গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স বাতিলে নোটিস আগামী সপ্তাহে

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে পরিচালিত মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন ও রবি আজিয়াটার কাছে পাওনা বাবদ ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা আদায়ে দুই দফা নোটিস দিলেও তা পরিশোধ না করায় কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (বিটিআরসি)। এর পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্স বাতিলের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। আগামী সপ্তাহেই গ্রামীণফোন ও রবিকে এ-সংক্রান্ত নোটিস দেবে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় থেকে বিটিআরসিকে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে। পাওনা পরিশোধে অপারেটর দুটিকে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা পাওনা পরিশোধ না করে বিভিন্ন কৌশলে সময়ক্ষেপণ করছে। এখন বকেয়া পরিশোধ না করলে অবশ্যই লাইসেন্স বাতিলের বিষয়টি আসতে পারে।’
উল্লেখ্য, গত এপ্রিলে প্রায় ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধে জন্য গ্রামীণফোনকে নোটিস দেয় বিটিআরসি। পাশাপাশি রবি আজিয়াটার কাছে ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধের জন্যও নোটিস পাঠায় বিটিআরসি। বকেয়া অর্থ পরিশোধের জন্য অপারেটর দুটিকে বিটিআরসি দুই সপ্তাহ সময়ও বেঁধে দেয়।
ওই সময় বিটিআরসি থেকে বলা হয় গ্রামীণফোন ও রবির সর্বশেষ অডিটের পরে এ ডিমান্ড লেটার পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু দুই সপ্তাহের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় গত ৪ জুলাই অপারেটর দুটির ব্যান্ডউইথ সীমিত করে দেয় বিটিআরসি। পরে ওই আদেশ প্রত্যাহার করে নতুন প্যাকেজ (এনওসি) অনুমোদন বন্ধ করে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি এ বিষয়ে বিটিআসির চেয়ারম্যান জহুরুল হক শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এটি সরকারি টাকা, পাবলিক ডিমান্ড। এ টাকা মওকুফের ক্ষমতা বিটিআরসির নেই। সুতরাং বকেয়া পরিশোধের বিকল্প নেই। ব্যবসা করতে হলে সরকারি নীতিমালা মেনে ব্যবসা করতে হবে। আমাদের কাছে সব অপারেটর সমান। পাওনা পরিশোধে অপারেটরগুলোকে এর আগেও নোটিস প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু তারা টাকা পরিশোধ করছে না। আইন অনুযায়ী বকেয়া পরিশোধ না করলে সরকার লাইসেন্স বাতিলের দিকে যাবে। যদিও দিনে দিনেই লাইসেন্স বাতিল করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী লাইসেন্স বাতিলের জন্য সরকার অনুমোদন দিলে দুই থেকে এক মাসের মধ্যে লাইসেন্স বাতিল কার্যকর হবে। এ বিষয়ে আইনের সুস্পষ্ট বলা আছে। আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পাওনা পরিশোধ না করায় গত ২২ মে বিটিআরসি ‘কমিশন বৈঠক’ (২২৭তম বৈঠকে) অপারেটর দুটির বিরুদ্ধে অপারেশনাল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় বিটিআরসি। তখন অপারেটরগুলোর বিরুদ্ধে আটটি অপারেশনাল ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়। এ আটটি ব্যবস্থার মধ্যে ছিল দুই অপারেটরের পক্ষে এনওসি বন্ধ করে দেওয়া, এমএনপি পোর্ট ইন বন্ধ বা সীমিত করা, নতুন গ্রাহক নেওয়া বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া, ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে বা আইজিডব্লিউ প্রান্ত থেকে ব্যান্ডউইথ বন্ধ বা সীমিত করা, আইজিডব্লিউ প্রান্ত থেকে ইনকামিং বা আউটগোয়িং কল বন্ধ বা সীমিতকরণ, ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জের (আইসিএক্স) মাধ্যমে বন্ধ বা সীমিত করে দেওয়া, নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম বা এনএমএসের মাধ্যমে সারাদেশ বা নির্দিষ্ট এলাকায় থ্রিজি ও ফোরজি নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এরই মধ্যে কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। বিটিআরসির একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গ্রামীণফোন ও রবির লাইসেন্স বাতিলের নোটিস তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। লাইসেন্স বিধি অনুযায়ী অপারেটরগুলোকে নির্দিষ্ট সময় দিয়ে (৩০ দিন হতে পারে) লাইসেন্স কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হতে পারে। জবাব পেলে সে মতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর জবাব না পেলে পরবর্তী কমিশন বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করে সমাধানের পথ খোঁজা হবে। তখন লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্তও হতে পারে। এক্ষেত্রে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই চিঠি দেওয়া হবে অপারেটর দুটিকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০