ঘাটতি মেটাতে ১০.৭৫% দাম বাড়ানোর প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: আবাসিক গ্রাহকদের অনেক কম দামে বিদ্যুৎ বিক্রিতে বড় অঙ্কের লোকসান করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)। আর এ ঘাটতি মেটাতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম গড়ে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। এছাড়া ন্যূনতম বিল ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোরও আবেদন জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। গতকাল বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) গণশুনানিতে এ প্রস্তাব করা হয়।

যদিও আরইবির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিপক্ষে ভোক্তাদের সংগঠন ক্যাব। এছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনও শিল্প খাতে আরইবির বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা করে। তবে বিইআরসি কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি যাচাই-বাছাইশেষে সাত দশমিক ১৯ শতাংশ দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে।

প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে শুধু আবাসিক ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য আরইবির লোকসান হয় দুই হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। আর কৃষিতে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য লোকসান হয় ৩৫০ কোটি টাকা। তবে শিল্পে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ বিক্রির ফলে এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা মুনাফা হয়। এ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে আবাসিক ও কৃষিতে দেওয়া হয়। এর পরও এক হাজার ২০০ কোটি টাকা লোকসান রয়েছে। আর এ ঘাটতি পূরণে ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ বিল বাড়াতে হবে।

তবে আরইবির এ প্রস্তাবের প্রতিবাদ করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী খোকন। তিনি বলেন, শিল্প খাতে উচ্চ দামে বিদ্যুৎ বিক্রির কারণে এমনিতেই আরইবি মুনাফা করছে। তাই এ খাতে আর বিদ্যুতের বিলের বোঝা বাড়ানো উচিত নয়। আবাসিকের ঘাটতির দায় কেন শিল্প খাতকে বহন করতে হবে? এটি বাস্তবায়িত হলে শিল্প খাত ধ্বংসের মুখে গিয়ে পড়বে।

এদিকে আবাসিক ক্ষেত্রে বিদ্যুতের দাম সর্বনি¤œ এক দশমিক ৫৬ থেকে ১২ দশমিক ৪৩ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির প্রস্তাব করে আরইবি। এতে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের। এই ধাপে বর্তমানে ইউনিটপ্রতি ৫.৬৩ টাকা রয়েছে। প্রস্তাব অনুমোদিত হলে ইউনিটপ্রতি দাম পড়বে ৬.৩৩ টাকা। এছাড়া আরইবি আবাসিক ক্ষেত্রে ন্যূনতম বিল ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে। সার্ভিস চার্জও ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৫ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে আরইবির সারাদেশে দুই কোটি এক লাখ গ্রাহক রয়েছে। এর মধ্যে ৯০ শতাংশ গ্রাহকই আবাসিক।

এদিকে শুনানিতে ব্যয় বিশ্লেষণ করে কারিগরি কমিটি বলে, বিদ্যুতের বিদ্যমান বাল্ক মূল্য বহাল থাকলে আরইবির বিদ্যুৎ বিল ইউনিটপ্রতি ৪৪ পয়সা তথা সাত দশমিক ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করলেই চলবে। তবে বাল্ক হার বৃদ্ধি করা হলে গ্রাহক পর্যায়ে সমান পরিমাণে রেট বাড়াতে হবে। তা না হলে ক্রমাগত লোকসান গুনতে থাকবে আরইবি।

তবে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির বিরোধিতা করেন ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. শামসুল আলম। তিনি বলেন, বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা যাবে না। তবে আরইবিকে বাঁচাতে হবে। না হলে গ্রাম বাঁচবে না। এক্ষেত্রে আরইবির ঘাটতিটুকু সরকারকে ভর্তুকি আকারে দিতে হবে। এছাড়া আরইবির ঘাটতি মেটাতে লাইফ লাইন বিদ্যুৎ বিল তুলে দিতে হবে। এছাড়া আরইবির অধীনে থাকা ৭৭টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চাকরি রাষ্ট্রীয় খাতে আনতে হবে। এতে তাদের বেতন-ভাতা খাতে সরকারি স্কেল অনুসরণ করা হবে। ফলে এ খাতেও ইচ্ছামতো ব্যয় বাড়ানো যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০