শুভ্র শচীন, খুলনা: মোটা অঙ্কের লভ্যাংশের প্রলোভন দেখিয়ে দশ সহস্রাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া ১১ কোটি টাকা ফেরত দেয়নি খুলনা এহসান সোসাইটি ও রিয়েল স্টেট নামক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। টাকা উদ্ধারে প্রতিষ্ঠানের কেন্দ্রীয় পরিচালক মুফতি গোলাম রহমানসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তিনটি মামলাও দায়ের করা হয়েছে, কিন্তু একাধিকবার টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রতারণায় লিপ্ত হয়েছেন তারা।
জানা যায়, টাকা ফেরত পাওয়ার দাবিতে ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষে খুলনার জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। প্রতারণা মামলায় গোলাম রহমান বর্তমানে খুলনা কারাগারে থাকলেও তার অন্যতম সহযোগী মুফতি রশিদ আহমাদ ও ম্যানেজার রবিউল ইসলাম রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
সূত্র জানায়, খুলনা এহসান সোসাইটি নামের একটি প্রতিষ্ঠান সুদমুক্ত ও শরিয়াহ্ মোতাবেক পরিচালনার কথা বলে খুলনা নগরীর পাওয়ার হাউজ মোড়সংলগ্ন ১৭২নং শেরেবাংলা রোডে অফিস খোলে। ২০০৪ সাল থেকে খুলনায় এর কার্যক্রম শুরু করেন প্রতিষ্ঠানটির কেন্দ্রীয় পরিচালক নগরীর দারুল উলুম মাদ্রাসার বহিষ্কৃত শিক্ষক মুফতি গোলাম রহমান ও খুলনা জেলার সমন্বয়কারী ডালমিল মোড়ের মক্কি মসজিদের ইমাম মুফতি রশিদ আহমাদ। সঙ্গে যোগ দেন গোলাম রহমানের ভাগ্নে খুলনা শাখার ম্যানেজার রবিউল ইসলাম। তারা ধর্মীয় অনুভ‚তিকে পুঁজি করে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে সংগ্রহ করেন ১০ কোটি ৯০ লাখ টাকা। এর মধ্যে খুলনা সদর ও সোনাডাঙ্গা এলাকা থেকে এহসান সোসাইটিতে মাসিক সঞ্চয় বাবদ তিন কোটি টাকা, খালিশপুর এলাকা থেকে দেড় কোটি এবং দিঘলিয়া উপজেলা থেকে ৪০ লাখসহ মোট চার কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং রিয়েল এস্টেটের মাসিক মুনাফার নামে আরও সংগ্রহ করা হয় ছয় কোটি টাকা।
ভুক্তভোগীরা জানান, প্রথম দিকে গ্রাহকদের কিছু লভ্যাংশ দেওয়া হলেও ২০১৪ সাল থেকে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রতারণা বুঝতে পেরে গ্রাহকরা তাদের জমানো অর্থ ফেরত চাইলে মুফতি গোলাম রহমান ও রশিদ আহমাদ বিভিন্ন ধরনের টালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে মাঠকর্মী ও গ্রাহকরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী রবিউল ইসলামকে খুলনায় আটক করে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু গোলাম রহমান সব টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিয়ে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান। কিন্তু একাধিকবার টাকা ফেরতের প্রতিশ্রæতি দিয়েও প্রতারণার আশ্রয় নেন তিনি, যে কারণে কর্মীরা বাধ্য হয়ে ২০১৬ সালের ২৭ অক্টোবর মুফতী আবুজর এবং চলতি বছরের ১৯ জুন মাওলানা হেমায়েত উদ্দিন বাদী হয়ে খুলনার আদালতে তিনটি মামলা দায়ের করেন। এসব মামলায় মুফতি গোলাম রহমান, মুফতি রশিদ আহমাদ ও ম্যানেজার রবিউল ইসলামকে আসামি করা হয়।
গোলাম রহমান প্রথম দফায় গ্রেফতার হয়ে টাকা পরিশোধের আশ্বাস দিলে তার ছেলে আবদুল্লাহ ও খুলনার কতিপয় আলেমদের মধ্যস্থতায় তার জামিনের ব্যবস্থা করা হলে তিনি আবার প্রতারণার আশ্রয় নেন। তিনি জামিনে মুক্তি পেয়ে প্রতারণা মামলার বাদী ও কর্মীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। সর্বশেষ দায়ের করা মামলায় গোলাম রহমান জামিনের আবেদন করলে আদালত নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান।