নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রায় দেড় বছর পর ফ্লোর প্রাইস তুলে নেয়ার পর অস্বাভাবিক বিক্রির চাপে রোববার দেশের পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। তবে এক কার্যদিবস পরেই বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক বিক্রির চাপ সামলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাজারটি। গতকাল সোমবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। এতে ডিএসইতে সব কয়টি মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বাজারটিতে ছয় মাস পর আবার হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে।
ডিএসইতে দিনের লেনদেনে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত থাকে। এমনকি দফায় দফায় দাম বেড়ে ৮ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে।
এই প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব; ততটাই বেড়েছে। এমনকি লেনদেনের বেশিরভাগ সময় দিনের সর্বোচ্চ দামে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের বিপুল ক্রয় আদেশ এলেও বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে।
অবশ্য এমন ইতিবাচক বাজারেও অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটে পড়ে। এমনকি লেনদেনের পুরো সময়জুড়ে প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিট দিনের সর্বনিম্ন দামে বিপুল পরিমাণ বিক্রির আদেশ আসে। বিপরীতে শূন্য পড়ে থাকে ক্রয় আদেশের ঘর। দিনের লেনদেন শেষে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২টিতে।
অর্ধশতাধিক প্রতিষ্ঠান ক্রেতা সংকটের মধ্যে পড়লেও দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ২০৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমে ১৪৫টির। আর ৪০টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ১৪ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২৫৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে।
অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৩৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৪৭ পয়েন্টে অবস্থান করছে।
দাম বৃদ্ধির তালিকায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৯টির শেয়ার দাম একদিনে যতটা বাড়া সম্ভব, ততটাই বেড়েছে। এছাড়া ২ শতাংশের বেশি দাম বেড়েছে ১২৯টির। এর মধ্যে ৪১টির দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের ওপরে।
অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখানোর ফলে লেনদেনের গতিও বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪২ কোটি ২২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৫৮৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৪৫৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। লেনদেন শুধু আগের কার্যদিবসের তুলনায়ই বাড়েনি, গত বছরের ১৮ জুলাইয়ের পর সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে।
এই লেনদেন বাড়াতে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখেছে বিডি থাই অ্যালুমিনিয়ামের শেয়ার। দিনভর কোম্পানিটির ৩২ কোটি ৮৩ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেনের ৩০ কোটি ৩২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ২৭ কোটি ৫৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ছিলÑলাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, কর্ণফুলী ইন্স্যুরেন্স, দেশবন্ধু পলিমার, সি পার্ল বিচ রিসোর্ট, বিচ হ্যাচারি, সন্ধানী লাইফ ইন্স্যুরেন্স এবং বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
ডিএসইতে সব ইতিবাচক থাকলেও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সিএসইতে মূল্যসূচক কমেছে। অবশ্য সূচক কমলেও এই বাজারটিতেও লেনদেনের গতি বেড়েছে। একই সঙ্গে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। গতকাল সিএসই সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৯৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেনে অংশ নেয়া ২৬৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২৩টির দাম বাড়ে। বিপরীতে দাম কমে ১১৮টির এবং ২৬টির দাম অপরিবর্তিত ছিল। লেনদেন হয়েছে ২১ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা।