গ্যাস সংকট নিরসনে সর্বাত্মক উদ্যোগ নিন

কক্সবাজারের মহেশখালীতে ভাসমান তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনালে কারিগরি ত্রুটির কারণে শুক্রবার বৃহত্তর চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহে বিপর্যয় ঘটেছে। বিতরণ কোম্পানির আগাম বিজ্ঞপ্তি ছাড়া হঠাৎ বিপর্যয়ে দিনভর ছিল দুর্ভোগ। খাবারের কষ্টে পড়েন সাধারণ গ্রাহকরা। ব্যাহত হয় শিল্প-কারখানার  উৎপাদন। দেশের পূর্বাঞ্চলে এই বিপর্যয় দুর্ভোগে পড়ে কমপক্ষে সাড়ে ১১ লাখ গ্রাহক। এর বাইরে  মধ্যে কর্ণফুলী বিতরণ কোম্পানির (কেজিডিসিএল) আওতাধীন চট্টগ্রাম, বাখরাবাদের কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী ও ল²ীপুর জেলা রয়েছে। এমনকি ঢাকার পাশের তিতাসের আওতাধীন নারায়ণগঞ্জও এই সংকটের মধ্যে পড়ে। এসব জেলায় জাতীয় সঞ্চালন লাইনের পাশাপাশি এলএনজির বড় অংশ সরবরাহ করা হয়। চট্টগ্রাম যেহেতু পুরোটাই এলএনজি-নির্ভর, তাই সেখানে গ্যাস সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ ছিল।

এত দিন বলা হতো শীতকালে রাজধানীসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করে। গ্যাস সংকট হলে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হয়; অন্যদিকে বাসাবাড়িতে রান্নাবান্নায়ও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এখন দেশবাসী জানল গ্যাস সংকটের আওতা বেড়েছে। এখন চট্টগ্রামে, কখন অন্য এলাকায়; তাই বলা মুশকিল।

আমদানি করা এলএনজি রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহের জন্য মহেশখালীতে দুটি ভাসমান টার্মিনাল আছে। টার্মিনাল দুটি বিতরণ কোম্পানিগুলোকে এলএনজি সরবরাহ করে। পাঁচ বছর পরপর এগুলো রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয়। গত ১ নভেম্বর মার্কিন এক্সিলারেট এনার্জি টার্মিনাল রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গভীর সমুদ্রে সরিয়ে নেয়া হয়। সামিট এলএনজি টার্মিনালও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরিয়ে নিতে হয়। টার্মিনাল যথাসময়ে চালু করতে না পারলে মূলত বিপর্যয় ঘটে। এসব সাধারণ মানুষ ও ভোক্তাদের জানার কথা নয়। কেন গ্যাস সংকট হচ্ছে, এটি সরকার ও নীতিনির্ধারকরা জানে। গ্যাস সংকটের স্থায়ী ও টেকসই সমাধানে যে তারা অনেক পিছিয়ে, এটিও জানেন। তারা কি গ্যাস অনুসন্ধান করবেন নাকি বিদেশ থেকে বেশি দামে গ্যাস কিনবেনÑএত সব সাধারণ মানুষ জানে না। কিন্তু গ্যাস সংকটে তাদেরই ভুগতে হয় বেশি। কোনো পর সংশ্লিষ্ট সংস্থা দুঃখ প্রকাশ করে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে জানায়, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে দ্রæত ত্রæটি সারানোর কাজ করছে মন্ত্রণালয়।

প্রশ্ন ওঠে এ ধরনের ভয়াবহ বিপর্যয় তো যে কোনো সময় ঘটতে পারে, আমরা সেটি মেকাবিলায় কতটা প্রস্তুত! গ্যাস কোনো বিলাসী পণ্য নয়। এটি স্বাভাবিক জীবনযাত্রা, শিল্প ও উন্নয়নের অপরিহার্য উপাদান। এটির কোনো বিকল্পই নেই।  গ্যাস না থাকলে কারা কেমন দুর্ভোগ পোহান, তা আমাদের জানা। শিল্পোদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করেছেন; সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে কষ্টের কথা সরকারকে জানাচ্ছেন।

গ্যাসের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি কাচশিল্পে। কাচশিল্পের চুল্লি চালু রাখতে দরকার হয় গ্যাস। ইস্পাত কারখানায়ও উৎপাদন সচল রাখতে দরকার গ্যাস। সিমেন্ট কারখানায় নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য গ্যাসের দরকার হয়। এ ছাড়া কাঁচামাল সø্যাগ শুকানোর জন্য গ্যাসের দরকার। দেশের প্রাকৃতিক গ্যাস হোক,  কিংবা আমদানিকৃত এলএনজি হোক, গ্যাস সংকটের টেকসই সমাধানে দ্রæত উদ্যোগ নেয়া হবে বলেই প্রত্যাশা।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০