গ্যাস বাজারের স্থিতিশীলতার কৌশল নির্ধারণে শুরু হয়েছে জিইসিএফ সামিট

** আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে চলছে জিইসিএফ সম্মেলন
** বৈশ্বিক গ্যাস বাজারে নতুন রূপে আর্বিভূত হতে যাচ্ছে আলজেরিয়া, রপ্তানি বৃদ্ধি হবে ইউরোপে

লজেরিয়া থেকে রহমত রহমান: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রতিনিয়ত গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। এতে গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোর উপর চাপ বাড়ছে। ফলে উৎপাদন ও সরবরাহ সক্ষমতা বাড়াতে এসব দেশ নতুন কৌশল নির্ধারণ করছে। তবে আঞ্চলিক ও ভূ-রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রভাব পড়ছে বৈশ্বিক গ্যাস বাজারে। ফলে গ্যাস বাজারের স্থিতিশীলতা, উত্তোলনকারী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা, বিনিয়োগ বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণে আলজেরিয়ায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী (২৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ২ মার্চ) সপ্তম গ্যাস এক্সপোর্টিং কান্ট্রিস ফোরামের (জিইসিএফ) সামিট।

গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোটের সামিট ২৯ নভেম্বর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার রাজধানীর আবদুল লতিফ রাহাল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে (সিআইসি) শুরু হয়েছে। সামিটের প্রথম দিন ২৯ ফেব্রুয়ারি গ্যাস বিশেষজ্ঞদের নিয়ে (গ্যাস এক্সপার্ট গ্রুপ) সভা শুরু হয়। এতে ১ মার্চ শুক্রবার সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মন্ত্রীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া সম্মেলনের দিকনির্দেশার বিষয় চূড়ান্ত করা হয়। অর্থাৎ গ্যাস নিয়ে জিইসিএফ এর সম্মেলনের সিদ্ধান্ত বা ‘আলজেরিয়া ডিক্লারেশন’ চূড়ান্ত করা হয়। আর সম্মেলনের শেষ দিন ২ মার্চ শনিবার মন্ত্রী পযায়ের সেই সভার সিদ্ধান্ত তুলে ধরবেন আলজেরিয়ার রাষ্ট্রপতি আবদুল মাজেদ তাবানী। সম্মেলনে এ জোটের সদস্যভুক্ত ও পর্যবেক্ষক দেশ ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে গণমাধ্যমকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন।

২৯ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আলজেরিয়ার শক্তি ও খনিজ মন্ত্রী মোহাম্মদ আরকাব বলেন, আলজেরিয়ায় অনুষ্ঠিত জিইসিএফ এর সম্মেলন গ্যাস উৎপাদন, সরবরাহ ও বাজারজাতকরণ নিয়ে বৈশ্বিক ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ এবং সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সমঝোতার বিষয়টি বিশেষভাবে আলোচিত হবে। যাতে বৈশ্বিক গ্যাস বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় থাকে এবং প্রতিবন্ধতা দূর হবে। এছাড়া ভবিষ্যতের চাহিদা তৈরি হওয়া ক্লিন এনার্জি বিষয়ে চ্যালেঞ্জগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। মন্ত্রী গণমাধ্যমকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার সেতুবন্ধন তৈরি করা। তিনি গ্যাস উত্তোলন, সরবরাহ ও বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণের উপর জোর দেন।

সামিটে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলা হয়, আলজেরিয়া বিশ্বের মধ্যে প্রাকৃতিক গ্যাস উত্তোলন ও সরবরাহকারী হিসেবে আর্বিভূত হতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইউরোপের দেশগুলো জন্য একটি প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহকারী গুরুত্বপূর্ণ দেশ হয়ে উঠছে। ফলে ইউরোপীয় দেশগুলোর রাশিয়ার গ্যাসের উপর নির্ভরশীলতা কমে আসবে। এছাড়া এই সামিট সদস্যভুক্ত দেশগুলোর বিনিয়োগ সংক্রান্ত সহযোগিতাকে আরো শক্তিশালী করবে, যাতে গ্যাস ক্রেতা দেশগুলোর জন্য উৎপাদন সক্ষমতাকে আরো বৃদ্ধি করা যায়।

অপরদিকে, আলজেরিয়ার নোভা নিউজের এক বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এবছরের জিইসিএফ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে লহিত সাগর দিয়ে গ্যাস সরবরাহের রুটের উপর ইরানপন্থী ইয়েমেনি হুতি বিদ্রোহীদের বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ করা হচ্ছে। ফলে জিইসিএফ এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ কাতার লহিত সাগর দিয়ে এলএনজি সরবরাহ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে, যার প্রভাব পড়বে ইউরোপীয় দেশগুলোর বাজারে। লহিত সাগরে চলাচলকারী যেসব বাণিজ্যিক জাহাজ ও তেলবাহী জাহাজ ইজরাইলের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে, সেসব জাহাজের উপর হুতি বিদ্রোহীরা মধ্য নভেম্বর থেকে হামলা শুরু করে। এই হামলার পরে সুইস খাল দিয়ে যেখানে প্রতিদিন ৭০টি জাহাজ পার হতো, সেখানে এখন তা অর্ধেকে নেমে এসেছে। এর প্রেক্ষাপটে সুইস খাল দিয়ে জাহাজ চলাচলের উপর থেকে গত বছরের জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজস্ব আদায় ৪৬ শতাংশ কমে গেছে। প্রতিবেদনে জিইসিএফ সামিট বিষয়ে বলা হয়েছে,

সূত্রমতে, গ্যাস রপ্তানিকারকদের জোট গ্যাস জিইসিএফ সদস্যভুক্ত ১২টি দেশ রয়েছে। দেশগুলো হলো আলজেরিয়া, বলিভিয়া, মিসর, নিরক্ষীয় গিনি, ইরান, লিবিয়া, নাইজেরিয়া, কাতার, রাশিয়া, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো, মরিতানিয়া এবং ভেনেজুয়েলা। সদস্যদেশগুলো ছাড়া আরও ৮টি দেশ সংগঠনটির পর্যবেক্ষক। দেশগুলো হলো অ্যাঙ্গোলা, আজারবাইজান, ইরাক, মালয়েশিয়া, মোজাম্বিক, নরওয়ে, পেরু এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। এ জোটের সদস্যভুক্ত ও পর্যবেক্ষক দেশগুলো বিশ্বে ব্যবহৃত গ্যাসের প্রায় ৭২ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাস সংরক্ষণ করে। আর আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যবহৃত গ্যাসের ৪৪ শতাংশ উৎপাদন করে। বৈশ্বিক এলএনজি রপ্তানির অর্ধেকেরও বেশি এসব দেশ রপ্তানি করে।

****

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০