শেয়ার বিজ ডেস্ক: ইংল্যান্ডে বিদ্যুতের দাম ১৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশেও আর এ খাতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। গতকাল রোববার রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নবনির্মিত ‘বিনিয়োগ ভবন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গ্যাস-বিদ্যুতের দাম নিয়ে তার এ মন্তব্য। সূত্র: বাসস।
বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহারে সবাইকে সাশ্রয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়া সরকারের পক্ষে ‘সম্ভব নয়’। ইংল্যান্ড ১৫০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে, এটা সবার মনে রাখতে হবে। আমরা কিন্তু সেই পর্যায়ে যাইনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ দেয়া যাবে ক্রয়মূল্যে। আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়? আর এ ক্ষেত্রে কেন দেব? আমরা ভর্তুকি দিচ্ছি কৃষিতে, খাদ্য উৎপাদনে।
এক কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১২ টাকা খরচ হয় জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সেখানে আমরা নিচ্ছি মাত্র ছয় টাকা। তাতেই আমরা অনেক চিৎকার শুনি। গ্যাস-বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেয়া যাবে, যদি সবাই ক্রয়মূল্য যা হবে, সেটা দিতে রাজি থাকে। তাহলে দেয়া যাবে। তাছাড়া আর কত ভর্তুকি দেয়া যায়।’
মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে সরকার যে বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছিল, আর তাতেই যে অর্থনীতির গতি সচল রয়েছে, সে কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। আমাদের লক্ষ্যই ছিল প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়ার। আমরা পৌঁছে দিয়েছি। জেনারেটরের ওপর যে ট্যাক্স ছিল, সেই ট্যাক্স আমি প্রত্যাহার করে নিয়েছি। শিল্প-কলকারখানায় যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, সেই ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে।’
অপরদিকে গতকাল আগারগাঁও ৪১২ কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত এনবিআর ভবন উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) দুই দিনব্যাপী রাজস্ব সম্মেলন উদ্বোধন করেন তিনি। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দেশবাসীকে তাদের কর দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে করদাতার সংখ্যা বাড়ানোর পাশাপাশি আরও কর সংগ্রহের প্রয়োজনীয়তার ওপর তিনি গুরুত্বারোপ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘শুধু রাজধানী বা শহরে নয়, সারাদেশে কর দিতে সক্ষম যারা, দয়া করে আপনার কর পরিশোধ করুন। সরকার আপনার পরিষেবা এবং কল্যাণে আপনার অর্থ ব্যবহার করবে।’
রাজস্ব ব্যবস্থাপনার উন্নয়নের লক্ষ্যে দেশের প্রথম দুই দিনব্যাপী ‘রাজস্ব সম্মেলন, ২০২৩’ উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, সমগ্র বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক মন্দা ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশের ওপরও পড়েছে। অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনীম এবং সদস্য ড. আব্দুল মান্নান শিকদার। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এনবিআর সদস্য প্রদ্যুৎ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে এনবিআরের কার্যক্রমের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী করের পরিমাণ বাড়ানোর পরিবর্তে করদাতার সংখ্যা সম্প্রসারণে আন্তরিকতা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে কাজ করতে এবং জনগণকে কর দিতে উদ্বুদ্ধ করতে সারাদেশে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আয়কর দানকারীর সংখ্যা এখনও অনেক কম। অনেকে একে ঝামেলা মনে করেন বা এজন্য সচেতনতার অভাবকে দায়ী করেন তিনি। আমি মনে করি এখানে কোনো জোর-জুলুম খাটাবেন না। মানুষকে কোনো ভয়-ভীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলা যাবে না। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। জনগণকে জানাতে হবে যে, আপনি যে কর দেন, সেটা কিন্তু আপনার কাজেই লাগে। আজ যে রাস্তাঘাট, পুল, ব্রিজ বা এই যে পোর্ট, কৃষি, শিক্ষা বা স্বাস্থ্য সব ক্ষেত্রেই যেগুলো সরকার করে দিচ্ছে, সবগুলোর সুফল ভোগ করছে জনগণ। আর যারা এ সুফলটা ভোগ করছে, তাদেরও তো কিছু দিতে হবে, রাষ্ট্র তো আর এমনি এমনি সবকিছু দিতে পারে না।
তিনি বলেন, যাদের কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতা রয়েছে, সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিস্টেম হয়ে গেলে তারা এ ফাঁকিটা আর দিতে পারবে না। এটা হলো বাস্তব কথা, সেটাও একটা বিরাট সুযোগ এনে দেবে। মানুষ যাতে কর ফাঁকি না দেয়, সেজন্য করের পরিমাণটাও এমন রাখতে হবে, যাতে প্রতিটা মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে দিতে পারে। মানুষকে জানাতে হবে, ব্যাপক প্রচার করা দরকার। করোনা অভিঘাত এবং এর পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে মানুষ কিছুটা আর্থিক সমস্যায় পড়লেও তার সরকারের শাসনামলে সার্বিক আর্থিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নত হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আয়কর, কাস্টমস ও মূসক বিভাগকে অটোমেটেড এবং ডিজিটালাইজড করার মাধ্যমে করদাতা, ব্যবসায়ী এবং জনগণকে সহজ ও নিরবচ্ছিন্নভাবে সেবাদানের জন্য বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। করদাতারা এখন বাংলাদেশ ব্যাংক বা সোনালি ব্যাংকে না গিয়ে ঘরে বসেই নিজ ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সুবিধাজনক সময়ে সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংকে কর পরিশোধ করতে পারছেন। এটার আরও ব্যাপক প্রচারণার ওপর প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী কাস্টমস ব্যবস্থাপনায় অনুসৃত ‘ইন্টারন্যাশনাল বেস্ট প্রাকটিসেস’ বিবেচনায় নিয়ে একটি নতুন কাস্টমস আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে কাজ করছে তার সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক, সোনালি ব্যাংকসহ সব তফসিলি ব্যাংক, বেপজা, সিসিআইএন্ডই, বিআরটিএ, আইএটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষসহ অনেক স্টেক হোল্ডারের সঙ্গে কাস্টমস বিভাগের কম্পিউটার সিস্টেমের ইন্টারফেসিং এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কেবল চট্টগ্রাম নয়, মোংলা বন্দর ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন স্থলবন্দরগুলোকেও তিনি এরসঙ্গে সম্পৃক্ত করার আহ্বান জানান। এর ফলে আমাদের বিরাট অঙ্কের রাজস্ব আয় হতে পারে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
