Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 4:04 pm

গ্রামীণফোনের রাজস্ব আয় বাড়ল আট শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রতিকূল নিয়ন্ত্রণমূলক পরিবেশ সত্ত্বেও বিদায়ী বছর সন্তোষজনক ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্রামীণফোন। ২০১৯ সালে ১৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে গ্রামীণফোন, যা আগের বছরের তুলনায় আট দশমিক এক শতাংশ বেশি। ২০১৯ সালে ইন্টারনেট সেবা খাত থেকে আয় বেড়েছে শতাংশ। একই সময়ে ভয়েস থেকে আয় বেড়েছে আট দশমিক পাঁচ শতাংশ।

২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) কোম্পানিটির মোট রাজস্ব দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬২০ কোটি টাকা, যা আগের বছর একই সময়ের তুলনায় চার দশমিক দুই শতাংশ বেশি। কোম্পানির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানা গেছে।

এদিকে বিদায়ী বছরে প্রতিষ্ঠানটির কর-পরবর্তী মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালে এ প্রতিষ্ঠানের মুনাফা হয়েছে তিন হাজার ৪৫০ কোটি টাকা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল তিন হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৬৬ কোটি টাকা। মুনাফার পাশাপাশি ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি আয়ও কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালে শেয়ারপ্রতি আয় হয়েছে ২৫ টাকা ৫৬ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ২৬ দশমিক শূন্য চার টাকা।

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ২০১৯ সালের শেষ প্রান্তিকে সাত লাখ নতুন গ্রাহক গ্রামীণফোন নেটওয়ার্কে যোগ দিয়েছে। ২০১৯ সাল শেষে আগের বছরের তুলনায় পাঁচ দশমিক এক শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে মোট গ্রাহক দাঁড়িয়েছে সাত কোটি ৬৫ লাখ। মোট গ্রাহকের মধ্যে চার কোটি ছয় লাখ বা ৫৩ দশমিক এক শতাংশ গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারকারী। ২৫ দশমিক চার শতাংশ মার্জিনসহ ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে মোট মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯২০ কোটি টাকা। শেষ প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ছয় টাকা ৮১ পয়সা।

গ্রামীণফোনের সিইও মাইকেল প্যাট্রিক ফোলি বলেন, ‘রেগুলেটরি দৃষ্টিকোণ থেকে ২০১৯ সাল গ্রামীণফোন একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার করেছে। নানা ধরনের বিধিনিষেধ আমাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত করেছে। তবে চমৎকারভাবে বাজার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং নেটওয়ার্কে আমাদের শক্তিশালী অবস্থান ধরে রাখার মাধ্যমে আমরা ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। পরিকল্পিত লক্ষ্য অনুযায়ী চতুর্থ প্রান্তিকে ফোরজি সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার। বছর শেষে আমাদের নেটওয়ার্কে ফোরজি গ্রাহকের সংখ্যা এক কোটি ১৯ লাখে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছি। ইন্টারনেট সেবা খাতে এর ব্যবহার ও রাজস্ব অর্জন দুটি ক্ষেত্রেই প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি।’

মাইকেল ফোলি বলেন, মোবাইল সেবা খাতের উন্নয়ন ও বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিতে এর অবদান ধরে রাখতে সরকার ও খাতসংশ্লিষ্টদের মধ্যে যে কোনো অর্থপূর্ণ আলোচনা করতে আমাদের প্রতিশ্রুতি আমরা পুনর্ব্যক্ত করতে চাই।”

একই প্রসঙ্গে গ্রামীণফোনের সিএফও ইয়েন্স বেকার বলেন, ‘শক্তিশালী মার্জিন নিয়ে গ্রামীণফোন ২০১৯ সালে ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, চতুর্থ প্রান্তিকে আমরা তীব্র প্রতিযোগিতা ও বৈরী আবহাওয়া সত্ত্বেও ইন্টারনেট সেবা খাতে শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি অর্জনে সফল হয়েছি। আমাদের শেয়ারহোল্ডার ও গ্রাহকদের জন্য আরও বেশি মানসম্মত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে শক্তিশালী নেটওয়ার্ক নির্মাণ ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকায়নে আমাদের বিনিয়োগ অব্যাহত থাকবে। আমরা আনন্দের সঙ্গে জানাতে চাই সম্মানিত শেয়ারহোল্ডারদের জন্য আমাদের পরিচালনা পর্ষদ প্রতি শেয়ারে ১৩ টাকা লভ্যাংশের প্রস্তাব করেছেন।’

২৭ জানুয়ারি ২০২০ সালে পরিচালনা পর্ষদের সভায় গ্রামীণফোনের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯ সালের জন্য প্রতি শেয়ারে ১৩ টাকা লভ্যাংশ প্রস্তাব করেছে। এর মাধ্যমে মোট নগদ লভ্যাংশের পরিমাণ দাঁড়াল ১৩০ শতাংশ, যা কর-পরবর্তী লভ্যাংশের ৫০ দশমিক ৮৬ শতাংশ (৩৫ শতাংশ অন্তর্বর্তী লভ্যাংশসহ)।

২৩ এপ্রিল (২০২০) বার্ষিক সাধারণ সভায় অনুমোদনসাপেক্ষে ১৭ ফেব্রুয়ারি রেকর্ড ডেট অনুযায়ী, শেয়ারহোল্ডাররা এই লভ্যাংশের যোগ্য হবেন।

চতুর্থ প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক উন্নয়নে ৩৯০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। এনওসি বন্ধের কারণে গ্রামীণফোনকে পরিকল্পিত বিনিয়োগের চেয়ে কম বিনিয়োগ করতে হয়েছে। শেষ প্রান্তিকে নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের পাশাপাশি ৭১৫টি নতুন ফোরজি সাইট করা হয়েছে। ২০১৯ শেষে গ্রামীণফোনের মোট নেটওয়ার্ক সাইটের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫০৮। কোম্পানিটি ২০১৯ সালে কর, ভ্যাট, ফোরজি লাইসেন্স ফি, স্পেকট্রাম অ্যাসাইনমেন্ট ফি, ডিউটি ও ফিস বাবদ সরকারি কোষাগারে আট হাজার ৫১০ কোটি টাকা প্রদান করেছে, যা মোট আয়ের ৫৯ দশমিক দুই শতাংশ।