দেশে জ্বালানির মূল উৎস প্রাকৃতিক গ্যাস। এ গ্যাস ব্যবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনে, সার কারখানায়, বিভিন্ন শিল্পকারখানায় এবং গৃস্থালির কাজে। গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে দ্রুতগতিতে। এ অবস্থায় গ্যাসের বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে সমস্যায় পড়তে হবে আমাদের। ২০১৫ সালে জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান মজুত গ্যাস আরও ১৬ বছর ব্যবহার করা যাবে। একই সময়ের মধ্যে ধীরে ধীরে গ্যাসের সরবরাহও কমে যাবে। এখন ২০২৩ সাল, আট বছর পার হয়েছে।
জ্বালানি শক্তি হিসেবে গ্যাসনির্ভর ক্ষুদ্র ও বৃহৎশিল্পের জন্য এটি সতর্কতামূলক বার্তা।
গতকাল শেয়ার বিজে ‘দেশে মজুত গ্যাসের ৬৮ শতাংশই শেষ’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গ্যাসের মজুত কতটা আছে, তাতে কত দিন চলবে, মজুত ফুরিয়ে গেলে বিকল্প কী হবেÑএসব বিষয় নিয়ে তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই বললেই চলে। এমনকি সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধ নিষ্পত্তির পরও গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে উদ্যোগ খুব একটা এগোয়নি। এমনই পরিস্থিতিতে বড় দুঃসংবাদ দিল জ্বালানি বিভাগের অধীন হাইড্রো কার্বন ইউনিট। সংস্থাটি বলছে, দেশে উত্তোলনযোগ্য গ্যাস মজুতের পরিমাণ ২৯ দশমিক ৯২৬৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ)। এর মধ্যে গত ৩০ জুন পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে ২০ দশমিক ৩৫৩৪ টিসিএফ, যা মজুতের ৬৮ শতাংশ। ওই সময় দেশে অবশিষ্ট গ্যাস মজুত ছিল ৯ দশমিক ৫৭৩১ টিসিএফ বা ৩২ শতাংশ। যদিও অবশিষ্ট মজুত থেকে কিছু গ্যাস উত্তোলন করা যাবে না। কারণ চাপ কমে এলে প্রতি ফিল্ডেই কিছু গ্যাস উত্তোলন করা যায় না।
গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে, বিকল্প জ্বালানি ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে এখনই। সাদা চোখে তিনি বিষয় বিবেচনায় নিতে হবে। এক. সব বিকল্প ব্যবস্থার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে হবে; দুই. নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে হবে; তিন. কোনোভাইে অপচয় করা চলবে না।
কোনো মজুতই অসীম নয়, অনন্তকাল ব্যবহার করা যাবে না; একসময় শেষ হবেই। আগে থেকেই বিশেষজ্ঞরা অভিমত দিয়ে আসছিলেন বড় ধরনের জ্বালানি সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশ। এ-সংক্রান্ত সব তথ্যই হতাশাব্যঞ্জক। যেমন, গত ১০ বছরে স্থলভাগে উল্লেখ করার মতো কোনো মজুদের সন্ধান পাওয়া যায়নি; জলভাগে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানেও তেমন সুখবর মেলেনি। ভূতাত্ত্বিকরা সুসংবাদ দিতে না পারলেও সংকট মোকাবিলায় গ্যাস মজুত বাড়াতে সারাদেশে বড় ধরনের জরিপ চালানো দরকার। বাপেক্সের পাশাপাশি বহুজাতিক কোম্পানি দিয়ে অফশোর ও অনশোরে ব্যাপক অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে হবে। সৌরশক্তি, বায়োফুয়েলসহ সারা বিশ্বে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এর মাধ্যমে প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরতা কমানো যেতে পারে। আমাদের দেশে সৌরশক্তির ব্যবহার থাকলেও বায়ুপ্রবাহ, বায়োগ্যাস, হাইড্রোজেনসহ অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার নেই বললেই চলে। এ সম্ভাবনার দিকসহ সব বিকল্প ব্যবহারের কথা ভাবতে হবে এখনই।