শেখ আবু তালেব: একটানা চার সপ্তাহ ধরেই দর সংশোধন চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। যদিও এটিকে দর সংশোধন বলতে নারাজ বিনিয়োগকারীরা। এর মধ্যে তিন সপ্তাহ সবগুলো সূচকের পতন হয়েছে। সর্বশেষ সপ্তাহে সূচকগুলো ইতিবাচক হয়েছে। কিন্তু লেনদেন কমেছে পূর্বের সপ্তাহের চেয়ে।
গত ১১ নভেম্বর শেষ হওয়া সপ্তাহ পর্যন্ত মিশ্র প্রবণতায় লেনদেন শেষ করেছে দেশের পুঁজিবাজার। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাপ্তাহিক লেনদেন চিত্র বিশ্লেষণ করে পাওয়া গেছে এমন তথ্য।
গত সপ্তাহে নেতিবাচক প্রবণতার মধ্য দিয়ে লেনদেন শুরু করে পুঁজিবাজার। কিন্তু মধ্যবর্তী অবস্থানে এসে ঘুরে দাঁড়ায় কিছুটা। এতে তিন সূচকই ইতিবাচক হয়।
সূচকগুলো ইতিবাচক ধারায় ফিরলেও লেনদেন হওয়া অধিকাংশ শেয়ারের দর কমেছে। ডিএসইতে লেনদেন হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গত সপ্তাহ শেষে ৩৮৩টির মধ্যে ২০৮টিরই শেয়ারদরে পতন হয়। শুধু ১৪১টির শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। ফলে সামগ্রিক লেনদেন কমেছে আট দশমিক ২৭ শতাংশ।
সূচকের উত্থান ও পতন শেষে গত সপ্তাহ শেষে প্রধান সূচক সাত হাজারের নিচে চলে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহত দর সংশোধনের ফলে বিনিয়োগকারীরা সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করছেন। এতে লেনদেন কমে আসছে। কিন্তু এই সময়ে বাজার মূলধন বেড়েছে চার হাজার ৯১১ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, জাঙ্ক বা দুর্বল প্রতিষ্ঠানের শেয়ার নিয়েই বেশি কারসাজি হয়। বর্তমান বাজারের প্রবণতার দিকে তাকালেই তা সহজেই বুঝা যায়।
কিন্তু এসবের মাঝেও মৌলভিত্তির অধিকাংশ কোম্পানির শেয়ার ভালো অবস্থানে রয়েছে। এসব কোম্পানির শেয়ার লেনদেন ডিএসইকে বড় পতন থেকে রক্ষায় ভূমিকা রেখেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ওপর ভর করেই বাড়ছে বাজার মূলধন। এ কারণে ডিএসইর ব্লুচিপ তালিকায় থাকা কোম্পানিগুলোর বাজার মূলধনও আগের সপ্তাহের চেয়ে খানিকটা বেড়েছে।
আবার গত সপ্তাহে পুঁজিবাজারের ইতিবাচক ধারায় ফিরতে কিছুটা অবদান রাখে আইসিবি। ৫০০ কোটি টাকার ঋণ নেয় সোনালী ব্যাংক থেকে। এ অর্থের পুরোটাই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করবে আইসিবি। এমন খবরেও কিছুটা আশাব্যঞ্জক হয়ে উঠেন ব্যক্তি পর্যায়ের বিনিয়োগকারীরা। যদিও পুঁজিবাজারের জন্য এ অর্থ খুব একটা প্রভাব রাখে না। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বাজারকে ঘুরে দাঁড়াতে একটা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে হয়তো।
ডিএসইর তথ্য লেনদেন বিশ্লেষণে দেখা যায়, মন্দার এ বাজারেও গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল বস্ত্র, ওষুধ, রসায়ন খাতের শেয়ারের প্রতি। ফলে এসব খাতের শেয়ার ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন শেষ করে।
জানা গেছে, এ সময়ে গেইনার খাতগুলোর মধ্যে শীর্ষে ছিল আইটি, সিরামিক, সেবা, ট্রাভেল, ওষুধ, সিমেন্ট, টেলিকম ও প্রকৌশল খাত। অন্যদিকে লোকসান দেখা গেছে কাগজ ও মুদ্রণ, সাধারণ বিমা, ট্যানারি, বস্ত্র, পাট ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার।
ডিএসইর মোট লেনদেনে সর্বোচ্চ অবদান রাখা খাতগুলো হচ্ছেÑবস্ত্র, ওষুধ, ব্যাংক, প্রকৌশল, আইটি, জ্বালানি ও রসায়ন এবং খাদ্য খাত। লেনদেনে একক কোম্পানি হিসেবে সর্বোচ্চ অবদান রাখে বেক্সিমকো। মোট লেনদেনের ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা, এনআরবিসি ব্যাংক।
অন্যদিকে বাজার মূলধনের দিক দিয়ে গত সপ্তাহ শেষে শীর্ষে ছিল গ্রামীণফোন। এরপরই রয়েছে ওয়ালটন, ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোব্যাকো, রবি ও এস্কোয়্যার ফার্মা।
একক প্রতিষ্ঠান হিসেবে শেয়ারদর বৃদ্ধির শীর্ষে ছিল জেনেক্স ইনফোসিস, সাফকো স্পিনিংস মিলস, শাইনপুকুর সিরামিকস, বিকন ফার্মাসিউটিক্যালস ও এএফসি এগ্রো।
অন্যদিকে দর হারানোর তালিকার শীর্ষে ছিল ফার্মা এইডস, আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিং, আজিজ পাইপস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিক ও ডরিন পাওয়ার জেনারেশনস।