Print Date & Time : 1 July 2025 Tuesday 1:45 am

গ্রাম হচ্ছে শহর: প্রাণভোমরা ডিজিটাল সেন্টার

পরীক্ষিৎ চৌধূরী: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) ১৪ জুন যে অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, এসডিজিতে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশ বেশি অগ্রগতি অর্জন করেছে। অগ্রগতির এ তালিকায় থাকা অন্য দেশ দুটি হলো আফগানিস্তান ও আইভরি কোস্ট।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের এসডিজি সূচকে ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম, স্কোর ৬৩ দশমিক পাঁচ। চার বছর আগে ২০১৭ সালের সূচকে ১৫৭টি দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ।

গত এক যুগ বাংলাদেশ অনেক ইতিবাচক ও সাফল্যের সংবাদের জš§ দিয়েছে, যাকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও উন্নয়ন বিশ্লেষকরা স্বাভাবিক প্রকরণ বলেই স্বীকার করে নিয়েছেন। তারা বলছেন, বাংলাদেশে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে ২০০৯ সালে। সেদিন দেশটি ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রারম্ভ করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ প্রতিটি খাতে এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ পুরস্কারসহ বিশ্ব নেতাদের প্রশংসা অর্জনকারী বেশ কিছু সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজি বাস্তবায়নে আমাদের অগ্রগতিকে তাই স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখছেন তারা।

আগামী দিনে বিশ্ব যে হাতিয়ার অবলম্বন করে এগিয়ে যাবে, তা হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি। সেই অবলম্বনকে শক্তিশালী করতে বিশ্বব্যাপী এরই মধ্যে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশ কিন্তু ২০০৯ সাল থেকেই এ উদ্যোগে শামিল হয়েছে।

তারও অনেক আগে প্রযুক্তি ও কারিগরি বিদ্যার অপার সম্ভাবনা এবং তার সুষম বণ্টন নিয়ে বিশ্ববাসীকে আগাম পরামর্শ দিয়ে রেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯তম অধিবেশনে ভাষণ দানকালে বঙ্গবন্ধু বলেছেন, ‘আমরা এমন এক বিশ্ব গড়িয়া তোলার পথে আগাইয়া যাইব, যে বিশ্বে মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের সময়ের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ণ সম্ভব করিয়া তুলিবে। …যে বিশ্ব কারিগরি বিদ্যা ও সম্পদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর জীবন গড়িয়া তোলার অবস্থা সৃষ্টি করিবে। …আমাদের লক্ষ্য স্বনির্ভরতা।… সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যার শরিকানা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা হ্রাস করিবে এবং আমাদের কর্মকাণ্ডকেও সহজতর করিবে, ইহাতে কোনো সন্দেহ নাই।’

বঙ্গবন্ধু সেই সময়ই ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় ঘটিতেছে।’ চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের মধ্য দিয়ে সেই নতুন বিশ্বের অভ্যুদয় সত্যি সত্যি ঘটতে শুরু করেছে একবিংশ শতাব্দীতে এসে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লব হিসেবে ডিজিটালাইজেশন আমাদের কাজের সব ক্ষেত্রে এরই মধ্যে বিশাল পরিবর্তন নিয়ে এসেছে, তবে এই পরিবর্তন কিন্তু সূচনামাত্র। আগামী ১০ বছরে ডিজিটাল বিপ্লবের ফলে আমরা এমন সব পরিবর্তনের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি, যা এর আগে ৫০ বছরে সম্ভব হয়নি। ডিজিটাল বাংলাদেশের যাত্রা শুরু থেকে গত ১২ বছরের অর্জনগুলোকে দেখলেই পরিষ্কার হয়, তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়ায় কী অবিশ্বাস্য গতিতে একটি জাতি এগিয়ে যেতে পারে!

২০০৮ সালের শেষের দিকে যখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশের ধারণা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছিলেন, আমাদের তখন কী-বা ছিল? সেই সময় দারিদ্র্য, খাদ্য সুরক্ষা, নিরক্ষরতা ও বিদ্যুতের ঘাটতি নিয়ে লড়াই করছিল জাতি। তখন প্রযুক্তিকে একটি বিলাসিতা হিসেবেই বিবেচনা করা হতো। ২০২১ সালে এসে মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা তিনটি সূচকেই উন্নীত হয়ে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণ ঘটেছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে জনগণের দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত ও স্বল্প ব্যয়ে সরকারি সেবা পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্যে ইউনিয়ন পরিষদ আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর  প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভোলার চর কুকরিমুকরি ইউনিয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করে একযোগে দেশের চার হাজার ৫০১টি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবা কেন্দ্র উদ্বোধন করেন, যা বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার (ইউডিসি) নামে পরিচিত।

বর্তমানে সারা দেশের আনাচে-কানাচে সাত হাজার ৬০০টি ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত ১৫ হাজারের অধিক উদ্যোক্তা গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন। তারা ব্যাংকিং, ই-কমার্স সেবাসহ ৩০০টির অধিক সরকারি-বেসরকারি সেবা প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় এই সেন্টার স্থাপিত হয়। বর্তমানে এটুআই প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল সেন্টারের কাজ চলছে সারাদেশে। দারিদ্র্যবিমোচন, স্বাস্থ্য, শিক্ষাসহ জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধিকাংশ অর্জনে এই ডিজিটাল সেন্টারগুলোর অবদান কৃতিত্বের দাবি রাখে।

২০০৮ সালে ‘রূপকল্প ২০২১Ñডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর স্বপ্ন দেখানোর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে মোবাইল ফোন সহজলভ্যতার নীতি গ্রহণের পাশাপাশি সাবমেরিন কেব্লের সংযোগ স্থাপন করেন। দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় এসে তারা ডিজিটাল সেবা তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দেয়ার জন্য ইন্টারনেট অবকাঠামোর ওপর গুরুত্ব দেয় এবং দ্বিতীয় সাবমেরিন কেব্ল স্থাপন করে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যাও দ্রুত বাড়তে থাকে। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১১ কোটির বেশি। ২০০৬ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ৩৫ লাখ।

একই সঙ্গে দেশকে ডিজিটাইজেশনের লক্ষ্যে এগিয়ে নেয়ার জন্য নতুন প্রজন্মের প্রযুক্তি গ্রহণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে থ্রিজি ও ২০১৮ সালে ফোরজি টেকনোলজি গ্রহণ করা হয়েছে। এখন ফাইভজি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। ইন্টারনেটের সূত্রে ডিজিটাল সেবার বহুমুখীকরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে, যার সরাসরি উপকারভোগী গ্রামের সাধারণ গরিব মানুষ।

আইসিটি হলো উন্নয়ন ও আধুনিক সরকার পরিচালনার মূল হাতিয়ার। নাগরিকদের ক্ষমতায়নের একক কার্যকর কৌশলগত ইন্টারভেনশন হিসেবে এরই মধ্যেই এটি আত্মপ্রকাশ করেছে। আইসিটি ব্যবহার করে ইউডিসির উদ্যোগগুলো সফল করার পাশাপাশি সরকারের ব্যয় হ্রাস করার চেষ্টা এবং দক্ষতা ও কার্যকারিতা অনুকূল করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারকে আরও জবাবদিহি ও স্বচ্ছ করতে দুর্নীতির সুযোগকে হ্রাস করার উদ্যোগগুলোকে সফল করা হয়েছে। সবাইকে আইসিটি সেক্টরে সক্ষম করে সরকার এবং অন্য স্টেকহোল্ডারদের ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করবে ইউডিসি।

ইউডিসি বাংলাদেশের গ্রামীণ মানুষের জন্য একটি নতুন দ্বার উšে§াচন করেছে। শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, ভূমি, আইন প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ জীবিকার তথ্য যখন সব নাগরিকের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যায় তখন আইসিটির কার্যকর ও দক্ষ ব্যবহার বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সমৃদ্ধ ও ক্ষমতায়িত করার সম্ভাবনা নিয়ে আসতে পারে। এমনকি সাধারণ লোকেরা যাদের খুব বেশি আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নেই তাদের জন্য অবাধ, কার্যকর ও দক্ষ পরিষেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে ই-পরিষেবাগুলো শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে।

