গ্যাস লিকেজ অ্যালার্ম স্নিফার  

মাসুদ আনসারী: ব্রিগেডিয়ার (অব.) মুস্তাফিজুর রহমানের বাসায় ভুলবশত একদিন গৃহকর্মী চুলার গ্যাস বন্ধ না করে চলে যান। দ্রুত গ্যাস ছড়িয়ে পড়তে থাকে রান্নাঘর থেকে পুরো বাসায়। কিছুক্ষণ পর রান্নাঘরে থাকা স্নিফার অ্যালার্ম দিতে শুরু করে। এতে বাসার সবাই সতর্ক হয়ে যান। দ্রুত চুলা বন্ধ করে দরজা-জানালা খুলে দেন। সিলিং ফ্যানের সুইচ অন করে দেন। স্নিফারের অ্যালার্ম বন্ধ হয়ে যায়। তারা বুঝতে পারেন, এখন বাসার বাতাসে গ্যাসের অস্তিত্ব নেই। স্নিফারের কল্যাণে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পান তারা।

কী এই স্নিফার

গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা কমাতে জলপাই ইলেকট্রনিকসের মেড ইন ঢাকার একটি উদ্ভাবন স্নিফার। এর মধ্যে একটি শক্তিশালী সেন্সর রয়েছে, যা সার্বক্ষণিক গ্যাসের গন্ধ শোঁকে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত গ্যাসের উপস্থিতি টের পেলেই অ্যালার্ম বেজে ওঠে। কোনো বদ্ধ বাসায় প্রায় ৭০০ পিপিএম (পার্ট পার মিলিয়ন) গ্যাস ছড়িয়ে থাকলে এটি বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। এক্ষেত্রে স্নিফার মাত্র ২০০ পিপিএম গ্যাসের অস্তিত্ব পেলেই বিপ করে আওয়াজ দেয়। শুধু গ্যাসের চুলা থেকে গ্যাস নির্গত হলেই নয়, সঞ্চালন লাইন থেকে গ্যাস বের হলেও ডিভাইসটির অ্যালার্ম বেজে উঠবে। এছাড়া নেইলপলিশ রিমুভার, তারপিন, অ্যারোসল ক্যানসহ যে কোনো ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট গ্যাসকেও চিহ্নিত করতে পারে ডিভাইসটি।

উদ্ভাবনের গল্প

প্রায়ই গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা ঘটছে। গ্যাসের চুলা লিকেজজনিত দুর্ঘটনা নিয়ে প্রায়ই গণমাধ্যমে বেশ আলোচনা হয়। এই মারাত্মক সমস্যাটি সমাধানের জন্য কাজ শুরু করেন তরুণ উদ্ভাবক ও জলপাই ইলেকট্রনিকসের সিইও রেজাউল কবির। তিনি বলেন, ‘গ্যাসজনিত দুর্ঘটনা থেকে মানুষের জীবন বাঁচাতে ছোট্ট একটি গ্যাস  লিকেজ অ্যালার্ম বানাই।’ এর পেছনে দীর্ঘদিন গবেষণা করতে হয়েছে। কিছুদিন পরপর উন্নত করা হচ্ছে স্নিফার। বর্তমানে ডিভাইসটি শুধু অ্যালার্ম দিয়ে সংকেত দিলেও ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষকে মোবাইল ফোনে এসএমএস দিয়েও জানাতে পারবে তথ্য। থাকবে স্নিফারের জন্য মোবাইল অ্যাপ। অ্যাপ থেকে ডিভাইসটির পাঠানো গ্যাসজনিত সমস্যাসহ আপডেট তথ্য সব সময় জানা যাবে। অ্যালার্মটি রফতানি করা সম্ভব।

কোথায় স্থাপন করবেন

মূলত রান্নাঘরে ব্যবহারের কথা বিবেচনা করেই ডিভাইসটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। সুতরাং রান্নাঘরে স্থাপন করলেই সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে। স্নিফারকে রান্নাঘরের চুলার বিপরীত বা পাশের দেয়ালে স্থাপন করতে হবে। মেঝে থেকে কমপক্ষে ছয়-সাত ফিট ওপরে ও চুলা থেকে ১৫ ফুটের কম দূরত্বে স্থাপন করলে ভালো।

যেভাবে বুঝবেন সচল আছে স্নিফার

স্বাভাবিক অবস্থায় স্নিফারের সেন্সর সচল থাকলে এর ওপরের জলপি’র (ঔড়ষচর) সাদা রঙের লোগোটি জ্বলজ্বল করে জ্বলবে। ঘরে অতিরিক্ত গ্যাসের উপস্থিতি টের পেলে লোগোটি হালকা লাল রঙের আভা ছড়িয়ে বিপ বিপ করে হাই-পিচ অ্যালার্ম বাজিয়ে সতর্ক করবে।

স্নিফারের সফলতা

গত ২৫ মে ‘ন্যাশনাল ডেমো ডে’তে স্টার্টআপ প্রতিযোগিতায় তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে স্নিফার। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ আয়োজিত ‘আইসিটি ইনোভেশন প্রোগ্রাম-২০১৭’তে সেরা উদ্ভাবন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। জলপাই ইলেকট্রনিকসের সঙ্গী হয়েছে মোবাইল ফোন কোম্পানি গ্রামীণফোন ও ইউরোপীয় হাইটেক প্রতিষ্ঠান মাইক্রো-এজ।