Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 7:24 pm

গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে রাজধানীর ৮ মার্কেটে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পরিত্যক্ত ঘোষিত আটটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মার্কেটগুলো ভেঙে ফেলার প্রক্রিয়া হিসেবে এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে গতকাল বুধবার উত্তর সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘ওইসব মার্কেটের গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে এরই মধ্যে চিঠি দিয়েছি। তারা যেন অতিদ্রুত এসব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।’

মার্কেটগুলো দীর্ঘদিন ধরে ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে যেতে চান না, তারা আদালতেও গেছেন। কিন্তু ভবনগুলো অনিরাপদ থাকার কারণে আগুনের ঝুঁকি, ভেঙে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পরিত্যক্ত ভবন ভেঙে ফেলার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের। আমরা ভবনগুলোতে লাল কাপড় টানিয়ে দিয়েছি। ভবন থেকে ব্যবসায়ীদের সরিয়ে দিতে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে। তারা যদি না সরে, ম্যাজিস্ট্রেটরা সরিয়ে দেবে। এসব কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে। আগে মানুষের জীবন, তারপর ব্যবসা।’

মার্কেট ভেঙে ফেলা হলেও ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারেন, সেজন্য মার্কেটগুলোর আশপাশের খোলা জায়গা চিহ্নিত করে শেড করে দেয়া হবে এবং সিটি করপোরেশন এ বিষয়ে সহযোগিতা করবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন ৪৩ মার্কেটের মধ্যে ২০টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে গুলশান উত্তর কাঁচা মার্কেট, গুলশান দক্ষিণ পাকা মার্কেট, মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারের প্রথম ও দ্বিতীয় তলা, রায়েরবাজার মার্কেট, কারওয়ান বাজার ১ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার ২ নম্বর মার্কেট, কারওয়ান বাজার অস্থায়ী কাঁচা মার্কেট (কিচেন মার্কেট), কারওয়ান বাজার কাঁচামালের আড়ত মার্কেট ভবন ‘অতি নাজুক’হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

২০১৯ সালের ১ এপ্রিল মার্কেটগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে এসব মার্কেটে এখনও কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

গত মাসে বঙ্গবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এবং নিউ মার্কেটের আগুনের পর পরিত্যক্ত এসব মার্কেটের ভবন ভাঙতে তৎপর হয় ঢাকা উত্তর সিটি। মেয়র আতিকুল ইসলাম সে সময় বলেছিলেন, ঈদের পর পরিত্যক্ত ভবনগুলো ভেঙে ফেলা হবে।

দেশে কাপড়ের অন্যতম বড় মার্কেট বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে গত ৪ এপ্রিল ভোরে। তাতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওতাধীন বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের চারটি ইউনিটÑবঙ্গবাজার ইউনিট, গুলিস্তান ইউনিট, মহানগরী ইউনিট ও আদর্শ ইউনিট ভস্মীভূত হয়ে যায়। আগুন লাগার পর জানা যায়, মার্কেটটিকে ২০১৯ সালে ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছিল ফায়ার সার্ভিস। এরপর চার বছরে নোটিশ করা হয় আরও ১০ বার। ব্যবসায়ীরা কোনো গুরুত্ব দেননি। উল্টো টিনের মার্কেটটি ভেঙে বহুতল মার্কেট করার উদ্যোগ তারা ঠেকিয়ে দেন হাইকোর্টে গিয়ে।

সেই আগুন নিয়ে আলোচনা থামতে না থামতেই ১৫ এপ্রিল সকাল পৌনে ৬টার দিকে নিউ মার্কেট ফুটব্রিজ সংলগ্ন নিউ সুপার মার্কেটে (দক্ষিণ অংশ) আগুন লাগে। আগুনের সূত্রপাত তিন তলায় হলেও পরে তা দোতলায়ও ছড়ায়, ভস্মীভূত হয় কয়েকশ দোকান। বঙ্গবাজারের মতো এ মার্কেটকেও ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করেছিল ফায়ার সার্ভিস।

ওই মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পর ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘ফায়ার সার্ভিসের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই মার্কেটটি পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। মার্কেটটিতে অগ্নিঝুঁকি কমাতে কী কী করতে হবে, সে বিষয়ে তাদের কিছু নির্দেশনাও দেয়া হয়েছিল।’

তবে ব্যবসায়ীরা বলছিলেন, নোটিশ অনুযায়ী ধীরে ধীরে তারা নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছিলেন। কিছু জিনিসপত্রও কিনেছিলেন। তবে আগুন লাগার আগ পর্যন্ত পুরোপুরি নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়ে ওঠেনি।

বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পরও গাউছিয়া মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করেছিল ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এর কয়েকদিন পর নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের পরদিন ১৬ এপ্রিল ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঢাকার ৫৮ মার্কেট চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে নিউ মার্কেটের পাশে গাউছিয়া মার্কেটসহ নয়টি মার্কেটকে ‘অধিক ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া ১৪টি মার্কেটকে ‘মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ’ এবং ৩৫টি মার্কেটকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ তালিকায় রাখা হয়।

ফায়ার সার্ভিস পরিচালক (অপারেশন) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম ওই দিন এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, রাজধানীতে যে ৫৮টি ভবনকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তার সবই বাণিজ্যিক।

ফায়ার সার্ভিসের অধিক ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় গাউছিয়া মার্কেট ছাড়াও রয়েছে ফুলবাড়ীয়ার বরিশাল প্লাজা মার্কেট, টিকাটুলির রাজধানী নিউ রাজধানী সুপার মার্কেট, লালবাগের আলাউদ্দিন মার্কেট, চকবাজারের শাকিল আনোয়ার টাওয়ার, শহীদ উল্লাহ মার্কেট, সদরঘাটের শরীফ মার্কেট, মাশা কাটারা ২২ মার্কেট এবং সিদ্দিক বাজারের রোজ নীল তিস্তা মার্কেট।