চড়াইয়ে ওঠা। উতরাইয়ে নামা। পাহাড়ি রাস্তা সম্পর্কে এ আমাদের স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনা। মধ্যাকর্ষণের কারণে যে কোনো বস্তুকে ওপরের দিকে ছুড়ে দিলে সেটি নিচের দিকে ফিরে আসে। তবে গ্র্যাভিটি হিল বলে অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে এ মধ্যাকর্ষণ ঠিকভাবে কাজ করে না। এমন স্থানে উতরাই হলেও, সবকিছু ওপর দিকেই যায়।
আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের গুজরাট প্রদেশের আম্র্রেলি জেলায় একটি স্থানের দৃশ্য এটি। এখানের একটি গ্রাম তুলসিশ্যাম। এখানে রয়েছে গ্র্যাভিটি হিল বা অ্যান্টি গ্রাভিটি হিল। ম্যাগনেটিক হিল নামেও পরিচিত এসব স্থান। স্থানীয়দের মতে, এখানের পাহাড়ি পথ সোজা চলে গিয়েছে স্বর্গের দিকে। এ কারণে, উতরাই পথেও বল গড়িয়ে দিলে তা যায় ওপর দিকে।
জনশ্রুতি রয়েছে, এখানে তুল নামের এক দানবকে হত্যা করেন শ্রীকৃষ্ণ। সে থেকেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে তুলসিশ্যাম। হিন্দুদের আরেক দেবতা বিষ্ণুর একটি মন্দিরও রয়েছে এখানে। বলা হয়, মন্দিরের কালো পাথরের তুলসিশ্যাম মূর্তির বয়স প্রায় তিন হাজার বছর।
বিজ্ঞান বলছে, এখানে ভূ-প্রকৃতি এমনই যে, দেখার ভুলেই মনে হয় ঘটছে এমন আজব ব্যাপার। আশেপাশের বনাঞ্চল ও দূরের দিগন্তের সঙ্গে রাস্তার অবস্থানই মস্তিষ্কে বিভ্রম তৈরি করে। তখন মনে হয়, সবকিছু-ই উল্টো দিশায় চলেছে।
এমন ‘অ্যান্টি-গ্র্যাভিটি হিল’ রয়েছে ভারতের আরও কয়েকটি স্থানে। যেমন লাদাখের লেহ নামক স্থানেও রয়েছে। তবে সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে তুলনামূলক বেশি নামকরা স্পুক হিল। এর অবস্থান দেশটির ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ওয়েলস হ্রদ এলাকায়। পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্যের নিউ প্যারিস এলাকায় রয়েছে দুটি গ্র্যাভিটি হিল রাস্তা। ক্যালিফোর্নিয়া, ওয়াশিংটন, টেক্সাসসহ বেশ কয়েকটি অঙ্গরাজ্যে রয়েছে এমন রাস্তা। কানাডা ও মেক্সিকোতেও রয়েছে কয়েকটি গ্র্যাভিটি হিল। দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলে রয়েছে দুটি গ্র্যাভিটি হিল।
ইউরোপের কয়েকটি দেশে রয়েছে গ্রাভিটি হিল। জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য প্রভৃতি দেশে রয়েছে গ্রাভিটি রাস্তা বা হিল। এশিয়ার ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, চীন, ওমান প্রভৃতি দেশে রয়েছে গ্র্যাভিটি হিল। ওশেনিয়া অঞ্চলের অস্ট্রেলিয়ায় রয়েছে চারটি গ্রাভিটি হিল। এর দুটির অবস্থান নিউ সাউথ ওয়েলস অঙ্গরাজ্যে।
সৌদি আরবের ওয়াদি আল জ্বিন আমাদের দেশে বেশ পরিচিত একটি গ্র্যাভিটি হিল। মদিনা থেকে পশ্চিমে অবস্থিত এ পাহাড়টির ঢাল। এখানে গেলে একটি অদ্ভুত দৃষ্টিভ্রম হয়। দেখা যায়, গাড়ি ঢাল বেয়ে নিচে না নেমে উল্টো ওপরের দিকে যাচ্ছে।