গ্রাহকের ২ কোটি টাকা নিয়ে উধাও সমবায় সমিতি

মো. শামীম কাদির, জয়পুরহাট: জয়পুরহাটের পাঁচবিবিতে মুনাফার লোভ দেখিয়ে গ্রাহকের সঞ্চয়, এফডিআর ও কিস্তির দুই কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। অফিসে এখন ঝুলছে তালা। টাকা ফেরত পেতে প্রতিদিন গ্রাহকরা ভিড় করছেন সেখানে। গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির ফাঁদে পরে নিঃস্ব হয়ে গেছেন কয়েক হাজার গ্রাহক ও তাদের পরিবার। এ বিষয়ে অভিযোগের পর তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।

পাঁচবিবি উপজেলা সমবায় অফিস ও সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সাত বছর আগে রেজিস্ট্রেশন নিয়ে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা সদরে স্থায়ী আমানত সংগ্রহসহ সঞ্চয় আদায় কার্যক্রম শুরু করে বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির পরিচালক চন্দ্রলাল বাবু। পাঁচবিবির প্রধান সড়কের তিন মাথায় দোতলা ভবনে অফিস নিয়ে কার্যক্রম শুরু করে সংস্থাটি।

শুরু থেকে অধিক লাভের প্রতিশ্রুতিতে সমিতিভুক্ত করে সঞ্চয় আদায় করে গ্রাহকদের। পরে স্থায়ী আমানত সংগ্রহে শতকরা ১৫ টাকা মুনাফার ঘোষণা দিলে লাখ লাখ টাকা স্থায়ী আমানত করেন স্বাবলম্বী গ্রাহকরা। কয়েক বছর আমানতের লাভের টাকা বাড়ি বাড়ি পৌঁছেও দেয়া হয়। এরপর ছয় মাস লাভের টাকা বন্ধ করে অফিসে তালা ঝুলিয়ে গত ১৪ নভেম্বর পাঁচবিবি থেকে উধাও হয়ে যান পরিচালক চন্দ্রলাল বাবু। তখন থেকে আমানত ও সঞ্চয়ের টাকা পাওয়ার আশায় বন্ধ অফিসের সামনে ভিড় করছেন সমিতির গ্রাহকরা।

পাঁচবিবির দানেজপুর গ্রামের নেপাল চন্দ্র বলেন, তার স্ত্রী শেফালী রানীর নামে ছয় লাখ টাকা তিনি গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি সমিতিতে জমা দেন। তার স্ত্রীর ডিএসএ (ফিক্সড ডিপোজিট) নং ৮৮১। বিনিময়ে সমিতি তাকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা মুনাফা দেয়। এরপর থেকে কোনো টাকা তিনি পাননি।

কাশপুর গ্রামের নাজিউল হক বলেন, বাবার পেনশনের ছয় লাখ এবং নিজের সঞ্চয়ের ৭৯ হাজার টাকা তিনি ওই সমিতিতে জমা দিয়েছেন। আর উত্তর দানেজপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর বাসন্তী কেরকেটা বলেন, দুই শতক জমি বিক্রি ও হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে তিনি ৪ লাখ টাকা আমানত রাখেন সমিতিতে। লাভের টাকা না নিয়ে তিনি নিজেসহ স্বামী ও ছেলেমেয়ের নামে আলাদা চারটি সঞ্চয়ও করেন। কিন্তু এখন সবকিছুই তার শেষ হয়ে গেল।

এ বিষয়ে পশ্চিম বালিঘাটা গ্রামের রোজি আক্তার বলেন, ‘তিন মাস আগে এক লাখ ২০ হাজার টাকা তিনি ওই সমিতিতে রেখে এক হাজার ৪০০ টাকা পেয়েছেন। পরে টাকা ফেরত নিতে গেলে সমিতির সম্পাদক চন্দ্রলাল তাকে যমুনা ব্যাংক পাঁচবিবি শাখার একটি চেক দেন। কিন্তু টাকা না থাকায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাকে চেক ফেরত দেয়।’

শুধু রোজি বা বাসন্তী নয়, সঞ্চয় ও আমানতের প্রায় দুই কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়ে যাওয়ার এমন অভিযোগ ওই সমিতির কয়েকশ সদস্যের।

পাঁচবিবি উপজেলা সমবায় কর্মকতা লুতফুল কবীর সিদ্দিকী বলেন, ‘সমিতির একজন মাঠকর্মীর মাধ্যমে অভিযোগ পেয়ে ঘটনার প্রাথমিক তদন্ত করা হয়েছে। অফিস বন্ধ থাকায় সমিতির গ্রাহক সংখ্যা এবং সঞ্চয় ও আমানতের টাকার পরিমাণ নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এ বিষয়ে বড় ধরনের তদন্তের মাধ্যমে সমিতির ধার-দেনা ও গ্রাহকের ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’ পাঁচবিবি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরমান হোসেন প্রতারিত সদস্যদের মামলা করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০