গ্যাসের বর্ধমান চাহিদা মেটাতে এখনই ব্যবস্থা নিন

‘গ্যাস সংকটে বোরো মৌসুমে লোডশেডিংয়ের শঙ্কা’ শিরোনামে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা আমাদের উদ্বিগ্ন না করে পারে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) সূত্রের বরাতে আমাদের প্রতিনিধি জানাচ্ছেন, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া সেচ মৌসুম চলে মে পর্যন্ত। তার মধ্যে আবার সেচে বিদ্যুৎ চাহিদা একটু বেশিই থাকে এপ্রিল ও মে মাসে। গত বছর ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল সাত হাজার ৫৭১ মেগাওয়াট। এ চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজন দৈনিক এক হাজার ২৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। স্বভাবতই এর পুরোটা জোগান দেওয়া সম্ভব হয় না। পিডিবির হিসাবমতে, গত বছর দৈনিক এক হাজার ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হয়েছিল। পেট্রোবাংলা অবশ্য বলছে, তারা সরবরাহ করেছিল দৈনিক এক হাজার ১১৪ মিলিয়ন ঘনফুট। দুই সংস্থার হিসাবে তারতম্য থাকতে পারে। মোদ্দা কথা, সেচ বিদ্যুতের জন্য গ্যাসের জোগান যতটা প্রয়োজন ছিল, ততটা দেওয়া যায়নি। চলতি বছর সেচ মৌসুমে গড়ে ৯ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা থাকবে বলে অনুমান বিশেষজ্ঞদের। সেজন্য দেড় হাজার মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের দরকার হবে প্রতিদিন; যার মধ্যে অন্তত এক হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস না পেলেই নয়। চাহিদাটা পেট্রোবাংলাও জানে। কিন্তু সার্বিকভাবে সেচ মৌসুমে এক হাজার ২৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের বেশি সরবরাহ সম্ভব হবে না বলে জানাচ্ছেন তারা। তাতে করে সেচ মৌসুমে লোডশেডিংয়ের প্রকোপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে মানুষ ভোগান্তির শিকার তো হবেই, ক্ষতিগ্রস্ত হবে বোরো মৌসুমও।

কথা হলো, ওই সময় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অন্যান্য খাত থেকে কিছুটা বাড়তি গ্যাস সেচে সরবরাহ করা যেতে পারে। সে চেষ্টা হয়তো করবে পেট্রোবাংলা। কিন্তু তাতে কি গ্যাস সংকট মিটে যাবে চূড়ান্তভাবে? কেবল সেচ নয়, স্থানীয় শিল্প-কারখানা আর যানবাহনও ক্রমে গ্যাসের ওপর অধিক থেকে অধিকতর নির্ভরশীল হয়ে উঠছে। দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির স্বার্থে তা দরকারও। আবার এসবই স্বল্পমেয়াদি চাহিদার চাপ। দীর্ঘ মেয়াদে সুলভে ও নির্ভরযোগ্যভাবে গ্যাস সরবরাহ করতে না পারলে বিপাকে পড়বে জনগণ। অন্যদিকে বর্ধিত গ্যাস-বিদ্যুতের দামও যে কোনো সরকারের জন্য সুখদায়ক বলে বিবেচিত হয় না। এ অবস্থায় বর্ধিত গ্যাস চাহিদার স্বল্পমেয়াদি সমাধানের পাশাপাশি এর দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের প্রতিও নজর দেওয়া দরকার। অতীতে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি বাজার সম্পর্কে অনুমান করা কঠিন হওয়ায় অনেকে সেদিকে নজর দিতে চাইতেন না। তবু কমপক্ষে মধ্যমেয়াদি সমাধানে দৃষ্টি দেওয়া জরুরি। আন্তর্জাতিক জ্বালানি তেলের বাজার দীর্ঘদিন যাবৎ পড়ে রয়েছে এবং সেখানে আরও কয়েক বছর একই পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে বলে অনেকের অনুমান। সেক্ষেত্রে মধ্যমেয়াদি সমাধানের লক্ষ্যে পা বাড়াতেই পারেন নীতিনির্ধারকরা। লক্ষণীয়, অতীতে জাতীয় জ্বালানিনীতি ছিল না। বর্তমান শাসনামলে সেটি প্রণীত হয়েছে। এজন্য সরকার প্রশংসার দাবিদার। তবে নীতি প্রণয়নের পর অযথা কালক্ষেপণ কোনো কাজের কথা নয়। এদিকে সংশ্লিষ্টরা দৃষ্টি দেবেন আশা করি। একই সঙ্গে গ্যাসের মধ্যমেয়াদি কোনো পদক্ষেপ এরই মধ্যে গৃহীত হয়ে থাকলে তা জনগণের সামনে দৃশ্যমান করে তোলা ও জনকল্যাণে এর সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা উচিত।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০