গ্রামীণফোনে গ্রাহকসেবার মানোন্নয়ন আবশ্যক

মোবাইল ফোন দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি বিশেষ করে যোগাযোগ খাতে বড় ভ‚মিকা রেখেছে, এতে সন্দেহ নেই। এটি স্বীকার করতে হবে পথিকৃৎ না হলেও দেশে মোবাইল ফোনের বিকাশে মোবাইল ফোন সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনের অবদান সর্বাপেক্ষা বেশি। একসময় গ্রামীণফোনের সংযোগ ব্যবহারকারীদের মধ্যে এক ধরনের অহংবোধ কাজ করত। এখনও গ্রামীণফোনের পুরোনো সিম প্লাটিনাম, গোল্ড, সিলভার ক্যাটেগরিতে এত বেশি দামে বিক্রি হয়, যা সাধারণ মানুষের ধারণারও বাইরে। যাদের কাছে প্রথমদিককার ক্রমের সিম আছে, তারাও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশি দামে ওই সিম বিক্রি করে লাভবান হন। ১১ ক্রমিক নম্বরের সিমের প্রতি ব্যবহারকারীদের আগ্রহ বেশি; কেননা ওই সিম ব্যবহার করা মানে তিনি অনেক দিন ধরেই মোবাইল ফোন ব্যবহার করছেন। এখানেও আভিজাত্যের বিষয় আছে, গ্রামীণফোনের বিবেচনায় তারা স্টার জিপি স্টার। তাদের অনেক সুবিধা।    

ব্যবহারকারীদের সুযোগ-সুবিধা দানে প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় গ্রামীণফোন নানা অফার দিয়ে আসছে। অবশ্য রাজস্ব ফাঁকি ও কলচার্জ  প্রতারণা নিয়েও বারবার আলোচনায় এসেছে গ্রামীণফোন। বিশ্ব জিএসএম সম্মেলনে বেশ কয়েকবার বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মোবাইল ফোন জনপ্রিয় করতে গ্রামীণফোনের অবদান তুলে ধরা হয়েছে, জিডিপিতেও এর হিস্যা বেড়েছে। 

গতকাল শেয়ার বিজে ‘সিমের মালিকানা পরিবর্তনে গ্রামীণফোনের মশকরা’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা গ্রামীণফোনের অবস্থানের পরিপন্থি বলেই আমরা মনে করি। বড় প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট নীতিমালা পরিপালনে যথেষ্ট সতর্ক থাকে, সাধারণ মানুষের এমনই বিশ্বাস।  কিন্তু আলোচ্য প্রতিবেদনের বিষয় তাদের বিশ্বাস ও আস্থায় চিড় ধরাবে বলেই ধারণা। যেমন মালিকানা পরিবর্তনে আঙুলের ছাপ নেয়ার পর বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সচল সিম, সিমে জাতীয় পরিচয়পত্রে মালিকানা থাকলেও ব্যবহার করছেন অন্য কেউ।

গ্রামীণফোন সিমের ‘মালিকানা পরিবর্তন’ সেবায় নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন গ্রাহক। গ্রাহক অনলাইনে মালিকানা পরিবর্তনের আবেদন করলে তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের ফি কেটে নেয়া হয়। গ্রামীণফোন নিজে পরিবর্তন করে না, তা করে থার্ড পার্টি হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ‘পেপারফ্লাই’। ‘মালিকানা পরিবর্তন’ সেবাকে গ্রাহক গ্রামীণফোনের হয়রানি হিসেবেই দেখছেন। পেপারফ্লাই বলছে, গ্রামীণফোন ও  নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির পদ্ধতির কারণে এমন হতে পারে। আর গ্রামীণফোন এ বিষয়ে নীরব।

আমরা মনে করি, যে পদ্ধতির কারণেই গ্রাহক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, দায় গ্রামীণফোনকেই নিতে হবে। এক-দুই মাস সংযোগ ব্যবহার না হলে গ্রাহককে না জানিয়েই বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। পরে সেই সে সিম বেশি দামে বিক্রি করা হয়। অথচ মালিকানা পরিবর্তনে বাদ সাদছে গ্রামীণব্যাংক।   মালিকানা স্থানান্তরের জন্য একজন গ্রাহক সব নিয়ম মেনে চললেন, ফি পরিশোধ করলেন; অথচ তার সিমই বন্ধ হয়ে গেল। এ ধরনের ঘটনা একটি ঘটতে পারে, দশটি ঘটতে পারে; কিন্তু শত শতবার ঘটতে পারে না। যদি  ঘটেও তা গ্রামীণফোনের দায়িত্বেই সুরাহা করতে হবে। অন্যথায় গ্রাহক নিজেকে প্রতারিত রোধ করবেন। নিজেদের ‘পদ্ধতি’র  জন্য সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে রক্ষায় ব্যবহারকারীকে  কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে গ্রামীণফোনকেই এবং তা যত দ্রæত সম্ভব। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০