তৃণমূল পর্যায়ে ই-পরিষেবাগুলোর অন্যতম হচ্ছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। এটুআই প্রোগ্রামের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিটাল সেন্টার বর্তমানে ২৭০-এর অধিক সেবা দিয়ে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জমির পর্চা, নামজারি, ই-নামজারি, পাসপোর্টের আবেদন ও ফি জমাদান, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন, নাগরিক সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, হজ রেজিস্ট্রেশন, সরকারি সেবার ফরম, টেলিমিডিসিন, জীবন বিমা, বিদেশে চাকরির আবেদন, এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং, বাস-বিমান-লঞ্চ টিকেটিং, মেডিকেল ভিসা, ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট, মোবাইল রিচার্জ, সিম বিক্রি, বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার ও কারিগরি প্রশিক্ষণ, ই-মেইল, কম্পোজ-প্রিন্ট-প্রশিক্ষণ, ফটো তোলা, ফটোকপি, সরকারি ফরম ডাউনলোড করা, পরীক্ষার ফলাফল জানা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আবেদন করা, অনলাইন ভিসার আবেদন করা, কৃষি পরামর্শ ও তথ্যসেবা প্রভৃতি।

একজন উদ্যোক্তা সেবাদানের মাধ্যমে মাসিক দুই লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন। গড়ে প্রতিমাসে ইউডিসি থেকে ৬০ লক্ষাধিক মানুষ সেবা নিতে পারে বলেও এটুআই সূত্রে জানা গেছে।

গ্রামাঞ্চলে প্রযুক্তি ও ডিজিটাল অবকাঠামোর উপস্থিতির কারণে গ্রাম ও শহরের ব্যবধান ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে আসছে। ডিজিটাল অবকাঠামো গ্রামীণ গতিশীলতা বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছে, তা বলাই বাহুল্য। ২০১৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩.১০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ‘আমার গ্রাম-আমার শহর’ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের কাজ চলছে এভাবেই। নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে প্রতিটি গ্রামকে শহরে উন্নীত করার কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করার অংশ হিসেবে ইন্টারনেট বা তথ্যপ্রযুক্তি সর্বত্র পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি সরকার বাস্তবায়ন করে চলেছে।

বাংলাদেশ এরই মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে দেশ। এর অন্যতম অনুষঙ্গ হিসেবে ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের ৩.২১ অনুচ্ছেদের অঙ্গীকার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নপূরণ: তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি’ বিশাল অবদান রয়েছে।

এযাবৎ ডিজিটাল সেন্টার থেকে প্রায় ৬০ কোটি সেবা দেয়া হয়েছে এবং এর মাধ্যমে নাগরিকদের ১৬৮ কোটি সমপরিমাণ কর্মঘণ্টা ও ৭৬ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা ব্যয় সাশ্রয় হয়েছে। নাগরিকদের জীবনমান পরিবর্তনে ইতিবাচক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ডিজিটাল সেন্টার ২০১৪ সালে ই-গভর্নমেন্ট ক্যাটেগরিতে জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) ওয়ার্ল্ড সামিট অন ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে।

