নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামোর বিষয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় গতকাল তিনি এ নির্দেশ দেন। একনেক সভা-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এ অনুশাসন তুলে ধরেন পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ মো. আসাদুল ইসলাম। কভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘তিনি (শেখ হাসিনা) খুবই গুরুত্ব দিয়ে বলেছেন, গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামোর বিষয়ে আমরা অনেক কাজ করছি। কাজগুলো সত্যিকারভাবে হচ্ছে কি না, কোয়ালিটিফুল (মানসম্মত) হচ্ছে কি না, সেগুলো ভালো করে পরখ করতে হবে। সেখানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, মাল্টিপ্লেয়ার মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কাজের গুণগত মান যেন ঠিক থাকে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। রাস্তায় যেন পানি না জমে। কারণ রাস্তায় পানি জমলে সেটা নষ্ট হয়ে যায়। আর কোথায় কতটুকু রাস্তা করা হবে, সে বিষয়ে একটা মাস্টার প্ল্যান করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
স্থানীয় সরকার বিভাগের নেতৃত্বে গ্রামীণ রাস্তা ও অবকাঠামো নিয়ে মাস্টার প্ল্যান তৈরির নির্দেশের বিষয়টি উল্লেখ করে জ্যেষ্ঠ সচিব জানান, সড়ক, ত্রাণসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলো এ কাজে অংশ নেবে।
গতকাল পাঁচ হাজার ৯০৫ কোটি ৫৯ লাখ ব্যয়ের একনেক সভায় ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে আসাদুল ইসলাম বলেন, ‘এই রাস্তাগুলো খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অতি দ্রুত এগুলো সংস্কার করতে হবে। তবে অন্যান্য যেসব মন্ত্রণালয় রাস্তা করে বা এর সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটা করতে হবে, যাতে কোনো ওভারলেপিং না হয়। কোন কাজটুকু করতে হবে, কত কাজ বাকি থাকছে, কাজটি কোন মন্ত্রণালয় করলে ভালো হয়Ñএগুলো সমন্বয় করে কাজ করতে হবে। আগামী বর্ষা আসার আগেই যেন মূল কাজগুলো হয়ে যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে কাজগুলো সাশ্রয়ী হবে।’
নদীভাঙনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব বলেন, ‘নদীভাঙন রক্ষায় মূল কৌশল হবে আমাদের একটা চ্যানেলে সবসময় প্রবাহ রাখা। প্রয়োজনে ক্যাপিটাল ড্রেজিং করে নিয়মিত আমাদের রক্ষাণাবেক্ষণ ড্রেজিং চলমান রাখতে হবে। নদীর প্রবাহ ঠিক রাখলে ভাঙন থেকে আমরা অনেকাংশে রক্ষা পাব। এজন্য কোনো ডুবোচর বা কোনো চর যদি থাকে, সেগুলো চিহ্নিত করে সরিয়ে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে বর্ষায় যখন পানির খুব চাপ বেড়ে যায়, তখন সেই চাপ যেন আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে না পারে, সেজন্য বাঁধের পাশাপাশি একটা বাফার জোন থাকতে হবে, যাতে বাঁধ বা লোকালয়কে ক্ষতিগ্রস্ত না করে পানিগুলো সেখানে থাকতে পারে। আর বড় নদীর পাশে যেসব ছোট ছোট নদী থাকে, সেগুলো অনেক সময় ভরাট হয়ে যায়। সেগুলোর পানি ধারণ ক্ষমতা কমে যায়, যার কারণে বড় নদী অনেক প্রশস্ত হয়ে যায়, আমাদের প্লাবিত করে ফেলে বা বাঁধ ভেঙে ফেলে। এই কাজগুলো যে ড্রেজিং, ক্যাপিটাল ড্রেজিং, নিয়মিত ড্রেজিং, বাফার জোন তৈরি করা, ছোট ছোট নদী খনন করা, রক্ষণাবেক্ষণ করাÑএগুলো আজকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন ছিল।’
‘একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বন্যা বা নদী প্লাবন পলি বয়ে নিয়ে আসে। এই পলি পড়া যেন আবার বন্ধ না হয়, সে বিষয়টা খেয়াল রাখতে হবে,’ যোগ করেন আসাদুল ইসলাম।