Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 12:41 am

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্রামীণ টেলিকমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও কোম্পানির কর্মচারী ইউনিয়নের কয়েকজন নেতার একটি চক্র সাধারণ কর্মচারীদের ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা লুটপাট করেছে। লুটপাট ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত এমন আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগ। গ্রেপ্তার মো. মাইনুল ইসলাম (৩৯) গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতি। গতকাল রোববার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) গুলশান বিভাগ এ তথ্য জানিয়েছে।

গত বুধবার কুমিল্লা সদর থানাধীন মগবাড়ী এলাকা থেকে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সহসভাপতিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন, একটি ল্যাপটপ ও এক কোটি ৭০ লাখ টাকার চেক জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিবি।

এর আগে সাধারণ কর্মচারীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ৪ জুলাই গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ও টেলিকম ইউনিয়নের অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান (৩৮) মিরপুর মডেল থানায় অভিযোগ করেন। পরদিন গ্রামীণ টেলিকম কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান ও সেক্রেটারি ফিরোজ মাহমুদ হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গতকাল দুপুরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন ডিবিপ্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, শ্রম আইন অনুযায়ী বার্ষিক লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ অর্থ কর্মচারীদের দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়নি। ‘কর্মচারীরা স্থায়ী নয়’, ‘কোম্পানি অলাভজনক’সহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে লভ্যাংশ দেয়নি কর্তৃপক্ষ। কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় লভ্যাংশের দাবি করলে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৯৯ শ্রমিককে বেআইনিভাবে ছাঁটাই করা হয়। এসব কারণে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকরা শ্রম আদালতে ১৯০টি মামলা করেন। কিন্তু শ্রমিকদের মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে কোম্পানি ও শ্রমিক ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা যোগসাজশ করে মামলাগুলো প্রত্যাহার করান।

হারুন অর রশীদ বলেন, গত ২৭ এপ্রিল গ্রামীণ টেলিকম ও গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের মধ্যে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, গত ১০ মে ঢাকা ব্যাংক গুলশান শাখায় একটি সেটেলমেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। সেখানে ২০১০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রতি বছরের মোট লভ্যাংশের পাঁচ শতাংশ অর্থ এবং এর সুদ হিসেবে আরও চার শতাংশ অর্থ (প্রায় ৪৩৭ কোটি টাকা) কোম্পানি থেকে এ অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী অ্যাকাউন্টটি থেকে অর্থ উত্তোলনের জন্য গ্রামীণ টেলিকমের এমডিকে বাধ্যতামূলক সিগনেটরি (স্বাক্ষরদাতা) এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে অন্য দুই সিগনেটরি হিসেবে রাখা হয়।

তিনি বলেন, শ্রমিকদের সব পাওনা এ অ্যাকাউন্ট থেকেই পরিচালিত হওয়ার কথা। চুক্তি অনুযায়ী, এখান থেকে শ্রমিকদের পাওনা ও পাঁচ শতাংশ অগ্রিম কর ব্যতীত অন্য কোনো অর্থ ছাড়ের সুযোগ নেই। কিন্তু বিধিবহির্ভূতভাবে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি, সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজন মিলে সেখান থেকে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা সরিয়ে আত্মসাৎ করেন। ৪৭৩ কোটি টাকার মধ্যে ২৬ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হলে বাকি টাকা কোথায় গেলÑপ্রশ্ন করা হলে ডিবিপ্রধান বলেন, ‘বিষয়টি আমরা তদন্ত করে দেখছি।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে আমরা মনে করছি, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এর দায় এড়াতে পারেন না। আমরা আরও জিজ্ঞাসাবাদ করছি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলব। তদন্তে যা আসবে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’