গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামে উৎপাদন ব্যাহত

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামে প্রতি বছর আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে বাড়ছে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা। এসব খাতে সারা বছরের গ্যাসের চাহিদা রয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার, যার বিপরীতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) সরবরাহ করছে ২৬০ মিলিয়ন ঘনমিটার। ফলে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ প্রায় ৪০ শতাংশ কম হওয়ায় সংকটে পড়ে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে উৎপাদন সময় ও ব্যয় বেশি লাগছে। এমনকি শিপমেন্টও বাতিল হচ্ছে।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা বলেন, করোনা সংক্রমণের পর ব্যবসায় একটা গতি এসেছিল। কিন্তু চলতি বছরের এপ্রিরের পর থেকে বাজারের ছন্দপতন হয়। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও ডলারের সংকট দেখা দেয়। এতে আমদানি ও রপ্তানি কমতে শুরু হয়, যেজন্য সাম্প্রতিক সময়ে সংকট আরও প্রকট হতে থাকে। বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলায় শিল্প-কারখানাগুলোয় সপ্তাহে একদিন বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়। পাশাপাশি গ্যাস সংকটের কারণে বিদ্যুৎকেন্দ্র, পোশাক, গ্যাস, সিমেন্ট, সিরামিক প্রভৃতি কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে সময়মতো উৎপাদন করা যাচ্ছে না। এ কারণে পোশাক কারখানাসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।  এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানের শিপমেন্ট বাতিল হচ্ছে।    

কেজিডিসিএল সূত্রে জানা যায়, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে চট্টগ্রামে আবাসিক, শিল্প-কলকারখানা, বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনের ছয় লাখ গ্রাহকের কাছে তিন হাজার ৯৫ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সরবরাহ করা হয়। এর মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্রে গ্যাস পাওয়া যায় মাত্র ১০ মিলিয়ন ঘনমিটার। আর বাকি তিন হাজার ৫২ মিলিয়ন ঘনমিটার বিদেশ থেকে আমদানিকৃত এলএনজি গ্যাস থেকে সংগ্রহ করা, যা গত অর্থবছরে ছিল তিন হাজার ১০২ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস। অর্থাৎ ৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার গ্যাস সংগ্রহ কমেছে।

২০২১-২২ অর্থবছরে মাসভিত্তিক আমদানির পরিমাণ ছিল জুন মাসে ২৬৫ দশমিক ৬৬ মিলিয়ন ঘনফুট, মে মাসে ২৭৫ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ঘনফুট, এপ্রিলে ২৭০ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট, মার্চ মাসে ২৭৭ দশমিক ৪৭ মিলিয়ন ঘনফুট, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৩ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট, জানুয়ারি মাসে ২৩৯ দশমিক ১২ মিলিয়ন ঘনফুট, ডিসেম্বর মাসে ২৩৪ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন ঘনফুট, নভেম্বর মাসে ২৪২ মিলিয়ন ঘনফুট, অক্টোবর মাসে ২৭০ দশমিক ১৮ মিলিয়ন ঘনফুট, সেপ্টেম্বর মাসে ২৪৬ দশমিক ৪১ মিলিয়ন ঘনফুট, আগস্টে ২৬৮ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন ঘনফুট এবং জুলাইয়ে ২৫৮ দশমিক ৩৫ মিলিয়ন ঘনফুট।

চট্টগ্রামের কেজিডিসিএলের একাধিক গ্রাহক শেয়ার বিজকে বলেন, শিল্প খাতে প্রয়োজন অনুসারে গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছি না। আবার শিডিউলিং করে কারখানা বন্ধ রাখা হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। অথচ এ কঠিন সময়ে আমাদের সরবরাহ লাইন ঠিক রাখার জন্য প্রতিদিন কারখানা চালু রাখা দরকার। তা না হলে মন্দা পড়ে সব শেষ হবে।

এ বিষয়ে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সহসভাপতি রাকিবুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, চট্টগ্রামের চাহিদার তুলনায় গ্যাস সরবরাহ কম। আবার জোনভিত্তিক তো একদিন বন্ধ থাকে। এ কারণ আমাদের ইপিজেড শিল্পাঞ্চল ও অক্সিজেন জোনে ১৫০-এর অধিক পোশাক কারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এ কারণে অনেক প্রতিষ্ঠানের সময় মতো শিপমেন্ট হচ্ছে না। আর গত অক্টোবর মাসে পোশাক রপ্তানিতে মাইনাস প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ মাসে আরও মাইনাস হবে। আগামী মার্চের আগে রপ্তানি ভালো হওয়ায় কোনো সম্ভাবনা দেখছি না।

এ বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ মাজেদের দপ্তরের যোগাযোগ করা হলে জানানো হয় তিনি অফিসে আসেননি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে সংস্থাটির মহাব্যবস্থাপক (হিসাব) খায়রুল হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি।  

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০