‘গ্রিন’ পোশাক কারখানা করনীতিতে নিরুৎসাহিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তৈরি পোশাকের উৎপাদক ও রফতানিকারকদের পণ্য রফতানির ওপর আয়কর বৃদ্ধি করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সাধারণ কারখানার রফতানি আয়ের ওপর ১২ শতাংশ আয়কর নির্ধারিত ছিল চলতি অর্থবছর পর্যন্ত। এবার সেটি বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। তবে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হলে তার ক্ষেত্রে আয়কর হবে সাড়ে ১২ শতাংশ। এছাড়া পরিবেশ বান্ধব সবুজ (গ্রিন) কারখানার করপোরেট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এ ধরনের কারখানা তালিকাভুক্ত হলে তাদের কর কমবে কি-না সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে প্রস্তাবিত নতুন করনীতিতে শিল্প খাতে সবুজ কারখানার উদ্যোক্তারা নিরুৎসাহিত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) করনীতি বিভাগ থেকে প্রকাশিত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাবিত আয়কর খাতের গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার-শীর্ষক নথিতে তৈরি পোশাক খাতের আয়করের এসব সংস্কারের তথ্য দেওয়া হয়েছে। এতে প্রবৃদ্ধি ও ব্যবসায় সহায়তা এবং ব্যবসা পরিচালনা সহজীকরণ সংক্রান্ত সংস্কার প্রস্তাবে বলা হয়, নিটওয়্যার ও ওভেন গার্মেন্ট রফাতনি হতে প্রাপ্ত আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করার প্রস্তাব করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পাবলিকলি ট্রেডেড কোম্পানি হলে তাদের করহার ১২ দশমিক পাঁচ শতাংশ হবে।
উল্লেখ্য, রফতানিমুখী তৈরি পোশাকের আয়ের ওপর চলতি অর্থবছরে ১২ শতাংশ আয়কর আরোপিত রয়েছে। সে হিসেবে সব ধরনের কারখানার ওপর আয়কর তিন শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির ক্ষেত্রেও আয়কর আধা শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে আগামী অর্থবছরে।
তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তারা জানান, সাধারণত মোট রফতানির এফওবি মূল্যের ওপরই শূন্য দশমিক সাত শতাংশ উৎসে আয়কর কেটে নেওয়া হয়। পরে মূল আয়ের রিটার্ন দাখিলের পর ওই কর সমন্বয় করা হয়। সব মিলিয়ে সাধারণ পোশাক কারখানার মালিকরা ১২ শতাংশ আয়কর দিয়ে আসছিলেন। এবার তা ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
এদিকে করনীতির সংস্কার প্রস্তাবের পরিবেশ সংক্রান্ত প্রস্তাবে বলা হয়, বিগত বছরের মতো এবারও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে বাজেটে। এ জন্য পোশাক খাতের যেসব কারখানা আন্তর্জাতিক মানের গ্রিন বিল্ডিং সনদপত্র (জিবিসি) অর্জন করেছে তাদের আয়কর ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ৬৭টি গ্রিন কারখানা রয়েছে। এছাড়া আরও দুই শতাধিক কারখানা গ্রিন সনদ পাওয়ার অপেক্ষায়।
উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে গ্রিন কারখানার ওপর আয়কর হচ্ছে ১০ শতাংশ। সে হিসেবে আগামী অর্থবছরের জন্য গ্রিন কারখানার ওপর আয়কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে, যদিও তা সাধারণ কারখানার চেয়ে কম রাখা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজেএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর মূল বক্তব্যে বলা হয়েছে পোশাক খাতের সুযোগ-সুবিধা অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে দেখতে পাচ্ছি আয়কর বাড়ানো হয়েছে। এটা বুঝতে পারছি না। এতেকরে গ্রিন কারখানা অনুৎসাহিত হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।’
এদিকে তৈরি পোশাক খাতের আয়কর নির্ধারণে প্রথমবারের মতো পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কারখানাকে কিছুটা সুবিধা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের সর্বোচ্চ আয়কর থেকেও প্রস্তাবিত বাজেটের তালিকাভুক্ত কোম্পানির আয়কর বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। তাছাড়া গ্রিন কারখানার প্রস্তাবিত আয়করের চেয়ে তালিকাভুক্ত কারখানার আয়কর বেশি প্রস্তাব করা হয়েছে। এর ফলে গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তারা পুঁজিবাজার তালিকাভুক্ত হতে আগ্রহ হারাবেন বলে মনে করা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০