গ্যাস সংকটের সমাধানে টেকসই ব্যবস্থা নিন

চলমান গ্যাস সংকটের জন্য দুঃখ প্রকাশ করে মার্চের মধ্যে সংকট সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী। বলেছেন, ‘বিবিয়ানায় আরও এক দশমিক ৬ টিসিএফ (ট্রিলিয়ন কিউবিক ফিট) গ্যাসের নতুন মজুত পাওয়া গেছে। সেটি আগামী কিছু দিনের মধ্যে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’ মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী খবর জানানোর পাশাপাশি চলমান গ্যাস সংকটের কারণও ব্যাখ্যা করেন।

আমরাও জানি, প্রতি বছর শীতকালে পাইপলাইনে পানি জমার কারণে গ্যাসের সংকট সৃষ্টি হয়। এছাড়া এই সময়ে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় গ্যাসের চাহিদাও বেড়ে যায়। এবার সেই সংকটের সঙ্গে সরবরাহের অপ্রতুলতা যোগ হওয়ায় গ্যাস সংকট বেড়েছে।

সংকট যে কারণেই হোক,  জনগণের দুর্ভোগ কমাতে সরকারকে বিকল্প সব ব্যবস্থা নিতে হবে। শিল্প খাতেও গ্যাসের সংকট চলছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু  সেভাবে হয়তো মোকাবিলার প্রস্তুতি নেয়া হয়নি। মনে রাখতে হবে গ্যাস সংকট অতীতের যেকোনো সংকটকে ম্লান করে দিতে পারে। কেননা দেশে বর্তমানে মোট ব্যবহƒত বাণিজ্যিক জ্বালানির ৫০ শতাংশ হলো দেশীয় গ্যাসনির্ভর। দেশীয় গ্যাসের সরবরাহ ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ার আশঙ্কার বিপরীতে বড় ধরনের গ্যাসের মজুত বাড়ানো বা অবশিষ্ট মজুত থেকে বড় ধরনের উৎপাদন বাড়ানোর সর্বাত্মক কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। অবশ্য রাষ্ট্রীয়  প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা বাপেক্সের মাধ্যমে কয়েকটি নতুন অনুসন্ধান কূপ, উন্নয়ন কূপ ও ওয়ার্ক ওভার কূপ খননের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু তা সংকট মোকাবিলায় যথেষ্ট নয়। দেশের প্রতিটি উন্নয়নকাজের সঙ্গে গ্যাস কোনো না কোনোভাবে সম্পৃক্ত। তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ব্যয়বহুল ব্যবস্থাপনা এবং দেশের নিজস্ব গ্যাস জোগান বজায় রাখা সাপেক্ষে তা পরিহার বা সীমিত করাই বাঞ্ছনীয়। আমদানি করা এলএনজিতে সাময়িকভাবে হয়তো  সমাধানÑকিন্তু স্থায়ী ও টেকসই উপায় নয়।

গ্যাস উৎপাদনের হার ধীরগতিতে কমতে থাকলেও তার প্রভাব হয় ব্যাপকতর। কারণ, ইতোমধ্যে দেশের শিল্প, বিদ্যুৎ ও অন্যান্য খাতে গ্যাসের ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এটি আলোচনায় আসে যখন সরকার বিদ্যুৎ, শিল্প ও আবাসিক খাতে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ বা সীমিত করে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশের মতো বদ্বীপ গঠিত গ্যাস সম্ভাবনাময় এলাকায় গ্যাস সংকটের কারণ খুঁজে পান না।  তাদের প্রশ্নÑকেন অতীতে বছরের পর বছর গ্যাসের মজুত কমে যাওয়ার বিপরীতে কমে যাওয়া গ্যাসটুকু পূরণ করার জন্য যথেষ্ট অনুসন্ধানকাজ করা হয়নি। দেশের মূল ভূখণ্ডের কেবল পূর্বাংশে এলাকাবিশেষে অনুসন্ধান জোরালো দেখা গেলেও দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিম ও উত্তর অংশে গ্যাসের অনুসন্ধান ছিল সামান্য। এমনকি পূর্বাংশের পার্বত্য চট্টগ্রামও জোরালো অনুসন্ধানের আওতায় আসেনি। এ অবস্থায় দেশের জ্বালানি সংকট কাটিয়ে ওঠা বা তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কার্যক্রম হাতে নিতে হবে এবং তা যত সম্ভব দ্রুত। ব্যাপকভাবে আমদানি করা এলএনজি-নির্ভরতা যে আর্থিক চাপ সৃষ্টি করবে, তা সরকার ও জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে; এটি বিবেচনায় রেখে সরকার কার্যকর ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০