে। ডিজেলের দাম দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটার ২০৪ দশমিক ১৫ রুপিতে। কেরোসিন বিক্রি হচ্ছে ১৮১ দশমিক ৯৪ রুপিতে (বেড়েছে প্রায় ২৭ রুপি)। এর আগে গত ২৭ মে জ্বালানি তেলের দাম একই পরিমাণে বাড়ানো হয়েছিল। ঋণ পেতে ভোগ্যপণ্য থেকে ভর্তুকি তুলে নেয়ার শর্ত দিয়েছে আইএমএফ। এরই অংশ হিসেবে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানায় দেশটির সরকার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটের ঘাটতি কমানোর লক্ষ্যে এর আগে বিদ্যুতের বেসিক শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে পাকিস্তানের জাতীয় বিদ্যুৎশক্তি নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ (নেপ্রা)। শিগগির কার্যকর হবে তাদের এ সিদ্ধান্ত। দেশটিতে বর্তমানে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে বেসিক শুল্ক দিতে হয় ১৬ দশমিক ৯১ রুপি। এটি ৭ দশমিক ৯০ রুপি বাড়লে দেশটির জনগণকে প্রতি ইউনিটে শুল্ক দিতে হবে ২৪ রুপির বেশি, যা মূল্যস্ফীতি বাড়াবে।

এদিকে খরচ কমাতে পাকিস্তানে মন্ত্রী-আমলাদের পেট্রল কোটায় কাটছাঁট করা হয়েছে। অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে এখন কৃচ্ছ্রসাধন তথা সরকারি ব্যয় কমানোর পথে হাঁটছে সরকার। তারই অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ গাড়ির জ্বালানি তথা পেট্রল কোটা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। খাইবার পাখতুনখাওয়া ও সিন্ধু প্রদেশের সরকার এবং করাচি প্রশাসন কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ করা পেট্রলের কোটা এরই মধ্যে কমানোর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। পেট্রলের কোটা ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। সিন্ধু প্রদেশের চিফ মিনিস্টার (মুখ্যমন্ত্রী) মুরাদ আলি শাহ প্রাদেশিক মন্ত্রী ও সরকারি কর্মকর্তাদের পেট্রলের কোটা ৪০ শতাংশ কমানোর কথা ঘোষণা দেন। এ ছাড়া করাচি মেট্রোপলিটন করপোরেশনের (কেএমসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেট্রল কোটা ৪০ শতাংশ কমানোর ঘোষণা দেন করাচির প্রশাসক মুর্তজা ওহাব।

তুরস্ক সফররত প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন ১৫ মাসের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। এই সময়ের মধ্যে তার লক্ষ্য থাকবে মুদ্রাস্ফীতি ও দারিদ্র্যের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে পুনর্গঠন করাই আমার ভিশন। দারিদ্র্য দূরীকরণে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। ব্যয় কমানোর জন্য সরকারি খাতের বাজেটে কাটছাঁট করছি। সাধারণ মানুষ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন, সেসব মোকাবিলায় আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার ‘স্বল্পমেয়াদি’ পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান তিনি। তবে জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এলে তিনি বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের মতো বিষয়গুলো সমাধানে পূর্ণাঙ্গ উন্নয়ন পরিকল্পনা নেবেন। বিশ্ববাজারে জ্বালানির দামে উল্লম্ফনের কারণে তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে সরকার বাধ্য হয়েছে বলেও তিনি জানান।