শেয়ার বিজ ডেস্ক: গ্রিসের উত্তরাঞ্চলীয় শহর কাভালার কাছে যে ইউক্রেনীয় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে, তাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবির জন্য সার্বিয়া থেকে কেনা মর্টার শেল আসছিল বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
গতকাল রোববার আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ডিজিডিপি (ডাইরেক্টরেট জেনারেল অব ডিফেন্স পারচেজ) ক্রয় চুক্তির আওতায় কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সার্বিয়া থেকে আনা হচ্ছিল ওই সামরিক রসদ। সূত্র: বিডিনিউজ।
‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের জন্য ক্রয়কৃত প্রশিক্ষণ মর্টার শেল বহনকারী’ বিমানটি গ্রিসে বিধ্বস্ত হয়েছে বলে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘ওই চালানে কোনো অস্ত্র ছিল না এবং চালানটি বিমার আওতাভুক্ত।’
ওই উড়োজাহাজে সার্বিয়ার তৈরি সাড়ে ১১ মেট্রিক টন সামরিক রসদ ছিল বলে জানিয়ে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী নেবোসা স্টেফানোভিচ এর আগে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়’ এসব পণ্যের ক্রেতা। তিনি বলেন, মর্টার শেল ও ট্রেইনিং শেল ছিল ওই উড়োজাহাজে। রসদ নিয়ে সার্বিয়ার তৃতীয় বড় শহর নিস থেকে উড্ডয়ন করেছিল বিমানটি। উড়োজাহাজ সাড়ে ১১ টন রসদ বহন করছিল, যা আমাদের প্রতিরক্ষা কারখানায় উৎপাদিত। এগুলোর ক্রেতা ছিল বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রসদগুলো ছিল সার্বিয়ার কোম্পানি ভালিরের তৈরি করা। সার্বিয়ায় অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করে সেগুলো বিদেশে বিক্রি করার অনুমোদন রয়েছে বাণিজ্যিক ওই কোম্পানির।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এসআইপিআরআই) হিসাব বলছে, ২০০৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১৪টি দেশের কাছে ২৬৬ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে সার্বিয়া। এ সময়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমার সর্বোচ্চ ৫৬ মিলিয়ন ডলারের করে সমরাস্ত্র কিনেছে দেশটির কাছ থেকে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, আন্তনভ-১২ পরিবহন উড়োজাহাজটি সোমবার (আজ) দুপুর ১২টায় ঢাকায় অবতরণ করা কথা ছিল।
গত শনিবার সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা হয় উড়োজাহাজটি। ইঞ্জিনের সমস্যার কারণে পাইলট কাভালা বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন, কিন্তু তার আগে উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়। ড্রোন দিয়ে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, ঘটনাস্থলের চারপাশে উড়োজাহাজটির ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। উড়োজাহাজটিতে আটজন ক্রু ছিলেন। তারা সবাই ইউক্রেনের নাগরিক বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
গ্রিস কর্তৃপক্ষ পরিবহন উড়োজাহাজটির বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে না পারলেও ঘটনা তদন্তে দুর্যোগ মোকাবিলার বিশেষ ইউনিট ও সামরিক বিশেষজ্ঞদের ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছে। উড়োজাহাজটি যেখানে বিধ্বস্ত হয়েছে, তার আশেপাশের বিস্তীর্ণ এলাকা শনিবার রাতে নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে ফেলা হয়। স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরের দরজা ও জানালা বন্ধ রাখতে এবং দুর্ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলতে বলা হয়। গতকাল সকালে একজন ফায়ার ব্রিগেড কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেন, বিস্ফোরণস্থলের উত্তাপে ফায়ার ফাইটারদের ঠোট-মুখ জ্বলে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। ঘটনাস্থল থেকে সাদা ধোঁয়া উড়ছিল।
সার্বিয়ার সম্প্রচারমাধ্যম ইআরটি জানিয়েছে, ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পাইলট গ্রিসে জরুরি অবতরণের অনুমতি চাওয়ার পরপরই উড়োজাহাজটির সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ভূপাতিত হওয়ার আগেই উড়োজাহাজটি থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়াতে থাকে, যেখান থেকে পরে বিস্ফোরণ ঘটে।
বিমানটি সার্বিয়া থেকে জর্ডানের দিকে যাচ্ছিল বলে এর আগে খবর দিয়েছিল বিবিসি। তবে জর্ডানের সিভিল এভিয়েশন দপ্তর পরে জানায়, জর্ডানের কুইন আলিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে জ্বালানির নেয়ার জন্য নামার কথা ছিল বিমানটির। তবে জর্ডান এর শেষ গন্তব্য ছিল না।