প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:
ব্যাংক সুদের হার বাড়া-কমা হলে তার ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পরে পুঁজিবাজারে। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে কিছুটা সম্পর্ক আছে পুঁজিবাজারের সঙ্গে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব কারও কাছেই নেই। বিনিয়োগকারীরাই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে; তাই তারাই নির্ধারণ করবে বাজার কোনদিকে যাবে। এখন যদি নীতিমালা দিয়ে জোর করে বাজারের দিক পরিবর্তন করা হয় তাহলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি হবে না। কিছুদিন পরপর নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আসছে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন শেলটেক ব্রোকারেজের পরিচালক মো. মঈন উদ্দিন এবং বিএমএসএল ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের সিইও মো. রিয়াদ মতিন।
মো. মঈন উদ্দিন বলেন, ক্ষুদ্রঋণের ক্ষেত্রে যে নীতিমালা অনুসরণ করে ঋণ দেওয়া হয় তাতে দুর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা বলতে গেলে থাকে না। আর এই নীতিমালাকে আমরা সম্মান করি। সবাই যদি এই নিয়মগুলো অনুসরণ করি তাহলে দুর্নীতি হওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। কিন্তু এই নীতিমালা শুধু স্বল্প ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়। বড় ঋণগ্রহীতাদের ক্ষেত্রে হয় না। যদি হতো তাহলে মন্দ ঋণের ঝুড়ি এত বড় হলো কীভাবে? কথা হচ্ছে, নীতিমালা বাছাই করে এক সময় যদি নিজেই ওই নিয়ম ভঙ্গ করেন তাহলে তো এই মন্দ ঋণের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এই পুরো পদ্ধতিটিকে নিয়ন্ত্রণ করে তাই তারা জানে কোথায় অতিরিক্ত ঋণ দেওয়া হচ্ছে বা মন্দ ঋণ বাড়ছে। আর এই তথ্যগুলো নিয়মিত তাদের কাছে যাচ্ছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ওই জায়গাগুলোতে তারা যদি দৃঢ় ও শক্ত নিয়ন্ত্রণ করে তাহলে ব্যাংক খাতের বর্তমানে কেন এমন পরিস্থিতি হলো? তাছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক খাতগুলোর নিয়ন্ত্রণ করে। এখানে পুঁজিবাজার আলাদা একটি অংশ। তবে গত সাত-আট বছরে বিভিন্ন সময় নানা ইস্যুতে ব্যাংক খাত থেকে বড় ধরনের বিনিয়োগ পুঁজিবাজারে আসে। ফলে যখনই ব্যাংক খাতের ওপর কোনো নীতিমালা আসে, তখনই তার একটি প্রভাব পুঁজিবাজারের ওপর পড়ে। লক্ষ্য করলে দেখবেন, সুদের হার বাড়লে বা কমালে তার ইতিবাচক বা নেতিবাচক প্রভাব পরে পুঁজিবাজারে। যেহেতু বাংলাদেশ ব্যাংক মানি মার্কেটকে নিয়ন্ত্রণ করে সেহেতু প্রত্যক্ষভাবে না থাকলেও পরোক্ষভাবে কিছুটা সম্পর্ক আছে পুঁজিবাজারের সঙ্গে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার বাংলাদেশ ব্যাংককে দেওয়া হয়নি। তাছাড়া ক্যাপিটাল মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব কারও কাছেই নেই। বিনিয়োগকারীরাই এটিকে নিয়ন্ত্রণ করে, তাই তারাই নির্ধারণ করবে বাজার কোনদিকে যাবে। এখন যদি নীতিমালা দিয়ে জোর করে বাজারের দিক পরিবর্তন করা যায় তাহলে সেটি দীর্ঘমেয়াদি হবে না। কিছুদিন পরপর নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ আসছে না।
মো. রিয়াদ মতিন বলেন, সম্প্রতি এক মিটিংয়ে প্রথমবারের মতো বিএসইসির চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর একসঙ্গে বসেছিলেন। এর আগে কখনোই তারা একসঙ্গে কোনো সভায় আসেননি। সভায় একপর্যায়ে ডেপুটি গভর্নর বলেন, দেশের পুঁজিবাজারকে আমরা কখনোই নেতিবাচক চোখে দেখিনি এবং সব সময়ই চাই বাজার ভালো হোক। কথা হচ্ছে, সবাই যদি পুঁজিবাজারের ভালো চায় তাহলে বাজার কেন খারাপ হচ্ছে? সভায় ডিএসইর একজন সদস্য বলেন, বাজারের ওপর কী প্রভাব পড়বে বা পড়তে পারে তা চিন্তা না করে আপনারা একটি নিয়ম করেন এবং কিছুদিন পর তা আবার সংশোধন করেন। এতে দেখা যায়, সংশোধন করতে গিয়ে যে সময়টুকু ব্যয় হয় তাতে বাজারের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে যায় এবং সংশোধন হওয়ার পর বাজারের গতি নষ্ট হয়ে যায়।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম