নিজস্ব প্রতিবেদক: রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হলে দেশের বায়ু দূষণের একক বৃহত্তম উৎস হবে এটি। পরিবেশ বিষয়ে বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় সংস্থা গ্রিনপিসের কয়লা ও বায়ু দূষণ বিশেষজ্ঞ লরি মাইলিভিরতা’র এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির অনুরোধে তিনি এ গবেষণা করেছেন।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ ডক্টরস হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। লরি স্কাইপের মাধ্যমে তার গবেষণার ফলাফল
তুলে ধরেন।
গবেষণায় দেখা যায়, কয়লাভিত্তিক এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের দূষণ ঢাকার পাশের জেলা নরসিংদী থেকে শুরু করে ভারতের বসিরহাট-কলকাতা পর্যন্ত ছড়াবে। এ দূষণের কবলে পড়ে বছরে ১৫০ জন মানুষের মৃত্যু হবে। বছরে ৬০০ শিশু কম ওজন নিয়ে জš§াবে।
লরি মাইলিভিরতা বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে অতি উচ্চমাত্রায় ‘স্নায়ুবিষ’ পারদ বের হবে। যা শিশুদের মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারদের দূষণের কারণে সুন্দরবনের চারপাশের ৭০ কিলোমিটার এলাকার মাছ খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে পড়বে। কেউ যদি ওই মাছ খায় তাহলে সে স্নায়ুজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হবে।
গবেষণায় আরও দেখা যায়, জীবদ্দশায় অর্থাৎ ৪০ বছরে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ১০ হাজার কেজি পারদ উদ্গিরণ হবে, যা বন্যায় প্লাবিত হয়ে সুন্দরবনসহ আশেপাশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে সুন্দরবনের চারপাশ এবং বঙ্গোপসাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণীদের জীবন বিপন্ন করবে। যা ওই ভবনের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকাকে বিপন্ন করে তুলবে।
বিশ্বজুড়ে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র সবচেয়ে ক্ষতিকারক হিসেবে প্রমাণিত হচ্ছে উল্লেখ করে গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক সুলতানা কামাল বলেন, শুধু রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নয়, আমরা দেশের কোথাও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হোক এটা চাই না। আমরা সরকারের কাছে নানা সময়ে এ ব্যাপারে বিজ্ঞান ভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত হাজির করেছি। কিন্তু তারা এসব কথা কানে নিচ্ছে না।
সুলতানা কামাল বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে যে ধরনের প্রযুক্তি কেনা হচ্ছে, তা খুবই পুরোনো। সরকারের তরফ থেকে অসত্য তথ্য দিয়ে রামপাল প্রকল্পের ন্যায্যতা প্রমাণের চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ গ্রিনপিসসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও দেশি সংস্থার গবেষণায় আমরা দেখতে পাচ্ছি এ প্রকল্পের কারণে সুন্দরবন তো বটেই, সারা দেশের মানুষের ক্ষতি হবে। কয়লার দূষণের কবলে পড়ে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজš§ একটি সমূহ ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
সুলতানা কামাল আরও বলেন, সরকার আমাদের ধমক-ধামক দিয়ে গায়ের জোরে রামপাল প্রকল্পের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানিকে ৫৯টি শর্ত দেওয়া হয়েছিল। তারা এগুলো মানছে না। সরকার আমাদের আবেগ নিয়ে ব্ল্যাকমেল করছে।