২০১৩ সালে সব পৌরসভার ‘পৌর ডিজিটাল সেন্টার (পিডিসি)’ এবং ১১টি সিটি করপোরেশনের সব ওয়ার্ডে ‘নগর ডিজিটাল সেন্টার (সিডিসি)’ চালু করা হয়, ২০১৮ সালে ছয়টি ‘স্পেশালাইজড ডিজিটাল সেন্টার (এসডিসি)’ চালু করা হয়, যার মধ্যে গার্মেন্ট কর্মীদের জন্য গাজীপুরে পাঁচটি এবং মৎস্যজীবী শ্রমিকদের জন্য খুলনার রূপসায় একটি, ২০১৮ সালে সৌদি আরবে ১৩টি ‘এক্সপাট্রিয়েট ডিজিটাল সেন্টার (ইডিসি)’ স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা সাত হাজার ৬০০টি (ইউডিসি, পিডিসি, সিডিসি, এসডিসি, ইউপিডিসি, ইডিসি, সাবসেন্টার মিলিয়ে)। মোট উদ্যোক্তা ১৫ হাজারের বেশি। পাঁচ হাজারের বেশি নারী উদ্যোক্তা এ সেন্টারগুলোয় সরাসরি জড়িত, যা থেকে বোঝা যায় নারীর ক্ষমতায়ন, বিশেষ করে তাদের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনে ইউডিসিগুলোর তাৎপর্য।

কভিড মহামারিকালে ইউডিসিগুলো থেকে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে জনগণকে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ তৃণমূল জনগণকে ই-সেবা সম্পর্কে অবহিতকরণ, সেবাগ্রহণে মধ্যস্বত্বভোগী ও দুর্নীতির আশ্রয় নিরোধে ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে ‘মুজিব শতবর্ষ ই-সেবা ক্যাম্পেইন, ২০২০’ পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের ১১ অক্টোবর থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত এই ক্যাম্পেইন ডিজিটাল সেন্টারের উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সারাদেশে চলছে।

নাগরিকদের দুই কিলোমিটার আওতার মধ্যে সেবাপ্রদান কার্যক্রম আনয়নের জন্য ২০২৩ সালের মধ্যে ১০ হাজার ডিজিটাল সেন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে এটুআই। সেবা তালিকায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নতুন নতুন সেবা সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় প্রায় ৫০০ সরকারি-বেসরকারি সেবা এসব সেন্টারে যুক্ত করার পদক্ষেপও নেয়া হয়েছে।

২০০৮ সালে শেখ হাসিনা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’-এর প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে শুধু এই অঞ্চলেই নয়, সারা দুনিয়াকে প্রথম একটি ডিজিটাল সভ্যতা গড়ে তোলার আভাস প্রদান করেন। বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র, কৃষিপ্রধান দেশ হিসেবে বাংলাদেশের এই ঘোষণা কেবল দূরদৃষ্টিসম্পন্নই ছিল না, এটি ছিল দুনিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে একটি নতুন সভ্যতার জন্মকে দেখিয়ে দেয়া। সবাই জানেন, বাংলাদেশের পর ব্রিটেন ও ভারত ডিজিটাল রূপান্তরের কর্মসূচি ঘোষণা করে।

আগামী দিনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ব্লকচেইন ও রোবটিকসের মতো প্রযুক্তিগুলো নিয়ে কাজ করতে হলে আমাদের দক্ষ জনবলের বিকল্প নেই। ডিজিটাল সেন্টারগুলো আমাদের দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সেই জনবল সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো এখন আগের চেয়ে অনেক শক্তিশালী। ডিজিটাল বাংলাদেশের যে স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয়, সেটা আজ বাস্তবতা। আমরা এখন ঘরে বসে অনেক কাজ করছি, অনলাইনে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করছে এবং জরুরি মিটিং করা যাচ্ছে। দেশে ই-কমার্স. ই-ব্যাংকিং আজ খুবই জনপ্রিয়।

২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অভীষ্ট পূরণ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গঠনে গ্রামগুলোয় শহরের সুবিধা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার। সেই পথচলায় তৃণমূল পর্যায়ের প্রাণভোমরা হচ্ছে ইউডিসি। গ্রামকে শহরের সুবিধা দিয়ে শহরকে উন্নীত করার যে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে, তার মৌলিক অনুষঙ্গ হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তির যথাযথ সদ্ব্যবহার করে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে প্রস্তুত করে তোলা। তবেই আমাদের অর্থনীতির গতিশীলতায় আসবে সজীবতা, আসবে নতুন প্রাণ।

পিআইডি-এটুআই নিবন্ধন