বিশেষ প্রতিনিধি: ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে ১২ মে দিবাগত রাত (১২টার পর) থেকেই মহেশখালীর ভাসমান দুটি টার্মিনাল থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে পাইপলাইনে গ্যাসের সরবরাহ কমে, যার প্রভাব পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। এক দিনের ব্যবধানে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ কমেছে ১৬৪ এমএমসিএফ (মিলিয়ন ঘনফুট)। এতে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে এক হাজার ৪৫৭ মেগাওয়াট। ফলে সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ে রেকর্ড সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) তথ্যমতে, গত ১২ মে দেশে গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৫০৪ দশমিক ৫০ এমএমসিএফ। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা হয়েছিল এক হাজার ৪৭ দশমিক ৭০ এমএমসিএফ। তবে ১৩ মে গ্যাস সরবরাহ কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ১৫৭ দশমিক ৯০ এমএমসিএফ। এর মধ্যে বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা হয় ৮৮৩ দশমিক ৬ এমএমসিএফ। অর্থাৎ এলএনজি বন্ধ থাকায় ১৩ মে গ্যাস সরবরাহ কমে যায় ৩৪৬ দশমিক ৬০ এমএমসিএফ।
এদিকে গ্যাস সরবরাহ কমার প্রভাব সরাসরি পড়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনে। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, ১২ মে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল রাত ৯টায় ১৩ হাজার ৮০৬ মেগাওয়াট। আর ওইদিন দুপুর ১২টায় উৎপাদন করা হয় ১১ হাজার ৭৬৪ মেগাওয়াট। আর ১৩ মে রাত ৯টায় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩৪৯ মেগাওয়াট। ওইদিন দুপুরে (১২টায়) বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৭৪৯ মেগাওয়াট।
অপরদিকে ১৩ মে সকাল ৯টায় সর্বনি¤œ উৎপাদন করা হয় ৯ হাজার ৭৬৬ মেগাওয়াট। ১২ মে সকাল ৯টায় সর্বনি¤œ উৎপাদন ছিল ১০ হাজার ৭৮৪ মেগাওয়াট। ওইদিন সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল রাত ১২টায় এক হাজার ২৫৩ মেগাওয়াট। তবে সারাদিনের মধ্যে সর্বনি¤œ ১২৯ মেগাওয়াট লোডশেডিং হয় সন্ধ্যা ৬টায়। আর ১৩ মে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয় রাত ১২টায় দুই হাজার ৯২৫ মেগাওয়াট এবং সর্বনি¤œ লোডশেডিং হয় সকাল ৭টায় এক হাজার ২৬৭ মেগাওয়াট।
পিডিবির তথ্য ঘেঁটে দেখা যায়, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ লোডশেডিং ছিল ১৩ মে। এর আগে গত ১৫ এপ্রিল দুই হাজার ৫০৬ মেগাওয়াট (সর্বোচ্চ) লোডশেডিং ছিল। ওইদিন সর্বোচ্চ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৯৬৩ মেগাওয়াট। আর গত বছর ৮ অক্টোবর (তৃতীয় সর্বোচ্চ) লোডশেডিং হয় দুই হাজার ১০৭ মেগাওয়াট। সেদিন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ২৮৯ মেগাওয়াট।
জানতে চাইলে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, আগের রেকর্ড ভাঙলেও ১৩ মের সর্বোচ্চ লোডশেডিংয়ের ধরনগত পার্থক্য আছে। এর আগে গত মাসে বা গত বছর অক্টোবরে সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছিল মূলত জ্বালানি সংকটের কারণে। তবে ১৩ মে ঘূর্ণিঝড় মোখার জন্য গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে। তবে প্রতি ঘটনাই দেশের দুর্বল জ্বালানি সরবরাহ সক্ষমতা নির্দেশ করে।
পেট্রোবাংলার তথ্যমতে, তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় ১২ মে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস সরবরাহ করা হয় ৩৫১ দশমিক ১০ এমএমসিএফ। তবে ১৩ মে তা কমে দাঁড়ায় ২২৫ দশমিক ৬০ এমএমসিএফ। গ্যাস সংকটে ওইদিন সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলে। কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির অধিভুক্ত এলাকায় ওইদিন বিদ্যুৎ খাতে সরবরাহ করা হয় মাত্র শূন্য দশমিক ৭০ এমএমসিএফ গ্যাস। আগের দিন এর পরিমাণ ছিল ৫০ দশমিক ৬০ এমএমসিএফ। গ্যাস সংকটে চট্টগ্রামের চারটি বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যায় গতকাল। তবে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোয় গ্যাস সরবরাহ মোটামুটি অপরিবর্তিত ছিল।