Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 5:40 pm

গ্রাহক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় হঠাৎ পতন

নিজস্ব প্রতিবেদক: হঠাৎ কমে গেছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক সংখ্যা। এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ফোনে আর্থিক সেবার (এমএফএস) নিবন্ধিত ৬৩ লাখ ২০ হাজার গ্রাহক কমে গেছে। তাৎক্ষণিক শহর কিংবা গ্রামে টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং এখন সহজ ও জনপ্রিয় একটি সেবা। ফলে শুরু থেকে এ সেবায় বাড়ছে গ্রাহক সংখ্যা। কিন্তু ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের গ্রাহক কমে যাওয়ায় প্রভাব পড়েছে মোট সংখ্যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এমএফএসের এপ্রিলের হালনাগাদ পরিসংখ্যান বলছে, তাদের অনুমোদিত এমএফএস সেবা দিচ্ছে ১৫টি প্রতিষ্ঠান। এপ্রিল শেষে এসব প্রতিষ্ঠানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আওতায় নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা ৯ কোটি ৬৪ লাখ ৭৬ হাজার দাঁড়ায়। মার্চে যা ছিল ১০ কোটি ২৭ লাখ ৯৬ হাজার। এ হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে এমএফএস সেবায় নিবন্ধিত গ্রাহক কমেছে ৬৩ লাখ ২০ হাজার।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু এত সংখ্যক নিবন্ধিত গ্রাহক কমে যাওয়া এটি অস্বাভাবিক। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শিওরক্যাশের সেবা বন্ধ হওয়ার কারণে কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক কমেছে। এছাড়া ইউক্যাশ বন্ধ করে নতুন সেবা ‘উপায়’ চালু করেছে। ইউক্যাশের গ্রাহক উপায়ে স্থানান্তর করা হয়েছে কি না সে তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। এসব কারণে নিবন্ধিত গ্রাহক কমেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এমএফএস সেবার নাম ছিল ‘ইউক্যাশ’। তারা এটি বন্ধ করে ‘উপায়’ নামের নতুন সেবা চালু করেছে। ‘ইউক্যাশ’ থেকে ‘উপায়ে’ যে গ্রাহকগুলো স্থানান্তর হয়েছে, ওই ডেটা তারা যুক্ত করেনি। রূপালী ব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। তাই গ্রাহক কমেছে। এটি যুক্ত করলে আবার গ্রাহক বাড়বে বলে জানান তিনি।

এমএফএসের নিয়ম অনুযায়ী, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে মোবাইল ব্যাংকিং সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। সব শেষ তথ্য বলছে, এপ্রিলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক সংখ্যা কমলেও সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে। আলোচিত সময়ে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে ছয় দশমিক এক শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন কোটি ৬৭ লাখ ৪৯ হাজারে। এ সময় মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৬১ হাজার ৭৮০ তে।

মার্চের তুলনায় এপ্রিলে লেনদেনও বেড়েছে। এমএফএসে এপ্রিলে লেনদেন হয়েছে ৬৩ হাজার ৪৭৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। প্রতিদিন যার গড় প্রায় দুই হাজার ১১৬ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব হিসাবে ডাক বিভাগের মোবাইলে আর্থিক সেবা ‘নগদ’ এর তথ্য নেই।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতাদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স পাঠানোসহ নানা ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া ব্যাংক থেকে মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোন থেকে ব্যাংকেও লেনদেন করার সুবিধা পাচ্ছেন গ্রাহক।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এপিলে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ প্রায় ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ কোটি টাকা। ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৯ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। নানা প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ হয়েছে দুই হাজার ৪০৫ কোটি টাকা। সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৯৬২ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ হয়েছে দুই হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।