Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:46 pm

গ্রাহক প্রবৃদ্ধি কমলেও মুনাফা বেড়েছে গ্রামীণফোনের

পলাশ শরিফ: সময়ের সঙ্গে সেলফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর ব্যবসার ধরন বদলে যাচ্ছে। সেলফোনভিত্তিক তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর সেবা চালু হচ্ছে। কয়েকবছর ধরে সেলফোন অপারেটরগুলোর আয়-মুনাফার প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে ইন্টারনেট ডেটা। এ কারণে ডেটা আয় বাড়াতে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগও করছে কোম্পানিগুলো। শীর্ষস্থানীয় মোবাইল  ফোন অপারেটর গ্রামীণফোনও এ খাতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। ফলে উত্থান-পতনে গ্রাহক প্রবৃদ্ধি কমলেও ইন্টারনেট ডেটা আয়ের প্রবৃদ্ধির ওপর ভর করেই এগিয়ে যাচ্ছে কোম্পানিটি।

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গ্রামীণফোনের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দুই কোটি ৪৫ লাখে দাঁড়িয়েছে। এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে এ সংখ্যা এক কোটি ৫৭ লাখ ছিল। সেই হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫৬ দশমিক এক শতাংশ বেড়েছে। এ সময়ে গ্রামীণফোনের মোট ইন্টারনেট ডেটা ব্যবহার আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ১৬৭ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবহারকারী ও ডেটার ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে ইন্টারনেট ডেটা থেকে গ্রামীণফোনের আয় এর আগের আর্থিক বছরের তুলনায় প্রায় ৫৯০ কোটি টাকা বা ৬৯ দশমিক সাত শতাংশ বেড়ে সর্বশেষ এক হাজার ৪৪০ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এদিকে সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রায় দু’হাজার ১১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের বিপরীতে ইন্টারনেট ডেটা আয়ে ভর করে কোম্পানিটির আয় ৯ দশমিক ছয় শতাংশ, পরিচালন মুনাফা ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ এবং কর-পরবর্তী মুনাফা ও শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১৪ দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে।

এগিয়ে থাকার কারণ সম্পর্কে গ্রামীণফোনের এক্সটার্নাল কমিউনিকেশন্স বিভাগের প্রধান সৈয়দ তালাত কামাল শেয়ার বিজকে বলেন, ‘একটি বিস্তৃত ৩জি  নেটওয়ার্ক স্থাপনে ব্যাপক বিনিয়োগের ফলে গ্রামীণফোন গত বছর তার বাজার অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়া গ্রামীণফোন তার গ্রাহকদের জন্য বিভিন্ন ডিজিটাল সেবা চালু করেছে, যা বিপুল গ্রাহকপ্রিয়তা অর্জন করেছে। ওয়াওবক্স ও জিপি মিউজিক অ্যাপ গুগুল প্লে-স্টোরে বাংলাদেশের এ ও দুই নম্বর অবস্থানে আছে। অর্থাৎ এগুলো ফেসবুক বা হোয়াটস অ্যাপ থেকেও জনপ্রিয়। তাছাড়া সারা বছরজুড়েই ডেটার দাম কমানো হয়। গ্রাহকের প্রয়োজন অনুযায়ী ডেটা প্যাকেজ চালু করা হয়। গ্রামীণফোন তার গ্রাহকের ডিজিটাল জীবনে সমসাময়িক ছিল। পাশাপাশি শক্তিশালী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গ্রাহকদের আস্থা ধরে রেখে প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে আছে।’

গ্রামীণফোনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ডেটার মূল্য কমলেও সর্বশেষ আর্থিক বছরে এ খাত থেকে রাজস্ব আয় বেড়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ার কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। গ্রামীণফোন কার্যকর ডিজিটাল লাইফস্টাইল অ্যাপ চালুর মাধ্যম গ্রাহকদের জীবন সহজ করে তুলেছে। অবশ্য সময়ের সঙ্গে টিকে থাকতে দুনিয়াজুড়েই ডেটা সেবা প্রসার বাড়ছে, বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়। বিদায়ী আর্থিক বছরের সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে গ্রামীণফোন ডেটা ও ভয়েস উভয় ক্ষেত্রই গ্রাহকের প্রয়োজনে পাশে থাকতে চায়। এজন্য অব্যাহত বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন নতুন সেবা নিয়ে আসবে। নেটওয়ার্কে  ক্ষেত্রেও গ্রাহকদের সেরা অভিজ্ঞতা দিয়ে যেতে চাই। এভাবে গ্রামীণফোন প্রতিযোগিতামূলক বাজারে নেতৃত্ব বজায় রেখেছে, যা ভবিষ্যতেও রাখবে। নিত্যনতুন সেবা, নেটওয়ার্ক ও অবকাঠামো উন্নয়নসহ মূলধনি খাতে বড় আকারের বিনিয়োগের জের ধরে উত্থান-পতনের মধ্যেও গ্রামীণফোনের গ্রাহক প্রায় পাঁচ কোটি ৮০ লাখ গ্রাহক নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের টেলিকম খাতে শীর্ষে রয়েছে গ্রামীণফোন। বায়োমেট্রিক নিবন্ধনসহ বেশকিছু কারণে সেলফোন গ্রাহক প্রবৃদ্ধি কমলেও আয়-মুনাফার প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে পুঁজিবাজারের বৃহৎ মূলধনি টেলিকম খাতের শীর্ষ কোম্পানিটি। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছর শেষে কোম্পানিটির রাজস্ব আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ২১ লাখ টাকা। যা এর আগের আর্থিক বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় এক হাজার কোটি টাকা বা ৯ দশমিক ছয় শতাংশ বেশি।

এদিকে সর্বশেষ আর্থিক বছর শেষে গ্রামীণফোনের শেয়ার প্রতি আয় ১৬ টাকা ৬৮ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। যা আগের আর্থিক বছরের একই সময়ে ছিল ১৪ টাকা ৫৯ পয়সা। একইভাবে গ্রামীণফোনের শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ৮৬ পয়সা, যা এক বছরের ব্যবধানে প্রায় দুই টাকা ১৮ পয়সা বা ১৪ দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। এর জের ধরে কোম্পানিটির নগদ লভ্যাংশের হার আগের অর্থবছরের তুলনায় প্রায় শতাংশ বেড়ে ১৭৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর আগের (২০১৪-১৫) আর্থিক বছরে বিনিয়োগকারীদের ১৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিলো গ্রামীণফোন।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে তালিকাভুক্ত বহুজাতিক সেলফোন কোম্পানি গ্রামীণফোনের প্রায় ১৩৫ কোটি তিন লাখ শেয়ার পুঁজিবাজারে রয়েছে। এরমধ্যে ৯০ শতাংশ শেয়ারই উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি ১০ শতাংশ শেয়ার প্রাতিষ্ঠানিক, বিদেশি ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে। সর্বশেষ আর্থিক বছরে প্রায় দুই হাজার ২৫২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছে কোম্পানিটি। এর আগের আর্থিক বছরে (২০১৫-১৬) এক হাজার ৯৭০ কোটি ৬৮ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিলো টেলিযোগাযোগ খাতের শীর্ষ কোম্পানিটি। এর বিপরীতে বিনিয়োগকারীদের ১৪০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিলো। সর্বশেষ আর্থিক বছরের জন্য ১৭৫ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে গ্রামীণফোন। ব্যবসায়িক সক্ষমতা ও এগিয়ে থাকার কারণে তালিকাভুক্তির পর থেকে কোম্পানিটির শেয়ারের প্রতি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ছে।