শেখ আবু তালেব: দর ও সূচকের পতনের দুই সপ্তাহ পর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। গত ২১ এপ্রিল সমাপ্ত সপ্তাহে সূচকের সঙ্গে বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট দর।
গত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে আগের চেয়ে শতভাগের বেশি। এর অন্যতম কারণ আগের সপ্তাহের চেয়ে গত সপ্তাহে লেনদেন দিবস এক দিন বেশি ছিল। এ সময় বিনিয়োগকারীরা বিবিধ, প্রকৌশল ও ওষুধ খাতে বেশি সক্রিয় ছিলেন।
বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেন ও সূচকে পতন হলেও পরের কার্যদিবস থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এরপর আর পেছন ফেরেনি সূচক। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সক্রিয়তায় শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে আগের চেয়ে বেশি। ফলে সপ্তাহ শেষে বেশিরভাগ শেয়ার ও ইউনিট দর বৃদ্ধি পেয়েছে।
ডিএসইর সাপ্তাহিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আগের চেয়ে ডিএসই প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৭৭ পয়েন্ট। ডিএসইএক্স সূচক সর্বশেষ দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৬৬২ পয়েন্টে।
অন্য দুই সূচকেও ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। আলোচিত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা সর্বোচ্চ মুনাফা দেখতে পেয়েছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে তিন দশমিক এক, সেবা খাতে তিন দশমিক এক ও বিবিধ খাতে দুই দশমিক সাত শতাংশ। এরপর রয়েছে টেলিকম খাতে দুই দশমিক ছয়, ব্যাংক খাতে এক দশমিক আট, জ্বালানি খাতে এক দশমিক পাঁচ ও ওষুধ খাতে এক দশমিক তিন শতাংশ।
অন্যদিকে আগের সপ্তাহের চেয়ে লোকসান দেখা গেছে কাগজ ও মুদ্রণ খাতে শূন্য দশমিক দুই, জীবন বিমা খাতে শূন্য দশমিক পাঁচ ও সাধারণ বিমায় এক দশমিক দুই ও পাট খাতে দুই শতাংশ।
আলোচিত সপ্তাহে লেনদেন বেড়েছে বিবিধ খাতের কোম্পানিগুলোয়। ডিএসইর গত সপ্তাহে লেনদেনে সর্বোচ্চ ২১ দশমিক সাত শতাংশ অবদান রেখেছে বিবিধ খাতটি। এরপর রয়েছে ওষুধ খাত ১০ দশমিক সাত, প্রকৌশল ৯ দশমিক পাঁচ ও বস্ত্র আট দশমিক ছয় শতাংশ।
একক কোম্পানি হিসেবে শেয়ারদর বৃদ্ধিতে শীর্ষে উঠে এসেছে জেএমআই হসপিটাল রিকুইজিট, বিএসসি, আইপিডিসি ও এনআরবিসি ব্যাংক। দর পতনে ছিল মেমিনি এশিয়া, তাকাফুল ইন্স্যুরেন্স, অরামিট ও ফারইস্ট ফাইন্যান্স।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থার একাধিক উদ্যোগে ফিরেছে সূচক। রমজানজুড়ে দেশের পুঁজিবাজারে লেনদেন প্রবণতা তুলনামূলক কম থাকে। শেষের দিকে বিক্রয় প্রবণতা তুলনামূলক বেশি দেখা যায়। নগদ অর্থের প্রয়োজনে এমনটি দেখা যায়। এবারও সেই প্রবণতা দেখা দেয় একটু আগেভাগে। কিন্তু পরবর্তীকালে নিয়ন্ত্রক সংস্থার হস্তক্ষেপে দর পতন রক্ষা পায়। কারণ হিসেবে দেশের শীর্ষ এক ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা মনে করছেন মূল্যস্ফীতির চাপকে। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের হাতে নগদ অর্থ কমে যাচ্ছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। এর প্রভাবে ব্যাংকেও কমেছে আমানতের হার।
এছাড়া বেসকরারি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়েছে। একদিকে আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়া ও অন্যদিকে বিনিয়োগ বৃদ্ধির চাপ দেখছেন ব্যাংকাররা। এজন্য আমানত টানতে মুদ্রাবাজারে সুদের হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এর প্রভাবও পড়তে শুরু করেছে দেশের পুঁজিবাজারে। তারল্য চাপ ঠেকাতে অবশ্য কিছু দৃশ্যমান উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ প্রতিষ্ঠানের পোর্টফলিওতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে বৈঠক করেছে বিএসইসি। এছাড়া ব্যাংক ও বিমা কোম্পানিকে বিনিয়োগের জন্য অনুরোধপত্র দিয়েছে। পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিকদের সক্রিয় করতে পেরেছে। এর ফলে ইতিবাচকভাবে শেষ হয়েছে বাজার।