গ্যাস খাতে ভর্তুকির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করুন

গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির জন্য বিতরণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাব নিয়ে গণশুনানি করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত জানুয়ারিতে দেশের ছয়টি গ্যাস বিতরণ কোম্পানি গড়ে ১১৭ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। মঙ্গলবারের শুনানিতে বিইআরসি চেয়ারম্যান বলেছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ১১৭ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির প্র্রস্তাব বাস্তবসম্মত নয়। দুর্বল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে না। বিইআরসি চেয়ারম্যানের বক্তব্যে সাধারণ মানুষ আশা করতে পারে, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিতরণকারী কোম্পানিগুলোর পেশকৃত সব তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খ যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেবে। তাদের দাবি কতটা যৌক্তিক, তা নির্ণয়ে তাদের দেয়া তথ্য আদৌ গ্রহণযোগ্য কি না, তাও বিবেচনায় আনতে হবে। গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘এলএনজি ও গ্যাস খাতে ভর্তুকি নিয়ে ধোঁয়াশা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার তিন বছরে ভর্তুকি দিয়েছে আট হাজার ৪০০ কোটি টাকা, যার পুরোটা ব্যবহার হয়নি। পেট্রোবাংলার কাছে এখনও ভর্তুকি জমা রয়েছে দুই হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা।

মঙ্গলবার শুনানিতে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলেছে, সরকারি কোম্পানি পরিচালনার জন্য রাজস্ব চাহিদার বেশি টাকা দেয়ার সুযোগ নেই। বিতরণকারী কোম্পানি প্রকৃত তথ্য না দিয়ে দুর্বল তথ্য পেশ করছে, এটি দুঃখজনক। সরকার জনগণের দেয়া অর্থ থেকেই ভর্তুকি দেয়, সেটি ব্যবহারেও স্বচ্ছতা নেই। আবার গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি দাম নেয়ার প্রবণতা, এটি রীতিমতো অন্যায়। বর্তমানে সাধারণ মানুষ কী পরিমাণ কষ্টে আছে, কমবেশি আমরা সবাই জানি। টিসিবের সাশ্রয়ী দামের পণ্যের জন্য প্রতিদিন ট্রাকের সামনে ভিড় করছেন শত শত মানুষ। গণমাধ্যমে মানুষের দুঃখকষ্টের চিত্র উঠে আসছে। সংকটময় পরিস্থিতিতে ভোক্তার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি না করে বিকল্প ভাবা উচিত।

এলএনজি আমদানিতে প্রতি বছর বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার, গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহকৃত গ্যাসের দামেও দেয়া হচ্ছে ভর্তুকি। তবে তা ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহি না থাকায় জনসাধারণ কোনো সুফল পাচ্ছে না।

এলএনজি আমদানি ও গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহে লোকসান দেখিয়ে গ্যাসের দাম ১১৭ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। অথচ বিইআরসি কারিগরি কমিটিই বলছে, এলএনজি আমদানির ভর্তুকির পুরোটা ব্যবহার হচ্ছে না। এতে গত তিন অর্থবছর পেট্রোবাংলার কাছে এলএনজি আমদানি বাবদ সাশ্রয় হয়েছে প্রায় দুই হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছর শেষে প্রথম বছরের ঘাটতি মিটিয়েও পেট্রোবাংলার কাছে জমা ছিল দুই হাজার ৫৩৭ কোটি ৯১ লাখ টাকা। তবে এ অর্থ কোথায় ও কীভাবে আছে, তা শুনানিতে খোলাসা করেনি পেট্রোবাংলা। এমনকি ক্যাবের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে তথ্য চাওয়া হলেও তা জানানো হয়নি। এ থেকেই বোঝা যায় বড় ধরনের ঘাপলা ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা রয়েছে। গণশুনানির জন্য গত জানুয়ারিতে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব জমা দেয় সংস্থাটি। তবে সে প্রস্তাব অসম্পূর্ণ বলে উল্লেখ করে একাধিকবার চিঠি দেয় বিইআরসি। তবে তারা পূর্ণাঙ্গ তথ্য জমা দেয়নি। গ্যাসের দাম না বাড়ালে হয়তো মুনাফা কম হবে, সে যুক্তিতে দাম বৃদ্ধি করা উচিত হবে না। অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও জবাবদিহির সংস্কৃতি চালু করা গেলে ব্যয় অনেক কমবে, গ্যাস খাতে ভর্তুকির সদ্ব্যবহারও নিশ্চিত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০